শুক্রবার, ০১:৪০ পূর্বাহ্ন, ২০ জুন ২০২৫, ৬ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আসন পুনর্বিন্যাসে বসছে ইসি

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন, ২০২৫
  • ৫ বার পঠিত

আগামী জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্র করে আসন পুনর্বিন্যাসে বসতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজ বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বেলা ১১টায় এ সভায় ৭৫টি আসনের সীমানা নিয়ে বিশদ আলোচনা হবে। পাশাপাশি প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলগুলোর আচরণ বিধিমালা নিয়েও আলোচনা হবে এ বৈঠকে।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় সংসদে বিদ্যমান ৩০০টি আসনের মধ্যে ৭৫টি আসনে পুনর্বিন্যাস চেয়ে বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে আবেদন করেছেন। সর্বমোট আবেদন জমা পড়েছে ৬০৭টি। এসব আসনের পুনর্বিন্যাসে প্রশাসনিক অখণ্ডতা, ভৌগোলিক সুবিধা, স্ট্যাটাস, জনসংখ্যা, ভোট সংখ্যা এবং ঐতিহাসিক ভিত্তিও বিবেচনায় নেওয়া হবে। এ ছাড়া ২২৫টি আসনে কোনো আবেদন না পড়ায় ওইসব আসন নিয়ে কোনো আলোচনাই হবে না।

জানা গেছে, ১৯৯১ সালের পর ২০০৮ সালে সংসদীয় আসনের সীমানায় বড় পরিবর্তন হয়েছিল। কিন্তু ২০১১ সালে একটি আদমশুমারি হলেও গত জাতীয় নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সীমানা নির্ধারণে তেমন কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। যদিও এ সীমানা পরিবর্তন নিয়ে প্রথম থেকে ক্ষোভ জানিয়ে আসছিল বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল। বিএনপি নেতারা তখন থেকেই বলছিলেন, দলটিকে হারিয়ে দিতেই সূক্ষ্ম কারচুপির অংশ হিসেবে আসন সীমানা পরিবর্তন করা হয়েছিল। এরপর বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সংসদীয় আসনের সীমানায় বড় ধরনের পরিবর্তন করেনি তৎকালীন নির্বাচন কমিশনগুলো।

তবে জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনের পর জাতীয় সংসদের পরিবর্তিত এসব আসন নিয়ে তৎপর হয়ে ওঠেন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি ও রাজনীতিকরা। একে একে নির্বাচন কমিশনে আসন পুনর্বিন্যাসের আবেদন জমার হিড়িক পড়ে। দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর জাতীয় সংসদের আসন সীমানা পুনর্নির্ধারণ সংক্রান্ত আইন সম্প্রতি সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। ওই অধ্যাদেশ জারির পরে এ কাজে গতি ফিরেছে। কাজটি জোরশোরে এগিয়ে আনছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী নির্বাচনে ৩০০টি আসনই বহাল থাকবে এবং বিদ্যমান আইন অনুসরণ করে সীমানা পরিবর্তন করতে যাচ্ছে ইসি।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, আসন পুনর্বিন্যাসের আবেদনকারীদের বেশিরভাগই বিএনপির নেতাকর্মী। রয়েছেন দলটির বেশ কয়েকজন সাবেক সংসদ সদস্য ও স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিও। তাদের অন্তত ৯০ ভাগই ২০০১ সালের সীমানায় ফেরার দাবি জানিয়েছেন।

ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, জমা হওয়া যৌক্তিক আবেদন বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। সেজন্য এবার অনেক আসনের সীমানায় পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে শহর এলাকার আসন কমে যেতে পারে। বাড়তে পারে গ্রামের আসন।

জানা গেছে, সীমানা পরিবর্তন চেয়ে সবচেয়ে বেশি আবেদন জমা পড়েছে পিরোজপুর-২ আসনে। এই আসনে আবেদন পড়েছে অন্তত ১০৩টি। আর কুমিল্লা-১০ আসনে জমা হয়েছে অন্তত ৯২টি। ঢাকা-৭ আসনে আবেদন পড়েছে ৩৬টি এবং ঢাকা-১, ২ ও ৩ আসনে পড়েছে ২৩টি। মানিকগঞ্জে একটি আসন বাড়ানোর দাবিতে আবেদন পড়েছে ৩৮টি। আর চাঁদপুরে একটি আসন বাড়ানোর জন্য ৯টি আবেদন জমা হয়েছে। সব আবেদনই যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

ইসির কর্মকর্তারা জানান, পিরোজপুর-২ আসনের সীমানায় পরিবর্তন আনা হলে এর প্রভাবে পিরোজপুর-১ আসনেও পরিবর্তন আসবে। এই আসনে বেশ কয়েকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রধান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। যদিও ২০২৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন মহারাজের কাছে হেরে যান তিনি। এ ছাড়া পিরোজপুর-১ আসনের সংসদীয় এলাকার সীমানা পরিবর্তন চেয়ে একটি আবেদন জমা হয়েছে।

