টানা বর্ষণ ও মুহুরী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফেনীর পরশুরামে বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। এতে ফুলগাজীর ৯৯টি ও পরশুরামের ৩২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ও পরীক্ষা স্থগিত করে সেখানে আশ্রয়কেন্দ্র চালু করেছে জেলা প্রশাসন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, বুধবার (৯ জুলাই) সকাল থেকে মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ১৩ দশমিক ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে বুধবার সকাল থেকে ফেনী-পরশুরাম ও উপজেলা সদরের সঙ্গে আঞ্চলিক সড়কগুলোয় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকার লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, ফেনীতে রেকর্ড বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ফেনীর পরশুরামের মুহুরী, সিলোনিয়া ও কহুয়া নদীর বেড়িবাঁধের ১০টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় ফসলি জমি, মাছের ঘের, রাস্তাঘাট, ঘরবাড়িসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
এ ছাড়া মঙ্গলবার দুপুরে পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নে সিলোনিয়া নদীর মেলাঘর, গদানগর ও মনিপুর গ্রামে তিনটি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে অন্তত ছয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। চিথলিয় ইউনিয়নের মুহুরী নদীর ধনীকুণ্ডা, জঙ্গলঘোনা, উত্তর শালধর ও অলকা গ্রামে বাঁধ ভেঙে ছয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। অন্যদিকে বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের চারিগ্রামে নদীর বাঁধ ভেঙে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর মুহুরী নদীর ফুলগাজীর সদর ইউনিয়নে দেড়পাড়া এলাকায় দুটি স্থানে ভাঙন দেখা দেয়।
আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, সোমবার (৬ জুলাই) দুপুর ১২টা থেকে আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ফেনীতে ৪০৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। ফেনী উজানে ভারতের ত্রিপুরা ও ফেনীতে এখনো ভারি বর্ষণ হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের গ্রেজ রিডার নেপাল সাহা বলেন, মঙ্গলবার বিকেল ৪টার পর থেকে মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। বুধবার সকাল থেকে বিপৎসীমার ওপরে ১৩ দশমিক ৩৩ মিটারে প্রবাহিত হচ্ছে।
ফেনীর জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলা প্রশাসন সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থা রয়েছে। দুর্যোগকবলিত এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পাঠদান ও পরীক্ষা স্থগিত করে সেখানকার ভবনকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। পর্যাপ্ত পরিমাণে শুকনো খাবার প্রস্তুত রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে জেলা প্রশাসন একটি টিম সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে।