ইসলাম হল সেই দ্বীন (ধর্ম ও জীবন বিধান) যা আল্লাহ কর্তৃক মানব জাতির জন্য প্রথম মানব হযরত আদম (আঃ)-এর সময় থেকে পৃথিবীর শেষ দিন পর্যন্ত নির্ধারিত। কুরআনের ভাষায়, “আল্লাহর কাছে একমাত্র (গ্রহণযোগ্য) দ্বীন হল ইসলাম” (কুরআন ৩ :১৯ )। অন্য জায়গায় আল্লাহ বলেন, “যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন চায়, তা (আল্লাহর কাছে) গ্রহনযোগ্য হবে না এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত হবে” (কুরআন ৩:৮৫)। এখন প্রশ্ন হলো- ইসলাম কি? ইসলাম মানে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করা এবং তাঁর নবীর দেখানো পথে তাঁর হুকুম অনযায়ী জীবন যাপন করা। এইভাবে, আল্লাহ মানবজাতিকে তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করার আহ্বান জানিয়েছেন কারণ তিনিই একমাত্র প্রভু (কোরআন ২২:৩৪)। আর সকল নবী (সা.) মানষুকে আল্লাহর আনগতু ও
তাদের পদাঙ্ক অনসরণ করার আহ্বান জানিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, হযরত নহূ (আঃ) তাঁর লোকদেরকে আল্লাহর উপাসনা করতে, তাঁর আনগতু করতে এবং তাঁর জীবন পদ্ধতি অনসরণ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন
(কোরআন ৭১ :২-৩)। যে ব্যক্তি এই ধরনের আহ্বানে সাড়া দেয় (সে একজন মসুলিম) এবং ইসলামকে জীবন বিধান হিসাবে গ্রহণ করে সে আল্লাহর বিচারে সর্বোত্তম (কুরআন ৪ :১২৫)। নবওুয়াতের ধারায় হযরত
মহা ু ম্মদ (সা.) সর্বশেষ। তিনি পৃথিবীর শেষ দিন পর্যন্ত সমগ্র বিশ্বের জন্য নবী। আল্লাহ নবী (সাঃ) কে তাঁর আনীত ইসলামী শরীয়ত (ইসলামী জীবন ব্যবস্থা) গ্রহণ করে তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করার জন্য লোকদের আহ্বান
করতে বলেন (কুরআন ২২:৩৪)। অন্য জায়গায় আল্লাহ নবীকে প্রচার করার নির্দেশ দেন, “হে মানবজাতি! আমি সত্যিই তোমাদের জন্য আল্লাহর রসূল…” (কুরআন ৭ :১৭৮ )। সুতরাং, হযরত মহা ু ম্মদ (সাঃ) এর ইসলামী
শরীয়ত মানবজাতির জন্য পূর্ণার্ণঙ্গ জীবন বিধান। নবী হিসাবে তার আবির্ভাবের পর, বিশ্বজগতের পালনকর্তা আল্লাহর কাছে অন্য কোন ধর্ম গ্রহণযোগ্য নয় (কোরআন ৩:১৯)।
উপরে যেমন বলা হয়েছে, ইসলাম হল পূর্ণার্ণঙ্গ জীবন বিধান। এর শিক্ষাগুলি জন্ম থেকে মতৃ ্যু পর্যন্ত জীবনের সমস্ত দিককে অন্তর্ভুক্ত করে। যাইহোক, এটি পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত, যথা: ইমান, সালাত (নামাজ), যাকাত,
সাওম (রোযা) এবং হজ্জ। প্রথম স্তম্ভের জন্য একজন ব্যক্তিকে কয়েকটি বিষয়ে বিশ্বাস করতে হবে। সেগুলি হল: আল্লাহর একত্ব (তাওহীদ), সকল নবীর নবওুয়াত (বিশেষ করে হযরত মহা ু ম্মদ (সা.) সর্বশেষ ও বিশ্বনবী),
ফেরেশতা, সকল আসমানী কিতাব, পুনরুত্থান ও বিচার দিবস, এবং তাকদীর। দ্বিতীয়ত, ঈমানের পর, একজন মমিু নকে পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি তার আনগতু ্য প্রদর্শন করতে হবে।
তৃতীয়ত, যাকাত প্রদান করবে, যদি সে এক বছরের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ (নিসাব) সম্পদের মালিক হয়। চতুর্থত, তাকে রমজান মাসের রোজা রাখতে হবে, যাকে আল্লাহর আনগুত্যের জন্য সংযমের প্রশিক্ষক বলা যেতে
পারে। অবশেষে, আর্থিকভাবে সক্ষম হলে, একজন মমিু নকে অবশ্যই হজ করতে হবে। এটি সারা বিশ্ব থেকে আগত অন্যান্য মসলমানদের সাথে দেখা করার এবং আল্লাহর একত্ব ঘোষণা করার একটি সুযোগ।