ঢাকা-১, ২ ও ৩ এই তিনটি আসনের সীমানায় পরিবর্তন চেয়ে আবেদন জমা পড়েছে ২৩টি। এর মধ্যে বেশিরভাগ আবেদনে দোহার উপজেলাকে ঢাকা-১ এবং নবাবগঞ্জ উপজেলাকে ঢাকা-২ আসনে পুনর্বহাল করার দাবি করা হয়েছে। ২০০১ সাল ও তার আগেও এই দুটি উপজেলা আলাদা সংসদীয় আসন ছিল। এই দাবির সপক্ষে যারা আবেদন করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন দোহার ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফজলুল হক, দোহার পৌরসভার সাবেক মেয়র বিএনপি নেতা আব্দুর রহিম মিয়া, বিএনপি নেতা মো. সালাউদ্দিন মোল্লা, জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক কেএম খালেকুজ্জামান ও দোহার-নবাবগঞ্জ আসন পুনরুদ্ধার কমিটির আহ্বায়ক মো. হুমায়ুন কবীর প্রমুখ।

ঢাকা-৭ আসনের সীমানায় পরিবর্তন চেয়ে ৩৬টি আবেদন জমা পড়েছে। এসব আবেদনকারীর বড় অংশ ঢাকা-২ আসন পুনরুদ্বার করে কামরাঙ্গীরচর থানাধীন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডকে ঢাকা-৭ লালবাগ এলাকার সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন করেছেন। বর্তমানে জিনজিরা, আগানগর, তেঘরিয়া, কেন্ডা ও শুভাঢ্যা ইউনিয়ন বাদে কেরানীগঞ্জ উপজেলা, সাভারের আমিনবাজার, তেঁতুলঝরা ও ভাকুর্তা ইউনিয়ন পরিষদ এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে ঢাকা-২ আসন।

এ ছাড়া ঢাকা-৪ আসনে ২টি, ঢাকা-১২ আসনে একটি, ঢাকা-১৬ আসনে একটি, ঢাকা-১৯ আসনে একটি এবং ঢাকা-২০ আসনে একটি করে আবেদন রয়েছে। ইসির কর্মকর্তারা জানান, ২০০৮ সালে ঢাকায় আসন সংখ্যা বাড়িয়ে ২০টি করা হয়। এ কারণে কয়েকটি জেলার আসন কমেছে। এবার ইসি শহরের আসন কমাতে চায়।

কুমিল্লা-১, ২, ৬, ৯, ১০ সংসদীয় আসনের সীমানায় পরিবর্তন চেয়ে মোট ১০৪টি আবেদন জমা হয়েছে। এসব আবেদনে যেসব পরিবর্তন চাওয়া হয়েছে, সেগুলো বিবেচনায় নেওয়া হলে এ জেলার অন্য কয়েকটি আসনের সীমানাতেও পরিবর্তন আসবে।

মানিকগঞ্জ, চাঁদপুর, মুন্সীগঞ্জ ও রাজবাড়ী জেলা থেকে অর্ধশতাধিক আবেদন করা হয়েছে নির্বাচন কমিশনে। এসব আবেদনে ওই চার জেলায় একটি করে আসন বাড়ানোর দাবি জানানো হয়েছে।

অন্য জেলাগুলোর মধ্যে বরিশাল-৪ সংসদীয় আসন থেকে হিজলা উপজেলাকে কর্তন করে বরিশাল-৩ আসনের সঙ্গে যুক্তের জন্য একটি আবেদন পড়েছে। এ ছাড়া রংপুর-১ আসনে একটি, গাইবান্ধা-৩ আসনে একটি, সিরাজগঞ্জ-১ আসনে একটি, সিরাজগঞ্জ-২ আসনে দুটি, সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে তিনটি ও সিরাজগঞ্জ-৬ আসনে ৫টি আবেদন রয়েছে। যশোর-২ আসনে একটি, সাতক্ষীরা-৩ আসনে একটি, সাতক্ষীরা-৪ আসনে একটি, বরগুনা-১ ও ২ আসনে ৮টি, ঝালকাঠি-২ আসনে একটি, নেত্রকোনা-৫ আসনে একটি, কিশোরগঞ্জ-২ আসনে একটি, গাজীপুর-১ আসনে একটি, গাজীপুর-৩ আসনে পাঁচটি, গাজীপুর-৫ আসনে চারটি আবেদন রয়েছে। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও চট্টগ্রাম জেলার কয়েকটি আসনের সীমানা পরিবর্তন চেয়ে আবেদন জমা পড়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার ও সংসদীয় আসনের সীমানা পুননির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার সাংবাদিকদের বলেন, যারা আবেদন করেছেন তাদের আবেদনের যৌক্তিক বিষয়গুলো বিবেচনা করা হচ্ছে। তাদের যুক্তি সঠিক হলে সেটা দেখব।

জানা গেছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রথম সভায় ২০০১ সালের আসন সীমানায় ফেরার ইঙ্গিত দেন। ওই সভায় ২০০১, ২০০৮, ২০১৩, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে কোন আসনে কী ধরনের পরিবর্তন হয়, তার তুলনামূলক বিবরণীও তৈরির নির্দেশনা দেন। এ ছাড়া কমিশন জনসংখ্যার পাশাপাশি ভোটার সংখ্যার সামঞ্জস্য রাখার কথা চিন্তা করে আইন সংশোধনী প্রস্তাব করেছিল। যদিও সরকার ওই সংক্রান্ত ধারায় সংশোধনী আনেনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com