বাংলা ভাষা নিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় মেধাভিত্তিক টিভি রিয়্যালিটি শো ‘ইস্পাহানি মির্জাপুর বাংলাবিদ’-এর পঞ্চম বর্ষের মহোৎসবে প্রথম ও সেরা বাংলাবিদ নির্বাচিত হয়েছেন সিলেটের হোমল্যান্ড আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ শিক্ষার্থী সামিরা মুকিত চৌধুরী। দ্বিতীয় স্থানে ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অনুশ্রী বণিক এবং তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ শিক্ষার্থী মনামী জামান।
শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ইস্পাহানি মির্জাপুর বাংলাবিদ-২০২৩ এর চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডাক্তার দীপু মনি।
অনুষ্ঠান শেষে তিনি বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন।
সেরা বাংলাবিদ পেয়েছেন ১০ লাখ টাকার মেধাবৃত্তি, দ্বিতীয় সেরা বাংলাবিদ তিন লাখ ও তৃতীয় সেরা বাংলাদেশ পেয়েছেন ২ লাখ টাকার মেধাবৃত্তি। এ ছাড়াও প্রথম ১০ জন প্রতিযোগী প্রত্যেকে পেয়েছে ১টি ল্যাপটপসহ ব্যক্তিগত লাইব্রেরি করার জন্যে ৫০ হাজার টাকা সমমূল্যের বাংলা বই ও বইয়ের আলমারি।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, এই অনুষ্ঠানে এসে বুঝতে পেরেছি বাংলা ভাষার ওপর আমাদের দখল এখনো এসব শিক্ষার্থীদের মতো হয়নি।
বাড়িতে বইয়ের সখ্যতা থাকলে, বিদ্যালয়ে পাঠাগারের সুবিধা থাকলে এবং ইস্পাহানির মতো আমাদের সার্বিক সহযোগিতা নিশ্চিত করা গেলে আরো বেশি সুফল পাওয়া যাবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সুরে বলতে চাই, যখন এমন বাংলাবিদেরা আমাদের সঙ্গে আছে কেউ আমাদের দাবায়া রাখতে পারবে না।
বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ও দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ভেবেছিলাম আমাদের তরুণরা বাংলা ভাষা থেকে অনেকটাই সরে গিয়েছে। এই অনুষ্ঠানে এসে দেখেছি ইস্পাহানি ও চ্যানেল আই মিলে বাংলা ভাষার প্রসারে কাজ করছে।
কাজের সুবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখি শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই বাংলা প্রতিযোগিতা নিয়ে তুমুল আগ্রহ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে ইস্পাহানি টি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক ওমর হান্নান বলেন, ২০১৭ সালে এই প্রতিযোগিতা শুরু হলে তখন ২৫ হাজার শিক্ষার্থী তো অংশগ্রহণ করে। ২০১৮ সালে ২৭ হাজার, ২০১৯ সালে ৭৭ হাজার, ২০২২ সালে ১ লাখ ৪ হাজার এবং ২০২৩ সালে ১ লাখ ৫১ হাজার শিক্ষার্থী এতে অংশগ্রহণ করেছে। ভাষা নিয়ে রিয়েলিটি শো করা যায়, বিষয়টা নিয়ে প্রথমে অনেকেই দ্বিধা দ্বন্দ্বে ছিল। তবে শিক্ষার্থী অংশগ্রহণের পরিসংখ্যান বলছে এটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
করোনার কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে এই প্রতিযোগিতা বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীদের আগ্রহে ভাটা পড়েনি।
চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয় এখন সারা পৃথিবীর কটি বাঙালি টিভির পর্দায় তাকিয়ে থাকেন সেরা বাংলাবিদ দেখার জন্য। এসব বাংলাবিদদের জ্ঞান নিয়ে আমি নিজেই অভিভূত। বাংলা নিয়ে তারা এত জানেন যা আমাদের ধারণার বাইরে।
জমকালো আয়োজনের মাধ্যমে সমাপ্ত হলো ইস্পাহানি মির্জাপুর বাংলাবিদের পঞ্চম বর্ষ। নতুন প্রজন্মের কাছে শুদ্ধ বাংলা, বানান ও ব্যবহার ছড়িয়ে দিতে ইস্পাহানি মির্জাপুর আয়োজন করে এ বাংলা প্রতিযোগিতা। এ প্রতিযোগিতায় শুদ্ধ বাংলা ভাষার ব্যবহার, বানানচর্চা, শুদ্ধ উচ্চারণ ও ব্যাকরণের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন পর্যায় শেষে চূড়ান্ত প্রতিযোগীদের নির্ধারণ করা হয়।
মহোৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইস্পাহানি গ্রুপের চেয়ারম্যান সালমান ইস্পাহানি, পরিচালক জাহিদা ইস্পাহানি ও ইমাদ ইস্পাহানি। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ইস্পাহানি টি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক ওমর হান্নান এবং চ্যানেল আই ও ইস্পাহানির অন্যান্য কর্মকর্তারা।
অনুষ্ঠানে শোভাবর্ধন করতে অনেকদিন পরে আবারও মঞ্চে একসঙ্গে গান পরিবেশন করে সামিনা চৌধুরী এবং ফাহমিদা নবী। এছাড়াও বাংলাভাষার প্রাচীনকাল থেকে আধুনিককালের পথপরিক্রমার ওপর ‘বাংলা ও বাংলাদেশ শীর্ষক নৃত্য আলেখ্য পরিবেশনা করেন প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী প্রিয়াঙ্কা আনাম। এ অনুষ্ঠানে আফজাল হোসেনের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে কবিতা আবৃত্তি করে এবারের সেরা ১০ বাংলাবিদ। সবশেষে প্রয়াত সংগীতশিল্পী শাম্মী আখতারের বর্ণমালা নিয়ে গাওয়া গান ঝিলিকের কণ্ঠে পরিবেশিত হয়, আর তার সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহজাবিন।
এ প্রতিযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক এবং ভাষা বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত বিচারকমণ্ডলী পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। ইস্পাহানি মির্জাপুর বাংলাবিদ-এর বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. সৌমিত্র শেখর, দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ও কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ত্রপা মজুমদার। এছাড়াও অতিথি বিচারক হিসেবে ছিলেন বিশিষ্ট নাট্যকার আফজাল হোসেন।