পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জেরধরে মঙ্গলবার বিকেলে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার তারাকুপি গ্রামে স্বজনদের একটি পক্ষ অপর পক্ষের ওপর দুই দফা হামলা চালিয়েছে।প্রথম দফায় ওইদিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বাড়ির সামনে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে পাশে বসে এবং দ্বিতীয় দফায় একইদিন সন্ধ্যার পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বসে প্রতিপক্ষের ওপর হামলার এ ঘটনা দুটি ঘটানো হয়।
এতে নারীসহ অন্তত ৭ জন আহত হয়েছে। গুরুতর আহত ২ জনকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও আহতরা জানান, ওই গ্রামের আ. মজিদ বেপারী, ফয়জর বেপারী, নজরুল বেপারী, হারুন বেপারীরা সহোদর চার ভাই মিলে গত প্রায় ৩৫/৪০ বছর পূর্বে তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি ভাগ-বাটোয়ারা করে বসত ঘরসহ নানা স্থাপনা নির্মান করে করে ভোগ দখল করে আসছিলেন। মজিদ বেপারীর সহোদর ভাই মৃত ফয়জর বেপারীর সম্প্রতি মারা গেলে তার তিন ছেলে হানিফ বেপারী, সিরাজ বেপারী, হাসান বেপারী মিলে গত প্রায় ২ মাস পূর্বে বাপ-চাচাদের করা ভাগ-বাটোয়ারা মানতে আপত্তি জানায়। এ সময় তাদের পক্ষ নেয় তাদের ছোট চাচা ও মজিদ বেপারীর ছোটভাই হারুন বেপারী।
অপর দিকে, মজিদ বেপারীর পক্ষ নেয় তাদের সেঝ চাচা ও মজিদ বেপারীর সেঝভাই নজরুল বেপারী। এ নিয়ে গত ২মাসে আ. মজিদ বেপারী ও নজরুল বেপারীর পক্ষের সঙ্গে হারুন বেপারী ও মৃত ফয়জর বেপারীর পক্ষের লোকদের মধ্যে একাধিকবার গ্রাম্য সালিশ ও থানায় সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বাড়িটিতে ২টি আধাপাঁকা বসত ঘর, ৩টি টিনের বসত ঘর, ৩টি রান্না ঘর ও ১টি পাকা টয়লেট থাকার কারণে শালিশগন গত ৩৫/৪০ বছর পূর্বের করা বাড়ির ভাগ-বাটোয়ারায় দেয়া সিদ্ধান্তই বহাল রাখেন।
এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত মৃত ফয়জর বেপারীর ছেলেরা ও হারুন বেপারী ও তার ছেলেরা মিলে মজিদ বেপারী ও নজরুল বেপারীর পক্ষের লোজকনকে মারধরসহ হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল।
এর প্রেক্ষিতে নজরুল বেপারীর ছেলে নুর ইসলাম বেপারী সম্প্রতি তাদের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে বরিশাল এক্্িরকিউটিভ মেজিষ্ট্রেট আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১০৭/১১৪/১১৭ (গ) ধারার একটি মামলা করেন। আদালত থেকে মঙ্গলবার দুপুরে বিবাদী হারুন বেপারীর পক্ষের লোকদের বিরুদ্ধে একটি সমন আসে।
ওই সমন পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে হারুন বেপারীর পক্ষের ২৫/৩০ জন লোক মিলে মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তাঁরাকুপি গ্রামের আবুল বেপারীর বাড়ির সামনে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ওপর মজিদ বেপারী পক্ষের ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়।
এ সময় তাদের হামলায় এক নারীসহ মজিদ বেপারী ও তার পক্ষের ৫জন আহত হয়। তাদেরকে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে হারুন বেপারীর সমর্থকরা ওইদিন সন্ধ্যার পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে সেখানে ভর্তি হওয়া আহত মজিদ বেপারীসহ তার পক্ষের আহত ৫ জনকে পূনঃরায় বেধড়ক পেটায় ও মারধর করে। এ সময় তাদের রক্ষায় স্বজনরা এগিয়ে গেলে হামলাকারীরা সোনিয়া আক্তার (২২) ও লামিয়া বেগম (২২) নামের ২ নারীকে মারধর করে। লামিয়া তিন মাসের গর্ভবতী। হামলাকারীরা তাকে মারধরসহ তার পেটে লাথি মেরে আহত করে।
গুরুতর আহত মজিদ বেপারী (৭০) ও দ্বীন ইসলাম (৩০)কে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকী আহতদেরকে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন, সাহিদা বেগম (৬৫),নুর ইসলাম বেপারী (৩৫), রিফাত বেপারী (২০)।
আহত নুর ইসলাম অভিযোগ করেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে আমাদের ওপর হামলাকালে আমরা ফোনে থানা পুলিশকে ঘটনা জানাই। তারা এসে ঘটনা দেখেও তাদেরকে আটক বা গ্রেপ্তার করেনি।
প্রতিপক্ষ হারুন বেপারীর ছেলে রিপন বেপারী বলেন, পূর্ব পুরুষের ভাগ বাটোয়ারা আমরা মানিনা। নতুন করে বাড়ি ভাগ করতে হবে। আমরা হামলা করিনি, বাড়ি ভাগ করা নিয়ে বিরোধে কারনে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে।
গৌরনদী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ইউনুস মিয়া জানান, খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।