স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর।।
টঙ্গীতে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সরকারি দলের বিভিন্ন নেতা, মন্ত্রী, এমপি ও প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে সরকারি খরচে বিদেশে লোক পাঠানো ও চাকরি দেওয়ার মিথ্যা প্রলোভনে মানুষের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়েছে এক প্রতারক চক্র। ভুক্তভোগীরা এ ঘটনায় টঙ্গী পশ্চিম থানায় অভিযোগ করেছেন। এ প্রতারক চক্রের মূল হোতা মনিরুজ্জামান আসাদ (৫০)।
তিনি নিজেকে সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা, কখনো বর্তমানে কেন্দ্রীয় যুবলীগ এবং ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর যুবলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদ বহনকারী নেতা হিসেবেও পরিচয় দিতেন। তার প্রাপ্ত জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তিনি ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানার দুবাশিয়া গ্রামের শামসুদ্দিনের ছেলে। ময়মনসিংহ শহরে ও গাজীপুরের ছায়াবীথি এলাকায় তিনি একাধিক বাড়ির মালিক বলেও দাবি করতেন। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে ময়মনসিংহ বিভাগের সকল জেলা, মহানগর, উপজেলা ও পৌরসভার প্রায় সকল জনপ্রতিনিধির নাম তার ঠুটস্থ।
এমনকি দেশের অধিকাংশ এলাকার এমপি, মেয়র, চেয়ারম্যান ও বিভিন্ন এলাকার অবস্থানগত বর্নণা দিয়ে অনেক নেতা ও প্রশাসনের পদস্থ কর্মকতাদের সাথে তার বন্ধুত্ব ও আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে বলেও দাবি করতেন। তার স্ত্রী তাসলিমা খাতুনকে দিয়ে সহজ সরল নারীদেরকে প্রতারণার ফঁাদে ফেলে বিদেশে পাচার করা হয় বলেও ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন। এ চক্রটি দেশের বিভিন্ন শহরাঞ্চলে কয়েক মাসের জন্য বাসা ভাড়া নিয়ে অত্যন্ত সুকৌশলে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে মানুষের লাখ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায়।
গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ী এলাকার ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী বোরহান উদ্দিন জানান, গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানার ঝুট দেওয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে অগ্রিম হিসেবে সাড়ে ৫ লাখ টাকা নেয় প্রতারক মনিরুজ্জামান আসাদ। গত রোববার (৩০ এপ্রিল) কারখানা থেকে মাল নামানোর কথা বলে খরচ বাবদ জরুরী ভিত্তিতে বিকাশে আরো দশ হাজার টাকা নেয়। ব্যবসায়ী বোরহান বলেন, ‘কারখানা থেকে ঝুট নামানোর সময় কেউ বাধা দিবে কিনা জানতে চাইলে কথিত যুবলীগ নেতা প্রতারক মনিরুজ্জামান আসাদ তাকে (ব্যবসায়ী বোরহানকে) পিস্তল দেখিয়ে বলেন, ‘কোনো মস্তান আমার সামনে দঁাড়াতে পারে না, আমার ঝুট কেউ আটকিয়ে রাখতে পারে না।’ প্রতারক মনিরুজ্জামান আসাদের কথা মত ব্যবসায়ী বোরহান উদ্দিন ভাড়ায় ২টি ট্রাক ও লেভার নিয়ে শ্রীপুরে কথিত ওই গার্মেন্ট কারখানায় যাওয়ার পথে সে (প্রতারক আসাদ) ফোন বন্ধ করে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। অবশেষে তাকে না পেয়ে টঙ্গী পশ্চিম থানার আউচপাড়া সফিউদ্দিন রোডের ভাড়া বাসায় যোগাযোগ করে জানতে পারেন, রোববার ভোরেই যাবতীয় জিনিসপত্র ও স্ত্রী সন্তান নিয়ে প্রতারক আসাদ বাসা ছেড়ে চলে গেছেন। অপর ভুক্তভোগী আল-আমিন জানান, প্রতারক আসাদ সরকারি খরচে রোমানিয়ায় লোক নেয়া হচ্ছে বলে তাকে জানায় এবং প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব প্রতারক আসাদের আত্মীয় বলে দাবি করে। সচিবের মাধ্যমে সরকারি খরচে মাত্র আড়াই লাখ টাকায় তাকে রোমানিয়ায় পাঠানোর কথা বলে গত ঈদের আগে অগ্রিম হিসেবে দুই কিস্তিতে তার কাছ থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা নেয়। ভাগ্যের চাকা ঘুরানোর আশায় এসব টাকা তিনি সুদে সংগ্রহ করে প্রতারক মনিরের হাতে তুলে দেন। আগামী ৯ মে তাকে রোমানিয়ার ভিসা দেওয়ার কথা ছিল। ইতিমধ্যে তাকে জরুরী ভিত্তিতে পাসপোর্টও করানো হয় এবং পাসপোর্টের ফটোকপিও নেয় প্রতারক আসাদ। ভুক্তভোগী অপর ব্যবসায়ী মনির হোসেন জানান, তার ছোট ভাইকে সরকারি চাকরি দেওয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা অগ্রিম নিয়েছে। টঙ্গী পশ্চিম থানার আউচপাড়া সফিউদ্দিন রোডের ২৬৯ নং বাড়ির দারোয়ান আব্দুস সামাদ জানান, তার ছেলেকে ইসলামী ব্যাংকে পিয়ন পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে প্রতারক আসাদ ২০ হাজার টাকা নিয়ে চম্পট দিয়েছে। আজ সোমবার তার ছেলের ইসলামি ব্যাংকে যোগদানের কথা ছিল। এ উদ্দেশ্যে তার পূর্বের চাকরিও ছেড়ে চলে এসেছে।
এদিকে এব্যাপারে টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি মো. শাহ আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ করেছেন। তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
###
মোঃ রেজাউল বারী বাবুল
স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর।
০২/০৫/২০২৩ ইং