চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকলেও আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কঠিন চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছে বিএনপি। নির্বাচন সামনে রেখে সঠিক প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু করেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। প্রত্যাশিত অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ভোটের আগে ৯০ দিনের চূড়ান্ত করণীয় নির্ধারণ করছেন তিনি। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতা-কর্মীদের জন্য টানা তিন মাসের নির্বাচনি কর্মসূচি দেবেন তিনি। বিশেষ করে নির্বাচনি প্রার্থী চূড়ান্তের ক্ষেত্রে কঠোর বৈতরণী পার হতে হবে মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের। চারিত্রিক বিষয়াদি থেকে শুরু করে আচার-আচরণ, আয়-উপার্জন এবং উপার্জিত সম্পদের বিবরণ দিতে হবে। সব মিলিয়ে সমন্বিত কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে বিএনপির সংসদ সদস্য প্রার্থীদের। আগ্রহী প্রার্থীদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানার পর একটি নিখুঁত দলীয় প্রার্থীতালিকা প্রস্তুত করাই এর মূল লক্ষ্য। দলের সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারণী সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। জানা গেছে, তিন মাসের নির্বাচনি কর্মসূচির মধ্যে দলীয় প্রার্থী থেকে শুরু করে পোলিং এজেন্ট, এমনকি ভোট গণনা ও ফলাফল পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচন ঘিরে সারা দেশে দল ও অঙ্গসংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের প্রতিই গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেবেন তারেক রহমান। তার আগে মনোনয়নপ্রত্যাশী ব্যক্তিদের দলের কার্যক্রমে পারফরম্যান্স কী, বিগত ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা কী ছিল, কী ধরনের ত্যাগ স্বীকার করেছেন? তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে কয়টি? কারাবরণ করেছেন কতবার। এসব তথ্য আগেই গ্রহণ করবেন তিনি। নির্বাচনের আগের তিন মাসের (৯০ দিন) মধ্যে শতভাগ বাস্তবায়ন করা হবে এই কর্মসূচি। নির্বাচনি এই কর্মসূচিতে উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হচ্ছে-
দলীয় প্রার্থীদের আচরণবিধি : এতে নির্বাচনের সময় সারা দেশে দলীয় প্রার্থীদের আচার-আচরণ কেমন হবে? ভোটার ও সাধারণ জনগণের সঙ্গে তারা কেমন আচার-ব্যবহার করবেন? ৩১ দফার বাইরে স্ব-স্ব এলাকায় তাঁরা কী কী বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেবেন? অন্যান্য প্রার্থী ও অন্যান্য দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কী ধরনের আচরণ করবেন, এসব বিষয়ে নির্দেশনা থাকবে।
প্রার্থীদের উপার্জন ও আয়-ব্যয়ের বিবরণ : প্রার্থী চূড়ান্তকরণের আগেই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে মনোনয়নপ্রত্যাশীর ব্যক্তিগত উপার্জনের খাত এবং সব আয়-ব্যয়ের হিসাবপত্র জমা দিতে হবে।
মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ : সারা দেশে নির্বাচনি বিষয়ে দল ও অঙ্গসংগঠনের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের নির্বাচনসংক্রান্ত বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। ভোট কেন্দ্রে যাতে দলীয় এবং নিরপেক্ষ ভোটারদের সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিত করা, জাল ভোট ও ফেক ভোটার প্রতিরোধ, শান্তিপূর্ণ অবস্থা বজায় রাখার লক্ষ্যে ভোট কেন্দ্রে সৃষ্ট যে কোনো ঝামেলা নিরসনে ভূমিকা রাখা, গৃহীত ভোট গণনা এবং ফলাফল ঘোষণার ক্ষেত্রে সব ধরনের প্রতারণা রোধ করা ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
পোলিং এজেন্ট : নির্বাচনের আগে থেকেই প্রস্তুত রাখা হবে ভোট কেন্দ্রে কারা দলীয় প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট হিসেবে থাকবেন। এবারের নির্বাচনে পোলিং এজেন্টরা অত্যন্ত শক্তিশালী ভূমিকা রাখবেন নির্বাচনের ভোট কেন্দ্রে। এ ক্ষেত্রে পোলিং এজেন্টের কেন্দ্রভিত্তিক তিনটি তালিকা প্রস্তুত রাখবে বিএনপি। কোনো কারণে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে কিংবা কেউ অনুপস্থিত থাকলে অথবা কোনো কারণে চলে গেলে তার পরিবর্তে বিকল্প তালিকা থেকে স্থলাভিষিক্ত করা হবে।
প্রচারণায় ভোটারদের কাছে কোন্ কোন্ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে : বিএনপির প্রস্তাবিত ৩১ দফার বাইরে দলীয় প্রার্থীরা আর কোন কোন বিষয়ের ওপর প্রচারণায় গুরুত্ব দেবেন, তা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। বিশেষ করে এলাকা ভেদে যেসব বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিলে জনমানুষের কল্যাণ হবে-তারা উপকৃত হবেন, সেগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।
ভোট গণনা ও ফলাফল : নির্বাচনের ভোট গণনা ও ফলাফল ঘোষণার ক্ষেত্রে যাতে কোনো রকমের অনিয়ম কিংবা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না হয়, সেজন্য সজাগ থাকবেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। আইন ও নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া মেনে রীতিমতো প্রহরায় থাকবেন তাঁরা। তার জন্য আগে থেকেই পরিকল্পিতভাবে নির্ধারণ করে রাখা হবে-ভোট কেন্দ্রের প্রাপ্ত ভোট গণনা ও ফলাফল ঘোষণার সময় কারা ভোট কেন্দ্রের ভিতরে এবং বাইরে কীভাবে অবস্থান করবেন। বিএনপি এবং তার হাইকমান্ড শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণ, ফলাফল ঘোষণা এবং অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অন্য প্রার্থীদের সঙ্গে সম্পর্ক ও আচরণ : দলের একজন প্রার্থী তাঁর পার্শ্ববর্তী এলাকার অপর দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ বা সম্পর্ক বজায় রাখবেন, সে বিষয়েও নির্দেশনা থাকবে। বিশেষ করে অন্য দলের প্রার্থী ও নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আচরণসংক্রান্ত নির্দেশনা নিজ দলীয় প্রার্থীদের জন্য প্রণীত আচরণ বিধিমালায় উল্লেখ করা হবে।
ডিজিটাল অপপ্রচার রোধ : দল, দলীয় প্রার্থী ও নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সামাজিক বিভিন্ন যোগাযোগমাধ্যমে অন্যান্য দল বা প্রতিপক্ষের অপপ্রচার রোধে সারা দেশে দক্ষ ডিজিটাল টিম গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। যাঁরা এসব অপপ্রচারের যৌক্তিক জবাব দেবেন।
বিএনপি এবং যুগপৎ শরিক দলের প্রার্থীদের ক্ষেত্রেও একই ধরনের নির্দেশনা প্রযোজ্য হবে : আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি এবং বিগত ফ্যাসিস্টবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে শরিক দলের যেসব প্রার্থী ধানের শীষ মার্কায় নির্বাচন করবেন-সেসব প্রার্থীদের ক্ষেত্রেও একই ধরনের নির্দেশনা প্রযোজ্য হবে।