অধিনায়ক সাকিবের বীরোচিত ৭০ রানের ইনিংসও হার এড়াতে পারলো না বাংলাদেশের। শেষ পর্যন্ত হেরে যেতে হলো ৪৮ রানের ব্যবধানে। এই জয়ে ৪ ম্যাচে ৩ জয় নিয়ে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে উঠে গেলো নিউজিল্যান্ড। বিপরীতে ৩ ম্যাচের ৩টিতেই হেরে ত্রিদেশীয় সিরিজে শিরোপা দৌঁড় থেকে ছিটকে গেলো বাংলাদেশ। পাকিস্তান বিপক্ষে আগামীকালের শেষ ম্যাচটা এখন শুধুই আনুষ্ঠানিকতার।
ত্রিদেশীয় সিরিজে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচ খেলতে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামে বাংলাদেশ। হ্যাগলি ওভালে টস জিতে ফিল্ডিং নেয় সফরকারী বাংলাদেশ। একাধিক পরিবর্তন দেখা গেছে দুই দলেরই একাদশে। যদিও দুই দলের একাদশ পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে ভিন্ন গল্প। বিশ্বকাপের আগে সব ক্রিকেটারকেই প্রস্তুত রাখা যেখানে নিউজিল্যান্ডের লক্ষ্য, সেখানে বাংলাদেশ দলে ভিন্ন চিত্র।
ব্যাটিংয়ে ভরসা দিতে পারছেন না কেউ। টানা ব্যর্থ বাংলাদেশের টপ অর্ডার। একেক দিন একেক জনকে খেলিয়েও মিলছে না সমাধান। বোলিং ইউনিটেও দেখা দিয়েছে দুর্বলতা। এক তাসকিন ছাড়া কেউ দিতে পারছেন না নির্ভরতা। ফলে আজও একাদশে তিন পরিবর্তন বাংলাদেশের। টানা ম্যাচের ধকল কমাতে তাসকিনকে বিশ্রাম দেয়া হয়েছে আজ। একাদশে ফিরেছেন ইবাদত হোসাইন। সাইফুদ্দীন ফেরেন হাসান মাহমুদের বদলে। মিরাজও ছিটকে গেছেন একাদশ থেকে, দলে ফিরেছেন সৌম্য সরকার।
আগের ম্যাচে ম্যাচ হারার কারণ হিসেবে নাজমুল হাসান শান্ত দায়ী করেছিলেন শিশিরকে। তবে আজ নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং দেখে কি বলবেন এই ওপেনার? শুরুতে ফিন এলেন, পরে ডেভন কনওয়ে, শেষে গ্লেন ফিলিপস; মাঝে মার্টিন গাপটিল। চোখে আঙ্গুল দিয়ে তারা দেখিয়ে দিলেন, নাচতে জানলে উঠান বাঁকা হলেও নাচা যায়।
শুরু থেকেই আগ্রাসী মেজাজে খেলেতে থাকে কিউইরা। শরিফুলের বলে ফিন এলেন ফিরে যাবার আগে করেন ১৯ বলে ৩২ রান। শুরুতে সাবধানী খেলতে থাকা কনওয়ে এরপরই যেন রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন। ১৭তম ওভারে ফিরে যাবার আগে খেলেন ৪০ বলে ৬৪ রানের ইনিংস। সাইফুদ্দীনের সেই ওভারে ফেরেন মার্ক চাপম্যানও। মাঝে ২৭ বলে ৩৪ করে ইবাদতের শিকার হন মার্টিন গাপটিল।
তবে হাসতে থাকে গ্লেন ফিলিপসের ব্যাট। প্রথম বল থেকেই মারমুখী ভঙিতে খেলতে থাকেন এই ব্যাটার। সাকিব আল হাসানের এক ওভারেই নেন ১৮ রান। ১৯তম ওভারে ১৭ রান নিয়ে মাত্র ১৯ বলে তুলে নেন ব্যক্তিগত অর্ধশতকও। শেষ ওভারে আউট হবার আগে খেলেন ২৪ বলে ৬০ রানের ইনিংস। ৩৭ রানে ২ উইকেট নেন সাইফুদ্দীন, ৪০ রানে ২ উইকেট শিকার ইবাদতের। নিউজিল্যান্ড থামে ৫ উইকেটে ২০৮ রানে।
ভাগ্যও যেন বাংলাদেকে নিয়ে পরিহাস করছে। প্রতি ম্যাচেই একাধিক সুযোগ দিচ্ছে। আজও প্রথম ওভারেই ‘অলৌকিক’ জীবন পেয়েছেন শান্ত। চার-চারজন ফিল্ডারের মাঝে ক্যাচটা যেভাবে ফসকেছে, তাতে হয়তো বল নিজেই বলে উঠেছে ‘বিধাতা তুমি বলে দাও আমি কার? চার জোড়া হাত একটা ক্যাচের দাবীদার।’ যে বলে আউট হলেন তার আগের বলেই আরো একবার শান্ত জীবন পেয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত মিলনের শিকার হয়ে ফিরেছেন ১২ বলে ১১ রানে।
গত চার ম্যাচে ওয়ান ডাউনে খেলা লিটন ছিলেন আজ ওপেনিংয়ে। সেই পুরনো রোগ আবার ফিরে এসেছে। আজও আউট হয়েছেন ভালো খেলতে খেলতে। যতক্ষণ মাঠে ছিলেন সাবলীল ছিলেন, নান্দনিকতা ধরে রেখেছিলেন। তবে পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে ব্রেসওয়েলের শিকার হয়ে ১৬ বলে ২৩ রানেই থামতে হলো লিটনকে। পাওয়া প্লে শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৫৩/২। যা গত ২ বছরে বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ।
সাকিব আল হাসানের সাথে ২৭ বলে ৪৩ রানের জুটি গড়ে দলকে ভালোই এগিয়ে নিচ্ছিলেন সৌম্য, তবে ১৭ বলে ২৩ করে তিনিও ফিরে যান। খানিকটা বাদে ব্রেসওয়েলের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফিরে যান আফিফও। প্রমোশন পেয়েও ভালো করতে পারেননি সোহান, ফিরেছেন ৬ বলে মাত্র ২ রানে। ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ইয়াসিরও ফিরেছেন মাত্র ৬ রানে। তবে একাই দলকে টেনে নিয়ে গেছেন সাকিব আল হাসান। ৩৩ বলে তুলে নিয়েছেন নিজের ১১তম টি-টোয়েন্টি অর্ধশতকটাও।
সাধারণ ক্রিকেটার আর বিশ্বসেরার মাঝে তফাৎটা হয়তো এখানেই। একাধিক জীবন পেয়েও বাকীরা যখন ব্যর্থ হয়, একটা জীবন পেয়ে সাকিব ইনিংসটাকে টেনে নিয়ে গেলেন ৪৪ বলে ৭০ রানে। ১৯তম ওভারে সাকিব ফিরে যাওয়ার আগেই হার নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় আর কোনো রিস্ক নেননি মাঠে থাকা মোসাদ্দেক ও সাইফুদ্দীন। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ থামে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৬০ রানে।
প্রতি ম্যাচেই ফিল্ডিংয়ে যেন ১৫/২০ রান বাঁচিয়ে দেন কিউই ফিল্ডাররা। বাউন্ডারি লাইনে আজও যেন অন্তত ২০ রান বাঁচিয়েছে ব্ল্যাক ক্যাপসরা। অন্যথায় আরো একটু সমৃদ্ধ হতে পারতো স্কোরকার্ডটা।