আদালতের নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করে প্রতিবেশীর জমি-পুকুর দখল করে জমিতে থাকা পাঁকা দেয়াল ভেঙ্গে ফেলে জোর পূর্বক রাস্তা তৈরী করে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে বরিশালের গৌরনদী উপজেলা যুবদলের আহবায়ক মনির হাওলাদারের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার দক্ষিন রামসিদ্দি গ্রামে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভূক্তভোগী ওই পরিবার এবং যুবদল নেতার পক্ষের লোকজন রয়েছে মুখোমুখি অবস্থানে। যে কোন সময়ে তাদের মধ্যে ঘটতে পারে জীবনহানির মত বড় কোন অঘটন।
সরেজমিন ওই গ্রাম ঘুরে ভূক্তভোগী পরিবার, তাদের প্রতিপক্ষ ও এলাকাবাসীর সাথে কথাবলে জানাগেছে, ওই গ্রামের প্রয়াত পুলিশ সদস্য সফিজ উদ্দিন সরদার বিগত ২১মে ১৯৬৯ সালে প্রতিবেশী গনি খা’র কাছ থেকে ৩৩ শতক জমি কিনে বাড়ি করে বসবাস করে আসছিলেন। ওই জমির পূর্বদিকে আইয়ুব আলী মৃধা ও জব্বার হাওলাদারের বসতবাড়ি। তাদের তিনজনের বাড়ির সিমান্ত ধরে অর্থাৎ আইয়ুব আলী মৃধা ও জব্বার হাওলাদারের বসতবাড়ি পশ্চিশ সিমান্ত ও প্রয়াত পুলিশ সদস্য সফিজ উদ্দিন সরদারের বাড়ির পূর্ব সিমান্ত ধরে এলাকাবাসীর চলাচলের একটি হালট (ডাঙ্গা) ছিল। ওই হালট (ডাঙ্গা) ভরাট করে তিনপক্ষই বাড়ি তৈরী করেছেন। হালটটিকে রাস্তায় উন্নীত করতে হলে তিনপক্ষের জমি থেকে সমান অংশ নিয়ে রাস্তা করাটা ন্যায় সঙ্গত বলে দাবি ভূক্তভোগীদের। কিন্তু তাদের ওই দাবি মানছেন না গৌরনদী উপজেলা যুবদলের আহবায়ক মোঃ মনির হাওলাদার। ছাত্র জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হলে ওই যুবদল নেতা তার ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে প্রয়াত পুলিশ সদস্য সফিজ উদ্দিন সরদারের ওয়ারিশদের জমি ও পুকুর দখল করে নিয়ে জমির দেয়াল ভেঙ্গে ফেলেন। পুকুর সেচে মাটি তুলে জোর পূর্বক তাদের একপক্ষের জমির উপর দিয়ে এলাকার রাস্তা তৈরী করছেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রভাবশালী যুবদল নেতা মনির হাওলাদারের সাথে প্রয়াত পুলিশ সদস্য সফিজ উদ্দিন সরদারের পরিবারের সদস্যদের বিরোধের সুত্রপাত।
পুলিশ সদস্য সফিজ উদ্দিন সরদারের মেয়ে ভূক্তভোগী নাছিমা বেগম অভিযোগ করেন, বিগত বিএনপি সরকারের শাসন আমলে যুবদল নেতা মনির হাওলাদার আমাদের তিনপক্ষের জমির সিমান্তের ভরাটকৃত হালট (ডাঙ্গা)টিকে মাটির রাস্তায় উন্নীত করতে গিয়ে তিনপক্ষের জমির উপর দিয়ে সমান অংশ নিয়ে রাস্তা তৈরীর কথা বলেন। তখন আমরা তাদেরকে রাস্তা নেয়ার অনুমতি দেই। এরপর সেখান থেকে মাটির রাস্তা তৈরীকালে মনির হাওলাদার অপর দু’পক্ষের জমি না নিয়ে জোর পূর্বক একতরফা ভাবে আমাদের জমির উপর দিয়ে রাস্তা তৈরী করে নেয়। আমরা তখন এর প্রতিকার চেয়ে বিএনপি নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি, কিন্তু কোন সুবিচার পাইনি। পরবর্তিতে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে প্রভাবশালী যুবদল নেতা মনির হাওলাদার আওয়ামী লীগে থাকা তার