সোমবার, ১১:৫৮ অপরাহ্ন, ১৮ অগাস্ট ২০২৫, ৩রা ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।
শিরোনাম :
গৌরনদীতে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫ উদ্বোধন গৃহযুদ্ধের মাঝেই মিয়ানমারে নির্বাচন, কী চাইছে জান্তা? ডাকসু নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল তৈরি করা হয়েছে: উমামা ফাতেমা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আশরাফুজ্জামানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলার আবেদন হত্যা মামলায় ৫ দিনের রিমান্ডে মাই টিভির চেয়ারম্যান সাথী এস এম মনিরুজ্জামান মনির বাউরগাতী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি নির্বাচিত সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের শুনানি শুরু ২৪ আগস্ট ১৮ বছর আগে বরখাস্ত হওয়া ৩২৮ কর্মকর্তাকে চাকরিতে পুনর্বহালের নির্দেশ নতুন বিতর্কের মুখে জুলাই শহীদদের ফ্ল্যাট প্রকল্প জুলাই হত্যাযজ্ঞ : শেখ হাসিনা-কামালের বিরুদ্ধে পঞ্চম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ আজ

টাকা ছাপিয়ে এক্সিমকে হাজার কোটি টাকা বিশেষ ধার

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ১১০ বার পঠিত

 

তারল্য সংকটে পড়া বেসরকারি এক্সিম ব্যাংককে এক হাজার কোটি টাকার বিশেষ ধার দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কোনো জামানত ছাড়াই ডিমান্ড প্রমিসরি (ডিপি) নোটের বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৯০ দিনের জন্য তাদের এই ঋণ দিয়েছে। টাকা ছাপিয়ে এই ধার দেওয়া হয়েছে। এতে মূল্যস্ফীতি আরও উসকে যেতে পারে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরই এক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে আশঙ্কা করা হয়েছে। যদিও নতুন গভর্নর হিসেবে যোগ দেওয়ার পর আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছিলেন, কোনো ব্যাংককে টাকা ছাপিয়ে আর তারল্য সুবিধা দেওয়া হবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এভাবে টাকা ছাপিয়ে ধার দিলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায় বলেও বিভিন্ন সময় (গভর্নর হওয়ার আগে) তিনি মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যতম প্রধান কাজ হলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা। এ লক্ষ্যে আগের ধারাবাহিকতায় চলতি মুদ্রানীতি আরও সংকোচনমুখী করা হয়। এ বিষয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি কাঠামো ও মুদ্রানীতি কমিটির চতুর্থ সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়, মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত বর্তমান মুদ্রানীতির কঠোর অবস্থান বজায় রাখা উচিত। এ জন্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য দক্ষ তারল্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিমাণগত কড়াকড়ি ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।

নতুন গভর্নর হিসেবে যোগ দিয়ে ড. আহসান এইচ মনসুরও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দেন। এ লক্ষ্যে বাজারে অর্থ সরবরাহ কমিয়ে আনার জন্য নীতি সুদহার বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এর অংশ হিসেবে গত ২৫ আগস্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি কমিটির পঞ্চম সভায় নীতি সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে বাড়িয়ে ৯ শতাংশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি (এসএলএফ) বাড়িয়ে সাড়ে ১০ শতাংশ করা হয়। তবে মূল্যস্ফীতির লাগাম টানার এই কঠোর অবস্থানের মধ্যেই কেন্দ্রীয ব্যাংক থেকে এক্সিম ব্যাংককের তারল্য সংকট কাটাতে ১ হাজার কোটি টাকার বিশেষ ধার দেওয়া হয়েছে।

