চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নে বেসরকারি বিএম কনটেইনার ডিপোর অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের শাস্তি দাবি করেছেন শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ), চট্টগ্রাম। তাদের অভিযোগ, ডিপোর মালিকপক্ষকে বাঁচাতে মরিয়া পুলিশ। তাই পুলিশের মামলায় মালিকপক্ষের লোকজনের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
আজ সোমবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় স্কপ চট্টগ্রামের নেতারা। এ সময় নিরাপত্তার স্বার্থে চট্টগ্রাম মহানগর ও আবাসিক এলাকা সংলগ্ন সব কনটেইনার ডিপো দ্রুত স্থানান্তর করার উদ্যোগ নেওয়ার দাবিও জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে স্কপ চট্টগ্রামের সমন্বয়ক তপন দত্ত বলেন, ‘কনটেইনারে কেমিক্যাল রাখার বিষয়টি বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষ ফায়ার সার্ভিসকেও জানায়নি। তথ্য গোপন করে মালিকপক্ষ যে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছে, সেজন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি তো দূরের কথা বরং তাদের বাঁচানোর নানা প্রক্রিয়া, ফন্দিফিকির আমরা দেখছি।’
তিনি বলেন, ‘দেশে কোনোদিন কর্মক্ষেত্রে হতাহতের ঘটনায় দায়ী মালিক কিংবা সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, এসব ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলেও প্রশাসন তাতে বাধা দেয়। শ্রমজীবী মানুষের সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। প্রশাসন দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা তো নিচ্ছেই না, প্রতিবাদ করতে চাইলে তাতে বাধা দিয়ে শ্রমজীবী মানুষের সাংবিধানিক অধিকারও কেড়ে নিচ্ছে। এতে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক চরিত্র প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। রাষ্ট্রের অবস্থান যে ব্যবসায়ী-ধনী শ্রেণির পক্ষে তা পরিষ্কার হচ্ছে।’
সংবাদ সম্মেলনে শ্রমিক নেতা সফর আলী বলেন, ‘কনটেইনার ডিপোগুলোর নিরাপত্তা ঘাটতি নিরূপণের জন্য একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। ওই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কনটেইনার ডিপোগুলোর নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে একটি জাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে শ্রমিক হতাহতের প্রতিবাদে আমরা গত ৮ জুন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে শোক ও প্রতিবাদ সমাবেশ করতে চেয়ে পুলিশকে জানিয়ে চিঠি দিয়েও পুলিশের হস্তক্ষেপের কারণে আমরা করতে পারিনি। অথচ সংবিধানে শ্রমিক হতাহতসহ যেকোনো অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো তথা স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার দেশের প্রত্যেক নাগরিকের রয়েছে।’
চট্টগ্রাম শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সমন্বয়ক নাজিম উদ্দীন বলেন, ‘আইএলও কনভেনশন ১২১ অনুসরণ করে কন্টেইনার বিস্ফোরণে নিহতদের প্রত্যেকের আজীবন আয়ের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে। আহতদের চিকিৎসাকালীন সমবেতন ছুটিসহ সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। আহতদের মধ্যে কেউ যদি স্থায়ী পঙ্গু হয়ে যায় তাদের ক্ষেত্রে আজীবন আয় ও ভোগান্তি হিসাব করে সমপরিমাণ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কেউ আংশিক পঙ্গু হলে তাদের পুনর্বাসনসহ অঙ্গহানি বিবেচনায় নিয়ে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’