ঢাকায় কার্যকর আন্দোলন গড়ে তোলা নিয়ে গত এক যুগে একাধিকবার তৃণমূলের প্রশ্নের মুখে পড়তে দেখা গেছে বিএনপিকে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে যখন শক্তভাবে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালিত হয়, তখন রাজধানীর সংগঠন ততটাই নিষ্ক্রিয় থাকার কারণেই মূলত এমন প্রশ্ন তোলে তৃণমূল। দলটি আবারো সরকারবিরোধী বৃহৎ একটি আন্দোলনের পথে রয়েছে। সেই আন্দোলনে ঢাকা মহানগর কতটা সাংগঠনিক সক্ষমতা দেখাতে পারবে, সেটিই চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে বিএনপির হাইকমান্ড।
ঢাকা মহানগরকে শক্তিশালী করতে ইতোমধ্যে নানাবিধ উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। কিন্তু এক দিকে মামলা-হামলা- গ্রেফতার অন্য দিকে অভ্যন্তরীণ প্রতিবন্ধকতায় সংগঠন গোছাতে বেগ পেতে হচ্ছে বর্তমান ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির নেতৃত্বকে।
দায়িত্বশীল নেতারা বলেছেন, সব প্রতিকূলতা পেরিয়েই তৃণমূল থেকে মজবুত ভিত্তির ওপর পুরো সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা চলছে। সম্মেলনের মাধ্যমে ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে থানা কমিটি গঠনেরও প্রস্তুতি চলছে।
বিগত দিনে ঢাকা মহানগর বিএনপির কার্যক্রমে অসন্তুষ্ট দলের হাইকমান্ড গত বছরের ২ আগস্ট ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। দক্ষিণে আব্দুস সালামকে আহ্বায়ক ও রফিকুল আলম মজনুকে সদস্যসচিব করে ৪৯ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি করা হয়। আর উত্তরে ৪৭ সদস্যের কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয় আমান উল্লাহ আমানকে এবং সদস্যসচিব করা হয় সাবেক ফুটবলার আমিনুল হককে।
জানা গেছে, নতুন কমিটি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে ঘরে-বাইরে নানাবিধ চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েন। অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং-কোন্দলকে নিরসন করে সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় মহানগর বিএনপির নেতাদের।
মহানগরের নেতারা জানান, বিগত ২০-২২ বছর ধরে ঢাকা মহানগরের ইউনিট, ওয়ার্ড পর্যায়ে কোনো কমিটি ছিল না। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় এসব কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেন মহানগর উভয় অংশের নেতারা। বিভিন্ন সাংগঠনিক টিম গঠন করে ত্যাগী, নির্যাতিত ও যোগ্যদের দিয়ে শুরুতে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হলেও পরে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করেন নেতারা। সরাসরি ভোটের মাধ্যমে গঠিত এসব কমিটি এখন যে কোনো সময়ের চেয়ে চাঙ্গা বলে অভিমত তাদের।
মহানগর উত্তর বিএনপির নেতারা জানান, তারা দায়িত্ব পাওয়ার পর এই সংগঠনের বিভিন্ন বাজার, এলাকাভিত্তিক ৬২৫টি ইউনিট কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৭১টি ওয়ার্ডে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পরে ইউনিট কমিটির প্রত্যক্ষ ভোটে ওয়ার্ড কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে থানা কমিটি করার উদ্যোগ নিয়েছেন মহানগর নেতারা।
দক্ষিণের নেতারা জানান, সাংগঠনিক তৎপরতার অংশ হিসেবে এই সংগঠনের পাড়া-মহল্লা ও বাজারভিত্তিক ৭০২টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৮০টি ওয়ার্ডে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয় শুরুতে। পরে ইউনিট কমিটির ভোটে ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা হয়। এর মধ্যে ৪০টির মতো ওয়ার্ড কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছে। বাকিগুলোও শেষের পথে। তবে সংগঠনের আহ্বায়ক আব্দুস সালামসহ অনেক নেতাকর্মী কারাগারে থাকায় একটু সময় নেয়া হচ্ছে।
মহানগরের নেতারা বলেছেন, বিগত প্রায় এক বছর ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতারা অনেকটা নির্বিঘেœ সাংগঠনিক তৎপরতা অব্যাহত রাখতে পারলেও গত জুলাই থেকে রাজপথেই বেশি থাকতে হচ্ছে নেতাকর্মীদের। এই সময়ের মধ্যে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ৩০টির বেশি সমাবেশের আয়োজন করতে হয়েছে। জ্বালানি তেল ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং সারা দেশে নেতাকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ১৬টি সমাবেশ ও মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচি পালন করতে হয়েছে। গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ আয়োজকের প্রধান ভূমিকায় থাকতে হয়েছে এই সংগঠনকে। যদিও কেউ কেউ ঢাকার সমাবেশে মহানগরের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে দেখা গেছে। সমালোচকদের দাবি, ‘ঢাকার সমাবেশে ঢাকার বাইরের লোকজনই ছিল বেশি। মহানগরের অংশগ্রহণ তেমন চোখে পড়েনি।’ যদিও এই অভিযোগ মানতে রাজি নন মহানগরের নেতারা। তারা বলেছেন, ঢাকার সমাবেশে মহানগরের নেতারা সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে সমাবেশ সফল করেছে।
