বৃহস্পতিবার, ০৮:২৫ অপরাহ্ন, ২৮ অগাস্ট ২০২৫, ১৩ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।
শিরোনাম :
গৌরনদী-আগৈলঝাড়ায় কর্মরত সাংবাদিকদের পিআইবি’র প্রশিক্ষণ আজ শুরু বিএসসি ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের সমস্যা সমাধানে ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন পাকিস্তানি নারীর ‘ভাইরাল রিলস’র ফাঁদে সোহেল রানা! কেয়া পায়েলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল তৌহিদ আফ্রিদির ডিবি কার্যালয়ে লতিফ সিদ্দিকী নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা : ফেব্রুয়ারির প্রথম ভাগে ভোট ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন : ১০ দফা ইশতেহার ঘোষণা ছাত্রদল প্যানেলের ডিআরইউতে অবরুদ্ধ লতিফ সিদ্দিকীকে বের করে নিয়ে গেল পুলিশ প্লট দুর্নীতির মামলা : ‎‎হাসিনা-রেহানা-টিউলিপদের ‎বিরুদ্ধে আরও ৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি চলছে

গুমের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৫
  • ৬ বার পঠিত

বহুল আলোচিত গোপন আয়নাঘর (আটককেন্দ্র) স্থাপন ও ব্যবহারকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ ঘোষণা করে ‘গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সুরক্ষা অধ্যাদেশ-২০২৫’-এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে সরকার। খসড়া প্রস্তাবে কোনো সরকারি কর্মচারী বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কোনো সদস্য তাঁর নিজ পরিচয়ে কাউকে বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী বা সরকারি কোনো কর্তৃপক্ষের সম্মতিতে গুম করলে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড রাখা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে গুমে জড়িত অপরাধী ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষ সরকারি-বেসরকারি, সামরিক-বেসামরিক যেই হোক, শাস্তি থেকে রেহাই পাবেন না। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, জরুরি অবস্থা বা অন্য কোনো অজুহাতে কাউকে গুম করা যাবে না।

আর গুমের ঘটনা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী নয়, তদন্ত করবে মানবাধিকার কমিশন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র আরো জানায়, খসড়া প্রস্তাবটি অনুমোদনের  জন্য শিগগিরই উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করা হতে পারে। দেশে এরই মধ্যে যাঁরা গুম হয়েছেন বা হতে পারেন, এমন ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবারকে সুরক্ষা দিতেই নতুন এই অধ্যাদেশ করা হচ্ছে।

তবে বিষয়টি নিয়ে দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা নাম প্রকাশ করে কথা বলতে রাজি হননি।

খসড়ায় যা আছে : গুমের সংজ্ঞা প্রসঙ্গে খসড়া অধ্যাদেশের ধারা ৫-এ বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মচারী বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কোনো সদস্য তাঁর নিজ পরিচয়ে বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী বা সরকারি কোনো কর্তৃপক্ষের অনুমোদন, সমর্থন বা মৌন সম্মতিতে কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে গ্রেপ্তার, আটক, অপহরণ বা স্বাধীনতা হরণ করে কিংবা অন্য কোনো ব্যক্তির স্বাধীনতা হরণ করে ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার, আটক, অপহরণের বিষয়টি অস্বীকার করে, ওই ব্যক্তির অবস্থান, অবস্থা বা পরিণতি গোপন রাখে এবং এর ফলে যদি ওই ব্যক্তি আইনগত সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হন, তাহলে ওই ব্যক্তির এ ধরনের কাজ ‘গুম’ ও শাস্তিযোগ্য ফৌজদারি অপরাধ বলে গণ্য হবে।

শাস্তির বিষয়ে নতুন অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ এই অপরাধের জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। একই সঙ্গে দণ্ডের অতিরিক্ত অনধিক ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে।

যদি গুমের ফলে গুম হওয়া ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে বা তাঁর লাশ পাওয়া যায় অথবা গুমের ঘটনার সাত বছর পার হওয়ার পরও তাঁকে জীবিত বা মৃত উদ্ধার করা সম্ভব না হয়, তাহলে এ অপরাধের জন্য দায়ী ব্যক্তি সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড বা অন্য কোনো মেয়াদের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এই দণ্ডের অতিরিক্ত অনধিক এক কোটি টাকা জরিমানা করা হবে। এ ছাড়া যদি কোনো ব্যক্তি সজ্ঞানে গুমের সাক্ষ্য-প্রমাণ বিনষ্ট, গোপন, বিকৃত বা পরিবর্তন করেন, তাহলে অনধিক সাত বছরের জেল ও ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। কেউ যদি আয়নাঘর (গোপন আটককেন্দ্র) নির্মাণ ও ব্যবহার করেন তাঁকেও একই শাস্তি পেতে হবে।