এই বিশেষ ধার দেওয়ার আগে বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে বলা হয়, এক্সিম ব্যাংককে এক হাজার কোটি টাকার তারল্য সুবিধা দিলে বাজারে মুদ্রা সরবরাহ আরও বৃদ্ধি পাবে। আবার এই অর্থ বাজারে গেলে মানি মাল্টিপ্লেয়ার কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। এতে মূল্যস্ফীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। তা ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্ডার অনুযায়ী, এ ধরনের অনিরাপদ বিনিয়োগ এবং ঋণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক দিতে পারে না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্ষদ বা গভর্নর সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় চাইলে বিশেষ ক্ষমতাবলে ৯০ দিনের জন্য ধার দিতে পারেন। সেই ক্ষমতা বলেই পর্ষদকে অবহিত করে নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এক্সিম ব্যাংককে এই ধার দিয়েছেন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো। এক্সিম ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার দুই কার্যদিবসের মধ্যে এই ধার দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২-এর আর্টিকেল ১৭ (১) ধারা অনুযায়ী গত ৩ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এক্সিম ব্যাংকে এক হাজার কোটি টাকার তারল্য সুবিধা দেওয়া হয়। এ ঋণের সুদহার ধরা হয় স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি (এসএলএফ) রেট, যা বর্তমানে সাড়ে ১০ শতাংশে রয়েছে। এই সুদ হারেই আসলসহ ব্যাংকটি বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ পরিশোধ করতে হবে। তবে ব্যাংকটিকে মুনাফাসহ আসলের সমপরিমাণ ডিমান প্রমিসরি নোট প্রদান করতে হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, বেশকিছু গার্মেন্ট ব্যবসায়ী এক্সিম ব্যাংকের গ্রাহক। এসব ব্যবসায়ী যেসব পণ্য রপ্তানি করেছে, তার বিল এখনো পায়নি। পেতে আরও তিন মাস সময় লাগবে। ফলে তারা শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে পারছে না। তাই তারা এক্সিম ব্যাংকের কাছে সহায়তা চায়; কিন্তু ব্যাংকটির তারল্য সংকটে থাকার কারণে সমস্যা হচ্ছিল। বিষয়টি তুলে ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ১ হাজার কোটি টাকার তারল্য সুবিধা চেয়ে আবেদন করা হয়। এরপর সার্বিক দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ দিয়ে সহায়তা করে। তিনি আরও বলেন, মুদ্রানীতিতে টাকা ছাপিয়ে দিব না বলা যত সহজ, বাস্তবতা অনেক কঠিন। তার উদাহরণ এটি। কারণ এই ব্যাংকটিতে এই সুবিধা দেওয়া না হলে সংশ্লিষ্ট গার্মেন্টসের শ্রমিকরা বেতন-ভাতা না পেয়ে রাস্তায় নেমে পড়তে পারতেন। তখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হতো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই শেষে রিজার্ভ মানির বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হয় ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ, যা জুনে ছিল ৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ। অর্থাৎ জুলাই মাসে রিজার্ভ মানির সরবরাহ কমেছে। আগস্টেও সেভাবে রিজার্ভ মানি বাড়েনি। কারণ ব্যাংকগুলোকে টাকা ছাপিয়ে ধার দেওয়া বন্ধ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে সেপ্টেম্বরে রিজার্ভ মানি বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ এক্সিম ব্যাংকে এক হাজার কোটি টাকা ধার দেওয়া হয়েছে। গত জুনে রিজার্ভ মানি বাড়ার কারণ, এস আলমের ব্যাংকগুলোকে জুনভিত্তিক প্রতিবেদন ভালো দেখাতে অর্থ ধার দেওয়া হয়।

সূত্রগুলো জানায়, এতদিন পলাতক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকগুলোকে টাকা ছাপিয়ে তারল্য সুবিধা দিয়ে আসছিলেন। নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনুসর যোগ দিয়েই তারল্য সুবিধা বন্ধ করে দেন। এতে ব্যাংকগুলো বিপাকে পড়ে যায়। তবে ব্যাংকগুলোকে ঘুরে দাঁড়াতে পর্ষদ ভেঙে এস আলম নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com