গত ৫ আগস্ট দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে বরিশাল সিটি করপোরেশনের তিনটি ভবন ও বিবির পুকুরের সৌন্দর্য বর্ধনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ সময় জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে এ্যানেক্স ভবন। এতে ১৮ কোটি ৭৫ লাখ ৩১ হাজার ১৩৫ টাকার ক্ষতির হিসেব প্রস্তুত করেছে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন।
বুধবার সকালে করপোরেশনের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে ক্ষয়ক্ষতির হিসেব স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবরে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ না আসলে এসব ভবনে কাজ করা সম্ভব হবেনা বলেও সূত্রটি নিশ্চিত করেছেন।
সূত্রমতে, গত ৫ আগস্ট দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে পাঁচ তলা বিশিষ্ট এ্যানেক্স ভবনের প্রত্যেক তলা পুড়ে গিয়ে ১২ কোটি ৩১ লাখ ৩৬ হাজার ৭৪৯ টাকা ক্ষতি হয়েছে। পাঁচতলা বিশিষ্ট অডিটোরিয়ামের মালামাল বিনষ্ট করায় ৪ কোটি ৪১ লাখ ২৭ হাজার ১৫০ টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়।
তিন তলা বিশিষ্ট নগর ভবনে হামলা ভাঙচুর করায় ৭ লাখ ১৮৬ টাকা ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি বিবির পুকুরের চারিপাশের বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদী ভাঙচুর ও বিনষ্ট করায় ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৭১০ টাকা ক্ষতি হয়।
সূত্রে আরও জানা গেছে, এ্যানেক্স ভবনে সংরক্ষিত জনস্বাস্থ্য বিভাগে সরকার প্রদত্ত ভ্যাকসিন ওষুধ, লজিস্টিক মালামাল, ভিটামিন এ ক্যাপসুল, আসবাবপত্র পুড়ে গিয়ে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা, সংরক্ষিত মশক নিধন কার্যক্রমে ব্যবহৃত ওষুধ ও মালামাল পুড়ে ৬৯ লাখ ২৮ হাজার ৩৪০ টাকা, ভবনের নিচ তলায় পরিছন্ন বিভাগের সংরক্ষিত মালামাল ও আসবাবপত্র পুড়ে ১৫ লাখ ৩২ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
সিটি করপোরেশনের বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী অহিদ মুরাদ জানান, বিবির পুকুরের ওয়াল ওয়াসার ৩০টি লাইট ভেঙে ফেলা হয়েছে এবং তার ছিড়ে ফেলেছে হামলাকারীরা।
এ ছাড়া তিন বাহুর তিনটি, পাঁচ বাহুর একটি, দুইটি গার্ডেন লাইট, ছয়টি ফোয়ারা লাইট ভেঙে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। ফলে গত ৫ আগস্ট থেকে অদ্যবর্ধি ভাঙাচুড়া অবস্থায়ই পরে রয়েছে নগরীর ঐতিহ্যবাহী বিবির পুকুর পাড়।
এতে করে সৌন্দর্য হারাচ্ছে পুকুরটি। সন্ধ্যা হলেই বিবির পুকুর পাড় অন্ধকারে তলিয়ে যায়। যেকারণে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে দর্শনার্থীদের। দর্শনার্থীরা বলেছেন, বিবির পুকুরের চারিপাশের লাইটিং ব্যবস্থা দ্রুত সংস্কার করা না হলে এখানে যেকোন সময় অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।
সূত্রমতে, গত ৫ আগস্ট বরিশালের একাধিক ভবনে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় সিটি করপোরেশনের এ্যানেক্স ভবন, অডিটোরিয়াম, নগর ভবনে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
এতে জন্মনিবন্ধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ নথি আগুনে পুড়ে যায়। এতে ব্যাহত হয় নাগরিক সেবা। থমকে যায় সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম। আরো কতদিনে এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে তার সঠিত কিছু জানা নেই সিটি কর্তৃপক্ষের।
এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইসরাইল হোসেন বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ আসলেই সংস্কার কাজ শুরু করা হবে।
ক্ষোভের আগুন ॥ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ক্ষোভের আগুনে পুড়েছে বরিশাল সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ভবন, ১ লাখেরও বেশি টিকা-ভ্যাকসিন আর টিকা রাখার বিশেষায়িত ফ্রিজ। অ্যানেক্স ভবনে থাকা জন্মনিবন্ধনের নথিসহ পুড়ে ছাই হয়েছে জরুরি সব নথিপত্র। এসব ঠিক করে অ্যানেক্স ভবন চালু করতে কমপক্ষে ছয় মাস সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন নগর ভবনের কর্মকর্তারা।
সূত্রমতে, নগরীর সদর রোডে সিটি করপোরেশনের অ্যানেক্স ভবনের নিচতলা দখল করে প্রায় ১৭ বছর ধরে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করায় ক্ষুব্ধ ছিলেন অনেকে।
এসব ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন। হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটর পর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় সদর রোডের অ্যানেক্স ভবনে।
ভাঙচুর করা হয় ফজলুল হক অ্যাভিনিউয়ে থাকা নগর ভবনের প্রধান কার্যালয় এবং শহীদ মিনারের পাশের বঙ্গবন্ধু অডিটরিয়াম।
ক্ষোভের তীব্রতা এতোটাই ছিল যে, টানা দুইদিন ধরে জ্বলেছে অ্যানেক্স ভবনের আগুন। বর্তমানে পোড়া কাঠামো ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই।
অ্যানেক্স ভবনের মাত্র কয়েকশ’ গজ দূরত্বের বঙ্গবন্ধু অডিটরিয়াম ভবনে হামলা ও ভাঙচুরের পর বিক্ষুব্ধ জনতা। এখান থেকে বিভিন্ন দামি মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।