আত্নীয় স্বজনের প্রভাব খাটিয়ে মাটির রাস্তাটিকে পাঁকা করার উদ্যোগ নেয়। তখনও আমরা দাবি জানাই তিন পক্ষের জমি থেকে সমান অংশ নিলে আমরা রাস্তার জন্য জমি দেব। আমাদের একার জমি থেকে পুরো রাস্তার জমি নিতে আমরা দেবনা। এক পর্যায়ে আমরা আমাদের জমির দক্ষিন-পূর্ব সিমান্তে একটি বাউন্ডারি দেয়াল তৈরী করি। গন অন্দোলনে শেখ হাসিনার আ্ওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে গত ১২আগষ্ট সন্ধ্যার দিকে মনির হাওলাদার ও তার সহযোগীরা অতর্কিতে হামলা চালিয়ে আমার জমির পাঁকা বাউন্ডারি দেয়াল ভেঙ্গে ফেলে। এরপর আমি গত ১৯ আগষ্ট আমি বরিশালের বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করি। বিজ্ঞ বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে সেখানে স্থিতি অবস্থা বজায় রাখার জন্য গৌরনদী মডেল থানার ওসির প্রতি আদেশ দেন। আদেশ পেয়ে থানার এসআই মোঃ ফারুক হোসেন গত ২০আগষ্ট ফোজদারী কার্যবিধির ১৪৪/১৪৫ ধারার বিধানমতে সেখানে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য উভয় পক্ষের প্রতি নোটিশ জারি করেন।
নাসিমা বেগম আরও অভিযোগ করেন, থানা পুলিশ কর্তৃক আদালতের ওই নোটিশ পাওয়ার পরও আদালতের নির্দেশ অমান্য করে মনির হাওলাদার ও তার সহযোগীরা মিলে জোর পূর্বক আমাদের বাড়ির পুকুরে দুটি পাওয়ার পাম্প মেশিন বসিয়ে পানি সেচে পুকুর শুকিয়ে ফেলে। তারা এখন ওই পুকুর থেকে মাটি তুলে আমাদের জমির উপর দিয়ে জোর পূর্বক রাস্তা তৈরী করছে। আমরা বাঁধা দিতে গেলে আমাদেরকে হত্যা করে হলেও তারা রাস্তা নেবে বলে হুমকি দেয়। আমরাও বলেছি জীবন দেব, তবু আমাদের একার জায়গার উপর দিয়ে রাস্তা নিতে দেবনা। তিন বাড়ির জমি থেকে সমান পরিমান যায়গা নিয়ে রাস্তা করলে আমরা রাস্তায় জমি দেব। এখন যে কোন সময় ওরা আমাদের খুন করতে পারে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আমরা আতঙ্কের মধ্যে আছি। এ ঘটনা পুলিশকে অবহিত করেছি তারা ঘটনাটি তেমন আমলে নিচ্ছেনা।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে গৌরনদী মডেল থানার ওসি মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, আদালতের আদেশ মোতাবেক আমরা নোটিশ দিয়ে সেখানে কাজ বন্ধ করে দিয়ে এসেছি। এখন কেউ আদালতের আদেশ অমান্য করলে আমরা তার বিরুদ্ধে আদালতে প্রসিকিউশন দেব।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত গৌরনদী উপজেলা যুবদলের আহবায়ক মোঃ মনির হাওলাদার বলেন ওখান থেকে একটি হালট (ডাঙ্গা) ছিল। আমি এলাকাবাসীর স্বার্থে সেই হালট (ডাঙ্গা) ভরাট করে রাস্তা তৈরী করেছিলাম। সেই রাস্তা নাসিমার পরিবারের লোকেরা বন্ধ করে দিয়ে সেখানে দেয়াল নির্মান করেছিল। দেয়াল দেয়ার আগে নানা ভাবে ওদের সাথে সমঝোতা করে রাস্তাটি পাঁকা করার চেষ্টা করেছি। ওরা আমাদের কোন কথাই শোনেনি। শেখ হাসিনার পতনের দিন বিক্ষুব্দ এলাকাবাসী ওই দেয়াল ভেঙ্গে ফেলেছে। আমি তখন কারাগরে ছিলাম। যে কোন মুল্যে অমরা এখানে রাস্তা নির্মান করবই। কোন বাঁধা আমাদের রাস্তা আটকাতে পারবে না।