মহানগেরর দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বলেছেন, বিগত তিনটি মহানগর কমিটির ধারাবাহিক ব্যর্থতার পর নতুন কমিটি দায়িত্ব পালন করছে। কিন্তু এর মধ্যে দলের মধ্য থেকে একটি অংশের প্রবল বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে সংগঠনের নেতাদের। এই কমিটিকে ব্যর্থ করতে ওই অংশটি শুরু থেকেই কাজ করছে বলে মহানগর নেতারা জানান। সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের সময়ে প্রভাবশালীদের রোষানলে পড়তে হয়েছে। হামলা করে সম্মেলন বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টা হয়েছে অনেক স্থানেই। একদিকে সরকার ও সরকারি দল, প্রশাসনের বাধা অন্য দিকে অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং মোকাবেলা করেই এগিয়ে যেতে হচ্ছে বর্তমান কমিটিকে।
মহানগর উত্তরের নেতাকর্মীরা জানান, দায়িত্ব পাওয়ার পর মহানগর উত্তরের আমিনুল হককে নানা প্রতিবন্ধকতা পাড়ি দিতে হচ্ছে। কারো পকেটের লোক না হওয়ায় ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে সব কাজ করায় বিভিন্ন সময়ে ‘আমিনুল ঠেকাও’ স্লোগান তুলতেও দেখা গেছে বিরোধী পক্ষের।
নতুন কমিটি গঠনের পর পদবঞ্চিতদের দিয়ে বিদ্রোহ উসকে দেয়ার চেষ্টাও হয়েছে। একইভাবে দক্ষিণের কমিটিকেও ব্যর্থ করতে একটি অংশ উঠে পড়ে লেগেছে। যদিও এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি আমিনুল হক।
আমিনুল হক বলেন, মহানগর উত্তরে কোনো কোন্দল নেই, বিভেদ কিংবা বিভক্তি নেই। নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা রয়েছে। যেটাকে অনেকে কোন্দল বলে ভুল করে থাকেন। তিনি জানান, দেশ রক্ষা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এক দফার আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। সংগঠনের প্রত্যেক নেতাকর্মী নিজের জীবনকে বাজি রেখে কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজ করছেন। এই আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দিতে তারা বদ্ধপরিকর।
ঢাকা দক্ষিণের সদস্যসচিব রফিকুল আলম মজনু বলেন, সরকারের সীমাহীন নির্যাতন ও অত্যাচারের মধ্যেও তারা তাদের সাংগঠনিক তৎপরতা এগিয়ে নিচ্ছেন। একইসাথে এই অবৈধ সরকারের পতনের আন্দোলনকে বেগবান করতে কাজ করছেন। কোনো অপতৎরতাই তাদের এই আন্দোলনকে ব্যাহত করতে পারবে না।
বগুড়া অফিস জানায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা: জোবাইদা রহমানের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশের প্রতিবাদে বগুড়ায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ শুক্রবার বগুড়া জেলার বিএনপি উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ সমাবেশে বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি ও পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম বাদশা বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষায় জিয়া পরিবার অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে কাজ করছে। স্বৈরাচারী শাসনের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। কিন্তু আজ সেই গণতন্ত্র ফ্যাসিবাদের কবলে। এবার গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠার লড়াই করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আর এতেই সরকার ভীত হয়ে নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তবে কোনো লাভ হবে না। জনতা এবার রাজপথে নেমেছে। যুগপৎ আন্দোলনে ভয় পেয়ে সরকার দিগি¦দিক জ্ঞানশূন্য হয়ে আদালতের মাধ্যমে একটি মিথ্যা মামলায় তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা: জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে হীন অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সম্পত্তি ক্রোক করে মামলা দিয়ে কোনো লাভ হবে না। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- বগুড়া জেলার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা, শহর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট হামিদুল হক চৌধুরী হিরু, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সহিদ উন নবী সালাম, কে এম খায়রুল বাশার।