মঙ্গলবার, ০১:৩০ পূর্বাহ্ন, ২৮ জানুয়ারী ২০২৫, ১৪ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

মাইক্রোপ্লাস্টিক কণায় স্বাস্থ্যঝুঁকি

ইফতেখার হোসাইন
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২৫
  • ৫ বার পঠিত

বিশুদ্ধ পানির অন্যতম উৎস হলো ভূগর্ভস্থ তথা মাটির নিচে জমে থাকা পানি। বিশ্বের ৯৭ শতাংশ বিশুদ্ধ পানি আহরিত হয় মাটির তলদেশ থেকে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে প্রাত্যহিক জীবনে খাওয়ার পানি, রান্না, ধোয়ামোছা ও গোসলের কাজে শতভাগ প্রয়োজন পড়ে এ পানির। উপকূলীয় গ্রামীণ অঞ্চলে আমরা নলকূপ চাপলেই যে পানির দেখা পাই তা ভূগর্ভস্থ পানি। কিন্তু আশঙ্কার বিষয়, ভূগর্ভস্থ পানিতে এবার প্রথমবারের মতো ক্ষতিকর মাইক্রোপ্লাষ্টিকের কণার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এই কণা দীর্ঘমেয়াদে হরমোনজনিত সমস্যা, ক্যান্সার এবং প্রজনন ক্ষমতা হ্রাসের কারণ হতে পারে। যা মানবদেহে স্বাস্থ্যঝুঁকির নতুন সংকেত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।

সম্প্রতি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য ও সামুদ্রিক বিজ্ঞান বিভাগের গবেষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বেলাল হোসেন এবং তাঁর গবেষণাদল ভূগর্ভস্থ পানিতে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করেন। কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, চাঁদপুর এবং পটুয়াখালী জেলার ১৮টি স্থান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে দেখা যায়, ভূগর্ভস্থ পানিতে মাইক্রোপ্লাস্টিকের মাত্রা ৪ থেকে ৭৫টি কণার মধ্যে পরিবর্তিত হয়েছে। ঐ ছয় উপকূলীয় জেলার ভূগর্ভস্থ পানিতে লিটারপ্রতি গড়ে ২৪.৬৩টি মাইক্রোপ্লাস্তিক কণা পাওয়া যায়, যা প্রাণঘাতী স্বাস্থ্যঝুঁকির তথ্য দেয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ মতে একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তি যদি প্রতিদিন সাড়ে চার লিটার পানি পান করেন, তবে বছরে প্রায় ৪০ হাজার মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা গ্রহণ করতে পারেন। সে বিবেচনায় যেখানে গ্রাম থেকে শহরের বাসিন্দারা পুরোপুরি ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীল, সেখানে কেউ একজন বছরে নিজের অজান্তে কত সংখ্যক মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা গ্রহণ করছেন? যদিও মানবদেহে মাইক্রোপ্লাস্টিকের নেতিবাচক প্রভাব পুরোপুরি জানা যায়নি, তবু এটি শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে বলে জানান গবেষকরা।

কারণ তারা মাইক্রোপ্লাস্টিকের সঙ্গে প্রায়ই কীটনাশক, ভারী ধাতু, পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন (পিএএইচএস), বিসফেনল এ (বিপিএ), থ্যালেট এবং ফ্লেম রিটারড্যান্ট—এমন ক্ষতিকর রাসায়নিক ও দূষণ পেয়েছেন। যেগুলো শরীরে প্রবেশ করে মানবদেহে টিস্যুক্ষতি, হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট, প্রজনন স্বাস্থ্যের ক্ষতি, ক্যান্সারের ঝুঁকি, ইমিউন সিস্টেমে দুর্বলতা তৈরি করতে পারে। নদী-নালার দেশ হলেও বাংলাদেশে পানির সমস্যা রয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে পানির অভাব তীব্র হয়। বলা হয়ে থাকে, যদি এ শতাব্দীতে তেল নিয়ে যুদ্ধ হয়ে থাকে, তাহলে আগামী শতকে সেই যুদ্ধ হবে পানি নিয়ে। ব্যাবিলনীয় রাজা হাম্বুরাবির শাসনকাল থেকে এখন পর্যন্ত পানি নিয়ে ছোট-বড় ৯২৫টি সংঘাতের তালিকা পাওয়া যায়। কাজেই পানি এবং সংঘাতের মধ্যে এক জটিল রাজনৈতিক অর্থনীতির সম্পর্ক রয়েছে।

সুইজারল্যান্ড থেকে প্রকাশিত জার্নাল ‘ফ্রন্টিয়ার্স ইন এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স’-এ প্রকাশিত গবেষণাপত্রে ড. মোহাম্মদ বেলাল হোসেন বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানিতে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণের অজানা সত্য উন্মোচন করেন। তার গবেষণায় ৯৭.৬% মাইক্রোপ্লাস্টিক ফাইবার আকারে পাওয়া যায়, যা কাপড় ও প্লাস্টিক পণ্যের ক্ষয় থেকে উৎপন্ন। প্রাপ্ত কণাসমূহের মধ্যে প্রধান উপাদান ছিল পলিথিন, যা প্লাস্টিক ব্যাগ, প্যাকেজিং এবং জালের মাধ্যমে আসে।

অধিকাংশ মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা ০.৫ মিমি বা তার চেয়ে ছোট আকারের, যা মানবদেহে সহজেই প্রবেশযোগ্য। সর্বাধিক কণা পাওয়া যায় কক্সবাজার ও চাঁদপুর জেলায়। ঐ অঞ্চলে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উৎস হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক পণ্য, কাপড় ধোয়ার ফাইবার এবং মাছ ধরার জালের টুকরা। এছাড়া পলিয়েস্টার, নাইলন, অ্যাক্রাইলিক এবং অন্যান্য সিনথেটিক উপাদানের পোশাক থেকে বেরুতে পারে মাইক্রোফাইবার। যখন এই ধরনের পোশাক ধোয়া হয়, তখন মাইক্রোফাইবার পানির মাধ্যমে বের হয়ে ভূগর্ভস্থে পৌঁছাতে পারে।

মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ নিয়ন্ত্রণে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। আমাদের দেশে যেখানে প্লাস্টিকের ব্যবহার বহুমাত্রিক সে বিবেচনায় প্লাস্তিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পুনর্ব্যবহার ছাড়া ভূগর্ভস্থ পানির এ দূষণ রোধ কঠিন।

সহকারী পরিচালক, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com