উপরের আলোচনা থেকে বোঝা যায়, ইমান (বিশ্বাস) হল ইসলামের প্রথম স্তম্ভ, যার মধ্যে বেশ কিছুউপাদান রয়েছে। এই উপাদানগুলির মধ্যে, সবচেয়ে মৌলিক হল আল্লাহর একত্ববাদ (তাওহীদ) এবং নবী মুহাম্মদ
(সা.)-এর রিসালাতে বিশ্বাস । দ্বীনের আনগত্য করার জন্য এ সাক্ষ্য দিতে হবে যে, ‘আল্লাহ ছাড়া উপাসনার যোগ্য কোনো উপাস্য নেই এবং (নবী) মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসূল।’ এর মাধ্যমে একজন ব্যক্তি মসলমান ু হয় এবং এর ফলে পরকালে জান্নাতে প্রবেশের যোগ্যতা অর্জন করে (মসুলিম
১/৬১)।
উপরের অনচ্ছেু দ থেকে আমরা শিখেছি যে ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের (কালিমা) দটিু উপাদান রয়েছে, যথা আল্লাহকে একমাত্র প্রভুএবং হযরত মহা ু ম্মদ (সাঃ)-কে একমাত্র শেষ ও সর্বজনীন নবী হিসাবে বিশ্বাস করা।
প্রথম অংশকে বলা হয় তাওহীদ এবং দ্বিতীয় অংশকে বলা হয় রিসালাত। এই দটিু উপাদানই অর্থ ও তাৎপর্যের দিক থেকে বিশাল। এ দটিু র পূর্ণ পরিধি না জানলে একজন মমিু নের ঈমান মজবতু হবে না এবং ঈমানের
সাক্ষ্যও পূর্ণ হবে না। সম্পূর্ণ বিশ্বাসের জন্য, আমাদের নিম্নলিখিতগুলি মনে রাখতে হবে:
প্রথমত, আল্লাহ চান মমিু নরা যেন তাদের ঈমানকে আল্লাহর সাথে অংশীদারিত্ব (শিরক) থেকে পাক রাখে এবং অন্যায় ও অবিচারের মাধ্যমে তা অপবিত্র না করে (কোরআন ৬:৮২); দ্বিতীয়ত, মমিু নদের অবশ্যই কপটতা থেকে মক্তু হতে হবে। অন্য কথায়, তাদের বিশ্বাসের সাক্ষ্য অবশ্যই হৃদয় থেকে হতে হবে (কোরআন ২:৮);
তৃতীয়ত, মমিু নরা যা বিশ্বাস করে তাতে সন্দেহ থাকবে না। অন্যথায়, তাদের জন্য আল্লাহর আদেশ পালন করা এবং তাদের জীবন ও সম্পদ দিয়ে তাঁর পথে চলা কঠিন হবে (কোরআন ৪৯:১৫ );
চতুর্থ, মমিু নদের অবশ্যই সালাত আদায় করতে হবে, যাকাত দিতে হবে এবং অন্যান্য নেক আমল করতে হবে (কুরআন ৯:১৮ ); পঞ্চম, আল্লাহ চান তাঁর বান্দারা যেন তাঁর প্রতি দঢ়ৃ বিশ্বাস রাখে এবং কখনও তাঁর সাহায্য থেকে নিরাশ না হয় (কোরআন ২৬:৬১-৬২); ষষ্ঠত, এটা বলাই যথেষ্ট নয় যে আমরা আল্লাহকে বিশ্বাস করি। বরং তাঁর রসূলের দেখানো পথে তাঁর হুকুম সম্পূর্ণভা র্ণ বে মেনে চলতে হবে (কুরআন ৪৯:১৪);
সপ্তম, আল্লাহ চান মমিু নরা শরিয়তের নির্দেশ অনুযা য়ী ভালো কাজ করুক এবং অন্যায় থেকে দরেূ থাকুক এবং একে অপরকে এ ব্যাপারে সাহায্য করুক (কুরআন ৯:৭১); অষ্টম, মমিু নদের সর্বদা আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা রাখা উচিত (কোরআন ৩:১৭৩); নবম, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনগুত্যের ক্ষেত্রে মমিু নদের যে কোনো কষ্ট
সহ্য করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে (কোরআন ১২:৩২-৩৩); সবশেষে, মমিু নদের অবশ্যই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে যেকোনো কিছুর চেয়ে বেশি ভালোবাসতে হবে (কুরআন ২:১৬৫)।
Dr Anowar Zahid, ACIArb
Professor of Int’l. Business and Islamic Law (on leave)
Faculty of Law, Eastern University
Road-6, Block-B, Ashulia Model Town
Savar, Dhaka-1345, Bangladesh.
Member, Bangladesh Int’l. Arbitration Centre (BIAC)
Member, International Council of Commercial Arbitration (ICCA)
Phone: +8802967903. Cell: +8801755882675