দেশে এরই মধ্যে যেসব গুমের ঘটনা ঘটেছে তার তদন্ত ও বিচার এই অধ্যাদেশের আওতায় আনা হয়েছে।

এ বিষয়ে ধারা ৬-এ বলা হয়েছে, এই অধ্যাদেশের উদ্দেশ্য পূরণ করতে অপরাধ সংঘটনকারী কর্তৃক গুম হওয়া ব্যক্তির অবস্থান, অবস্থা ও পরিণতি প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত গুম একটি চলমান অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।

রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বা কোনো অজুহাতে কাউকে গুম করা যাবে না উল্লেখ করে  ধারা ৭-এ বলা হয়েছে, এই অপরাধ যুদ্ধাবস্থা, যুদ্ধের হুমকি, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বা যেকোনো জরুরি পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ বা নির্দেশে করা হয়েছে—এ ধরনের অজুহাত অগ্রহণযোগ্য হবে। গুমের অভিযোগ পুলিশ, মানবাধিকার কমিশমন বা প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে করা গেলেও গুমের ঘটনার তদন্ত করতে পারবে একমাত্র মানবাধিকার কমিশন। অর্থাৎ কোনো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী গুমের ঘটনার তদন্ত করতে পারবে না। গুমের বিচারের জন্য দেশের বিভাগীয় ও জেলা শহরে এক বা একাধিক বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হবে।

গুম হওয়া ব্যক্তির সম্পত্তির বিষয়ে ধারা ২৩-এ বলা হয়েছে, গুম হওয়া ব্যক্তির দায় পরিশোধ, তাঁর স্ত্রী বা তাঁর ওপর নির্ভরশীল পরিবারের সদস্যদের ভরণ-পোষণ বা অন্য কোনো যৌক্তিক ব্যয় নির্বাহের উদ্দেশ্যে গুম হওয়া ব্যক্তির স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ব্যবহার বা হস্তান্তর করতে গুম হওয়া ব্যক্তির বৈধ ওয়ারিশরা ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে পারবেন। আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে তাঁরা ওই সম্পত্তি ব্যবহার ও হস্তান্তর করতে পারবেন। তবে গুম হওয়ার কত দিন পর এই ধারা প্রয়োগ করা হবে সে বিষয়ে খসড়ায় সুস্পষ্ট কিছু বলা হয়নি।

গুমের শিকার ব্যক্তির চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণে বিশেষ তহবিল গঠনের বিষয়ে ধারা ২৪-এ বলা হয়েছে, গুমের শিকার ব্যক্তির চিকিৎসা, ভুক্তভোগীর পুনর্বাসন, ক্ষতিপূরণ ও আইনগত সহায়তা দিতে কমিশনের ‘গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সুরক্ষা তহবিল’ নামের একটি স্বতন্ত্র তহবিল থাকবে।

যে কারণে অধ্যাদেশ : মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত International Convention for the protection of All persons from Enforce Disappearance-এ বাংলাদেশ ২০২৪ সালের ২৯ আগস্ট অংশীদার হয়েছে। এই কনভেনশনের আলোকে এবং সংবিধানে সংরক্ষিত জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকার কার্যকর করার উদ্দেশ্যে গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫ প্রণয়ন করা সমীচীন। গত বছর ৬ আগস্ট দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়ায় গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫-এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। এ বিষয়ে গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনসহ অন্যান্য মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার মতামতের আলোকে এই খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে।

খসড়া অধ্যাদেশে গুমকে সংজ্ঞায়নসহ চলমান অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে মৃত্যুদণ্ডসহ কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। গোপন আয়নাঘর (আটককেন্দ্র) স্থাপন বা ব্যবহারকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ ঘোষণা করা হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে গুমসংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ, তদন্ত, অনুসন্ধানের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সুরক্ষাসংক্রান্ত বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন এবং অভিযোগ গঠনের ১২০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করার বাধ্যবাধকতা, ভুক্তভোগী, তথ্য প্রচারকারী ও সাক্ষীর অধিকার সুরক্ষা, ভুক্তভোগীর ক্ষতিপূরণ ও আইনগত সহায়তার নিশ্চয়তাসংবলিত বিধান যুক্ত করা হয়েছে। অধ্যাদেশটিতে গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সুরক্ষায় তহবিল গঠন এবং তথ্য ভাণ্ডার প্রতিষ্ঠার বিধানও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com