শনিবার, ০২:১৪ অপরাহ্ন, ০১ মার্চ ২০২৫, ১৬ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

রোজার আগেই দাম বাড়ল প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১ মার্চ, ২০২৫
  • ৭ বার পঠিত

কাল থেকে শুরু পবিত্র রমজান মাস। প্রতিবছর রোজার মৌসুমকে কেন্দ্র করে নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানোর প্রতিযোগিতা চলে। এবারও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। বরং রোজা শুরুর আগেই বেড়েছে এ সময়ের প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য লেবু, বেগুন, শসা ও মাল্টার দাম। বোতলজাত সয়াবিন নিয়েও চলছে কারসাজি। উত্তাপ বেড়েছে মুরগিসহ মাংসের বাজারেও। বাজার বিশ্লেষকরা বরাবরের মতোই বলছেন, বাজার মনিটরিংয়ের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এসব পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে স্বস্তির বিষয় হচ্ছে, এবার ছোলা, খেজুর, চিড়া, মুড়ি, পেঁয়াজসহ রমজানে চাহিদা বেড়ে যাওয়া অনেক পণ্যের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। কিছু কিছু পণ্যের দাম কমেছেও।

রোজা শুরুর ঠিক আগমুহূর্তে হঠাৎ করেই অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে লেবুর দাম। বাজারে এখন আলোচনার শীর্ষে রয়েছে পণ্যটি। গতকাল রাজধানীর বাজারে লেবুর হালি বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত, যা দেড় সপ্তাহ আগেও বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ৪০ টাকায়। মালিবাগ বাজারের একজন ক্রেতা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, এক লাফে লেবুর দাম এত বাড়ে কীভাবে? এর পেছনে কিন্তু আছে। বিষয়টি সরকারের খতিয়ে দেখা উচিত।

সাধারণত রোজার সময় ইফতার আয়োজনে শরবত তৈরিতে ব্যবহৃত লেবুর চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। মূলত এটাকেই পুঁজি করে সরবরাহকারীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। খুচরা বিক্রেতারাও বলছেন, এখন লেবুর মৌসুম না হলেও এতটা দাম বাড়ার কথা নয়।

রোজার সময় মাল্টার চাহিদাও বেড়ে যায়। পণ্যটির দাম কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে ২৮০ টাকায় ঠেকেছে। ইফতারের আয়োজনে ব্যবহৃত আরও দুটির পণ্য বেগুন ও শসার দামও বাড়তির দিকে রয়েছে। বেগুনের কেজিতে ১০ টাকা ও শসার কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়তি রয়েছে। বাজারে নতুন করে মাংসের দাম বেড়েছে। মাত্র এক দিনের ব্যবধানে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। ১৯৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া ব্রয়লার মুরগি গতকাল ২০৫ থেকে ২১০ টাকা এবং সোনালি মুরগি ৩১০ থেকে ৩২০ টাকা হয়েছে।

মুরগির খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে অনেকে রোজার প্রস্তুতির বাজার সেরে নিয়েছে।

রোজা আগমুহূর্তে ক্রেতারা বেশি পরিমাণে মুরগি কিনছেন। চাহিদা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। ফলে পাইকারি ও খুচরায় দাম বেড়েছে।

রমজান মাস ও ঈদের বাজারকে সামনে রেখে পুরনো সিন্ডিকেট চক্র আবারও তৎপর হচ্ছে। যার প্রভাব বাজারেও পড়ছে বলে মনে করেন প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার। তিনি বলেন, অযৌক্তিকভাবে মুরগির বাচ্চা ও ফিডের দাম বাড়ানো হচ্ছে। এ সিন্ডিকেট দৈনিক গ্রাহকের পকেট থেকে মুনাফার বাইরে ৯ কোটি হাতিয়ে নিচ্ছে। এর প্রভাব বাজারেও পড়বে। দাম আরও বাড়তে পারে।

এদিকে চড়া দাম হওয়া সত্ত্বে¡ও গতকাল গরু ও খাসির বাজারে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। এ সুযোগে দাম বাড়িয়েছেন বিক্রেতারা। গত সপ্তাহে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা বিক্রি হওয়া গরুর মাংস গতকাল বিক্রি হয়েছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। অপরদিকে খাসির মাংসের কেজিতে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে অনেক দোকানেই ১২শ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাছের বাজারেও রুই, তেলাপিয়া, ইলিশ, শিং, কই ও চিংড়িসহ বেশ কয়েক পদের মাছের দামও কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

এবার রোজার আগে সরকারের নানা উদ্যোগের কারণে বাজার অনেকটা স্থিতিশীল থাকলেও শেষ মুহূর্তে বেশ কিছু পণ্যের দাম হঠাৎ বাড়ছে। বাজার মনিটরিংয়ের দুর্বলতা থাকার কারণেই এমনটা হচ্ছে বলে মনে করেন ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন। তিনি বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রশাসনের বাজার মনিটরিংয়ে দুর্বলতা রয়েছে। ভোক্তা অধিকার তদারকি করলেও তাদের জনবল কম। এর সুযোগ নিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।

এদিকে রোজার পণ্য হিসেবে পরিচিত খেজুর, ছোলা, বেসনের মতো পণ্যগুলোর বাজারে এবার উল্টোচিত্র দেখা যাচ্ছে। সরকার খেজুর আমদানিতে শুল্ক-কর কমানোয় আমদানি বেড়েছে, দামও কমে এসেছে। রাজধানীর বাদামতলীর ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে খেজুরের দাম কেজিতে প্রকারভেদে ২০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত কম রয়েছে। সামনে আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে।

ছোলার দামও কমেছে। কেজিতে ১৫ টাকা কমে ছোলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১১৫ টাকা, যা মাসখানেক আগে ১২০ থেকে ১২৫ টাকা বিক্রি হয়। কমেছে চিনির দামও। এবার বুটের ও বেসনের দাম অনেকটা অপরিবর্তিত রয়েছে।

প্রসঙ্গত, এবার রমজানে অতিপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ বাড়াতে আমদানি বাড়ানোর দিকে নজর দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যও বলছে, চিনি, সয়াবিন তেল, ডাল, মটর, ছোলা, পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও খেজুরে আমদানিও এবার বেড়েছে।

এদিকে অন্যান্য বছর এমন সময় চিড়া, মুড়ি, গুড়ের মতো পণ্যের দাম হু হু করে বাড়লেও এবার দাম অনেকটাই অপরিবর্তিত রয়েছে। নাগালে রয়েছে পেঁয়াজ ও আলুর দামও। কিন্তু সয়াবিনের বাজারে এখনও নৈরাজ্য চলছে। তদারকি অভিযানেও বেরিয়ে আসছে কারসাজির তথ্য।

গত বৃহস্পতিবার কারওয়ানবাজারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে দেখা গেছে, অনেক দোকানে ভোজ্যতেল লুকিয়ে রেখে ক্রেতাকে তেল নেই বলা হচ্ছে। অথচ তল্লাশিতে ৫ লিটারের বোতলের ২০০টিরও অধিক কার্টুনের সন্ধান মিলেছে। কিছু খুচরা ব্যবসায়ী বোতলজাত সয়াবিন গোপনে বিক্রি করছে। কেউ কেউ বেশি দামে বিক্রি করছে। ৫ লিটারের বোতলে এমআরপি ৮১৮ টাকা লেখা থাকলেও বিক্রি করা হচ্ছে ৮৫০-৮৫২ টাকা।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com