গ্রেফতার আসামিদের ডাণ্ডাবেড়ি পরানোর ক্ষেত্রে নীতিমালা করতে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। সেই সাথে জানাজায় হাজির করার সময় ডাণ্ডাবেড়ি পরানো কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না ও তাদেরকে ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
সোমবার বিচারপতি কেএম কামরুল কাদের এবং বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর বেঞ্চ বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামালের জনস্বার্থে করা রিটের প্রেক্ষিতে এই রুল জারি করেন।
আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজি, কারা মহাপরিদর্শক, গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার ওসি এবং শরিয়তপুর থানার ওসিসহ সংশ্লিষ্টদেরকে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতের আদেশের পর ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে মায়ের জানাজায় হাজির করার ঘটনার শুনানিতে আদালত উষ্মা প্রকাশ করে এ বিষয়ে রুল জারি করেছেন।
তিনি বলেন, সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে জনমনে ভীতি সঞ্চার করার জন্য বিএনপির দুই নেতা আলী আজম ও সেলিম রেজাকে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে মায়ের জানাজায় হাজির করা হয়। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এটা করা হয়েছে। সম্পূর্ণ অন্যায় ও আইন বহির্ভূতভাবে এটা করা হয়েছে, এটা অমানবিক। আমাদের সংবিধানও এটা সমর্থন করে না।
এর আগে গাজীপুর ও শরীয়তপুরে বিএনপির দুই নেতা আলী আজম ও সেলিম রেজাকে কারাগার থেকে মায়ের জানাজায় ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে হাজির করার ঘটনায় রিট করেন কায়সার কামাল।
সোমবার রিটের পক্ষে শুনানি করেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এজে মোহাম্মদ আলী। সাথে ছিলেন- ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, আবদুল জব্বার ভূইয়া, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল, মোহাম্মদ আলী, সালমা সুলতানা, মাসুদ রানা, রুকুনুজ্জামান সুজা, মো: সেলিম মিয়া, মো: সাগর হোসেন প্রমুখ।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন- ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
গত ২৪ জানুয়ারি কারাগারে থাকা রাজনৈতিক দলের নেতা ও বিভিন্ন ব্যক্তিকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে জানাজা বা কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে নিয়ে আসার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়। বিএনপির আইন সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল জনস্বার্থে এ রিট দায়ের করেন।
এর আগে, গত ২০ ডিসেম্বরে একটি জাতীয় দৈনিকে ছবিসহ একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। যেখানে দেখা যায়, গাজীপুরে একজন আসামি ডাণ্ডাবেড়ি পরিহিত অবস্থায় মায়ের জানাজা পড়াচ্ছেন। তার পরপরই গত ১৭ জানুয়ারি ছবিসহ আরেকটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেখানেও দেখা যায়, শরীয়তপুরে আরেকজন আসামি একইভাবে ডাণ্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় মায়ের জানাজা পড়াচ্ছেন। এ সময়ের মধ্যেই একজন আইনজীবীসহ কয়েকজনকে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে ঢাকা কোর্টে আনা হয়। এসব ঘটনা পত্র-পত্রিকা এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এছাড়া কাছাকাছি সময়ে সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল, তানভীর হাসান তানু, প্রবীর শিকদার, শিল্পী জে কে মজলিস এবং কয়েকজন শিশুসহ অনেক আসামিকে হাতকড়া পরানোর ঘটনায় দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় বয়ে গেছে। কিন্তু তারপরও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে হাতকড়া ও ডাণ্ডাবেড়ির যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।