ক্যানসার আক্রান্ত বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ভূমি উপমন্ত্রী এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু জামিন চেয়ে আদালতকে জানিয়েছেন, চিকিৎসক বলেছেন তিনি চার বছর বাঁচবেন। তার এক বছর চলে গেছে। তাই জামিন পেলে চিকিৎসা নেবেন। তবে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। আজ বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের (সিএমএম) বিচারক আলী হায়দার এ আদেশ দেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) গুলশান জোনাল টিমের উপপরিদর্শক (এসআই) রিপন মিয়া বাড্ডা থানার এ মামলায় দুলুকে কারাগারে আটক এবং আরও ১১ আসামির ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে হাজির করেন। দুপুর ৩টার দিকে এ সিএমএম আদালতে মামলাটির শুনানি হয়। রিমান্ড চাওয়া আসামিরা হলেন ভোলা যুবদলের সভাপতি জামাল উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মনির হোসেন, যুবদল নেতা মাকছুদুর রহমান, গোলাম মোস্তফা, আবির ইসলাম সাত্তার, তাজ মোহাম্মদ খান ওরফে মামুন, শিমুল মিয়া, সোহেল, মোস্তাক হোসেন মুন্না, আব্দুল মান্নান শেখ বাবু ও শাহীনূর রহমান। আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. বোরহান উদ্দিন, মহসিন মিয়া প্রমুখ। দুলুর জামিন শুনানিতে আইনজীবীরা বলেন, তিনি অসুস্থ, ক্যানসারের রোগী। কেমো (কেমোথেরাপি) নিতে বিদেশে যাবেন। তার অবস্থা খুব খারাপ। তাকে জামিন দিন। বেঁচে থাকলে তার বিচার হবে। অপর আসামিদের রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন আইনজীবীরা।
এরপর আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, দুলু সাহেব কিছু কথা বলবেন। আদালত কথা বলার সুযোগ দিলে রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, ‘আমি ক্যানসারের রোগী। অনেক অসুস্থ। এক বছর যাবত কেমো নিচ্ছি। এক মাস পর পর কেমো নিতে হয়। যে মেডিসিন নিতে হয়, তা আমেরিকা থেকে ভারত হয়ে আনতে হয়। গত ৩ অক্টোবর কেমো নেওয়ার ডেট ছিল। কেমো না আসায় গত তারিখে নিতে পারিনি। অনেক টাকা লাগে। টাকাও ম্যানেজ করতে পারিনি। এখন ম্যানেজ করেছি, কিন্তু এর মাঝে আমাকে গ্রেপ্তার করেছে।’ তিনি বলেন, ‘জন্ম-মৃত্যু আল্লাহর হাতে। ডাক্তার আমাকে বলেছে আমি চার বছর বাঁচব। এর মধ্যে এক বছর চলে গেছে। আপনার কাছে আমার আবেদন, শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে আমাকে জামিন দিন। পুলিশ দেখেছে আমি অসুস্থ। এ কারণে তারা রিমান্ডও চায়নি।’
তখন বিচারক জানতে চান, ক্যানসারের রোগী হয়ে সভা-সমাবেশে যোগ দেন কীভাবে? তখন দুলুর আইনজীবীরা বিষয়টি অন্য দিকে নিয়ে যান। তারা তার জামিন মঞ্জুরের আবেদন করেন। শুনানির পর বিচারক জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে দুলুকে কারাগারে এবং অপর ১১ আসামির প্রত্যেককে ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, গতকাল মঙ্গলবার বাড্ডা থানা এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনাকালে বাড্ডা থানার বৈঠাখালী ৩০ ফিট রাস্তার মাথায় গ্রিন টাওয়ারের নিচ তলায় কিছু সংখ্যক লোক নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড করার জন্য সমবেত হয়েছে মর্মে সংবাদ পায় পুলিশ। রাত ৭টা ৫৫ মিনিটে ওই স্থানে পৌঁছা মাত্র পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে এ আসামিরাসহ এজাহারনামীয় পলাতক ও অজ্ঞাত আসামিরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নিয়ে পুলিশের ওপর আক্রমণ করে।
আক্রমণের ফলে ডিবির এসআই মানিক কুমার শিকদার গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন, এএসআই আল মামুন পারভেজ ও কনস্টেবল মোতাহার হোসেনসহ সঙ্গীয় অন্যান্য অফিসারদের এলোপাতাড়িভাবে কিল-ঘুষি মেরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করেন। জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানান, ঘটনাস্থলে তারা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর আহ্বানে সমবেত হয়েছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরও স্বীকার করেন, নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড করে দেশে অরাজকতার মাধ্যমে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্টসহ সরকার পতনের লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শতাধিক লোক ঢাকায় সমবেত করেন। এরও আগে গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে দুলুকে গুলশানের বাসা থেকে তুলে নিয়ে মিন্টু রোডের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বলে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়।