বরিশালের গৌরনদী উপজেলার সুন্দরদী গ্রাম থেকে লোপা দাস (১৭) ও তার বান্ধবী স্নিগ্ধা সানজিদ (১৭) নামের দুই কলেজ ছাত্রীকে বৃহস্পতিবার দুপুরে জোর পূর্বক অপহরণ করে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ অভিযোগে রবিবার রাতে গৌরনদী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। অপহরণের ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, ওই গ্রামের শ্যামল চন্দ্র দাসের মেয়ে ও সরকারি গৌরনদী বিশ^বিদ্যালয় কলেজের এইচ,এস,সি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী লোপা দাস ও তার সহপাঠি বান্ধবী একই গ্রামের সোহেল মিয়ার মেয়ে স্নিগ্ধা সানজিদ মিলে গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার তাদের বাড়ি থেকে কলেজের উদ্দেশ্যে বের হয়। তারা উপজেলার সুন্দরদী গ্রামের টরকী বন্দর ভিক্টোরী মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠের পশ্চিম পাশে পাঁকা রাস্তার উপর পৌছলে শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানার মশুরা গ্রামের হৃদয় দাস (৩০), তার ছোটভাই উদয় দাস (২৫), তাদের বাবা গোবিন্দ দাস (৫০), মা বেবি দাস (৪৫) ও ঢাকা জেলার সাভার থানার দারোগা মার্কেট এলাকার তামিম ওরফে ফরহাদ (১৯)সহ অজ্ঞাতনামা ৩/৪জন মিলে একটি মাইক্রোবাস নিয়ে এসে ভিকটিম লোপা দাস ও তার সহপাঠি বান্ধবী স্নিগ্ধা সানজিদকে জোর পূর্বক ওই মাইক্রোবাসে তুলে অপহরন করে নিয়ে রাজধানী ঢাকার দিকে পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় অপহৃতা কলেজ ছাত্রী লোপা দাসের নানি বাসনা দাস বাদি হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে রবিবার দিবাগত রাতে গৌরনদী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার এজাহার বাদি আরো অভিযোগ করেন, ভিকটিম লোপা দাস ও তার বান্ধবী ¯িœগ্ধা সানজিদ একই কলেজের একই ক্লাসের ছাত্রী। তারা প্রতিনিয়ত কলেজে একসাথে আসা যাওয়া করত। মামলার ১নং আসামী হৃদয় দাস প্রায়ই সুন্দরদী গ্রামে তার ভগ্নিপতি পলাশ দাসের বাড়িতে আসা-যাওয়া করত। এ সুযোগে লোপা দাসকে দেখ তার ভালো লাগে। ফলে সে ভিকটীম লোপা দাসের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ার জন্য লোপাকে প্রস্তাব দেয়। ভীকটিম লোপা দাস এতে রাজি না হওয়ায় আসামী হৃদয় দাস তাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়। এতেও লোপা রাজি না হলে আসামী হৃদয় দাস তার বাবা গোবিন্দ দাস ও মা বেবি দাসকে দিয়ে লোপাকে তাদের ছেলের বৌ করার জন্য লোপার পরিবারের কাছে প্রস্তাব দেয়।
লোপা দাসের পরিবার এ বিয়ের প্রস্তাবেও রাজি না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয় হৃদয়ের পরিবারের সদস্যরা। ফলে তারা লোপা দাসকে অপহরন করে নিয়ে যাওয়ার জন্য সময় সুযোগ খুজতে থাকে। সুযোগ পেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে তারা অপহরনের ঘটনাটি ঘটায়। অপরদিকে একই সাথে অপহৃত হওয়া লোপা দাসের বান্ধবী স্নিগ্ধা সানজিদ (১৭)কে অপহরণ সম্পর্কে বিস্তারিত কোন বর্ননা নেই মামলার বাদির এজাহারে। এ ঘটনাটি অনেকটা রহস্যের জন্ম দিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্ধারা।
মামলা দায়ের ও আসামী গ্রেপ্তারের সত্যতা নিশ্চিত করে গৌরনদী মডেল থানার ওসি মো. ইউনুস মিয়া বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা থানার এসআই মো. জুয়েল হাওলাদারের নেতৃত্বে গৌরনদী মডেল থানার একদল পুলিশ নড়িয়া থানা পুলিশের সহয়তায় ওই রাতেই অভিযান চালিয়ে অপহরণ ঘটনার মূল নায়ক হৃদয় দাসের ছোটভাই ও মামলার ২নং আসামী উদয় দাস (২৫), মামলার ৩নং আসামী তার বাবা গোবিন্দ দাস (৫০) এবং মামলার ৪নং আসামী তার মা বেবি দাস (৪৫)কে গ্রেপ্তার করেছে। তবে মামলার ১ নং আসামী হৃদয় দাসকে গ্রেপ্তার ও ভিকটীমদেরকে এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। গ্রেপ্তারকৃতদেরকে সোমবার দুপুরে বরিশাল আদালতে সোপর্দ করা হলে আদালত তাদেরকে জেল হাজতে প্রেরণ করে।