বুধবার, ০১:৪৯ অপরাহ্ন, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

শরতের অনুভূতি ধুয়ে নিচ্ছে হেমান্তের শিশির, ভোরে বেদনা বুকে ঝরে শিউলি ফুল…

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৩
  • ৭৫ বার পঠিত

‘শিউলি ফুল, শিউলি ফুল, কেমন ভুল, এমন ভুল, রাতের বায় কোন মায়ায় আনিল হায় বনছায়ায়, ভোরবেলায় বারে বারেই ফিরিবারে হলি ব্যাকুল’- শিউলি ফুলের রূপে মুগ্ধ হয়ে লিখেছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিশির ভেজা সকালে ঝরে থাকা শিউলি ফুলের অপূর্ব দৃশ্য গ্রামের পথে প্রান্তরে ও বসতবাড়িতে প্রায় দেখা যায়। এই ফুলের সৌন্দর্য আর মিষ্টি ঘ্রাণে বাগান, উন্মুক্ত স্থান ও বসতবাড়ির আঙিনা মেতে ওঠে।

সকালে শিশিরমাখা শিউলি ফুল দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়। গ্রামের ছোট ছোট মেয়েরা খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে শিউলি কুড়াতে যায়। দু’হাত ভরে ফুল নিয়ে আসে। তারপর একটি একটি করে ফুল নিয়ে মালা গাঁথে। স্নিগ্ধতায় ভরে ওঠে পুরো সকাল।

সবুজ পাতার মধ্যে এক-একটি শিউলি ফুল ভালোবাসা ছড়িয়ে দেয়। শিউলি ফুলকে বলা হয় ‘দুঃখের ফুল’। দিনের আলোতে এ ফুল তাদের উজ্জ্বলতা হারিয়ে ফেলে। শিউলি ফুলকে অনেকে শেফালি নামে ডাকে। এটি রাতে ফুটে সকালেই ঝরে যায়।

এই ফুল বেদনার প্রতীক। ব্যর্থ প্রেমের আলেখ্য। বহুকাল ধরে সৌন্দর্যপ্রেমী মানুষকে মুগ্ধ করে রেখেছে শিউলি পুল।

কোনো কোনো ধর্মের বিশ্বাস শিউলি স্বর্গের ফুল। এই ফুল নিয়ে এমন গল্পও আছে- ‘এক রাজকুমারী সূর্যকে ভালোবেসে না পেয়ে আত্মহত্যা করে ফুল গাছে পরিণত হয়। সকাল বেলায় যেন সূর্যের মুখ না দেখতে হয়, তার জন্য সূর্য উঠার আগেই ঝরে পড়ে গাছ থেকে। রাজকন্যার নাম ছিল পারিজাতিকা। এই জন্য শিউলির আরেক নাম পারিজাত।’

আগে যত্রতত্র শিউলি গাছ দেখা গেলেও নগর সভ্যতার কারণে এখন আর তেমনটি চোখে পড়ে না। শিউলি ফুল হারিয়ে যেতে বসেছে। নতুন করে এখন আর যত্ন করে শিউলি গাছ কেউ বুনে না। তবুও অনাদর-অবহেলায় বেড়ে ওঠা শিউলি ফুলের গাছ চোখে পড়ে মাঝেমধ্যেই। তাইতো এখনো শিউলিতলায় ভোরবেলায় পল্লী বালিকারা ফুল কুড়াতে ভিড় জমায়।

দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গার নতুনপাড়ার গাউসিয়া ফুটের মালিক বাবু বলেন, ‘আমাদের বাড়ির সামনে রাস্তার ধারে একটি বড় পুরাতন শিউলি ফুলের গাছ আছে। প্রচুর ফুল ফটে। প্রতিদিন সকালে উঠে শিউলি গাছের নিচে এসে দাঁড়াই। শিশুরা দল বেঁধে শিউলি কুড়ায়। এ দৃশ্য দেখে মনটা ভালো হয়ে যায়। এই ফুল আশপাশের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পূজা-অর্চনায়ও ব্যবহার করেন। এবং সকালে সনাতন ধর্মের মেয়েরা ফুল নিতে আসে।’

দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা বলেন, ‘শিউলির ছয়টি শুভ্র সাদা পাপড়ি। বৃন্তটি কমলা রঙের টিউবের মতো। এটি নরম ধূসর ছাল বা বাকলবিশিষ্ট হয়। গাছ লম্বায় ১০ মিটারের মতো হয়। গাছের পাতা ছয় থেকে সাত সেন্টিমিটার লম্বা এবং সমান্তরাল প্রান্তের বিপরীতমুখী সাজানো থাকে। সৌন্দর্য উপভোগ ছাড়াও শিউলির আরো ব্যবহার আছে। ফুলটির বোঁটাগুলো শুকিয়ে গুঁড়ো করে হালকা গরম পানিতে মেশালেও তৈরি হয় চমৎকার একটি রঙ। এ ছাড়া বিভিন্ন ওষুধ তৈরিতে শিউলির বীজ, পাতা ও ফুল ব্যবহার করা হয়। এত সৌন্দর্য, এত যার ঘ্রাণ, তার কি না এত ছোট জীবন? এ কারণে শিউলি গাছকে বলা হয় বেদনার প্রতীক। কবি কাজী নজরুল ইসলামও বিরহের কথা প্রকাশ করতে গিয়ে শিউলিকে আশ্রয় করে লিখেছেন, ‘শিউলি ফুলের মালা দোলে শারদ-রাতের বুকে ঐ, এমন রাতে একলা জাগি সাথে জাগার সাথি কই।’

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com