আগে পুরুষরাই বেশি আক্রান্ত হতো হৃদরোগে। কিন্তু বর্তমানে চিত্রটা একটু ভিন্ন । এখন নারীদের হৃদরোগে আক্রন্ত হওয়ার ঘটনাও বেড়ে চলছে। প্রজননক্ষম সময়ে নারীর ‘করোনারি হার্ট ডিজিজ’-এ আক্রান্ত হওয়ার ভয় কম। তখন মেয়েদের শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের উৎপাদন ঠিক থাকে। হৃদরোগ আটকাতে সাহায্য করে সেই হরমোন। তবে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ইস্ট্রোজেনের পরিমাণ কমতে থাকে। ফলে হৃদরোগ বাসা বাঁধে নারীর শরীরে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি পাঁচজন মহিলার মধ্যে একজন হার্ট অ্যাটাকে মারা যাচ্ছেন। সেন্টার্স অব ডিজিজেস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, প্রতি বছর পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি মানুষ প্রাণ হারান হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে। অনেক ক্ষেত্রে দৈনন্দিন জীবনযাপনের মধ্যেই নিহিত থাকে হৃদরোগের কারণ। যেমন- অত্যধিক মানসিক চাপ, কর্মব্যস্ত জীবন।
অনেক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। গত বছর ‘দ্য ল্যানসেট’-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনেও তুলে ধরা হয়েছে যে, ভারতসহ সব দেশে মহিলাদের মধ্যে কার্ডিয়োভাসকুলার রোগ বাড়ছে।
কেন নারীদের হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি তা জানেন কি?
১) ৪৫ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে মহিলাদের ঋতুবন্ধ হয়। ঋতুবন্ধের পর শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের ক্ষরণ কমে যায়। এ কারণে তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে।
২) অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় অনেক মহিলাই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভোগেন। এ সময়ে রক্তচাপ বেড়ে গেলে রক্তনালিকাগুলো দিয়ে রক্ত ও অক্সিজেন পর্যাপ্ত মাত্রায় মস্তিষ্কে পৌঁছাতে পারে না। এ ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকখানি বেড়ে যায়।
৩) ধূমপানের অভ্যাস বাড়িয়ে দেয় হৃদরোগের আশঙ্কা। ধূমপান বন্ধ করে দিলে হৃদরোগের আশঙ্কা কমে শতকরা আশি ভাগ। অতিরিক্ত মদ্যপান থেকেও নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখুন। এতেও হৃদরোগের আশঙ্কা বাড়ে।
৪) ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও উচ্চ কোলেস্টেরলের সমস্যা থাকলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়। এসব রোগের কারণে রক্তনালিকাগুলো সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়ে। রক্ত প্রবাহে বাধা তৈরি হয়। ফলস্বরূপ হৃদযন্ত্রের উপর চাপ পড়ে। কার্ডিয়োভাসকুলার রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনাও বেড়ে যায়।
৫) মানসিক চাপের কারণেও মহিলাদের মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব হৃদরোগের অন্যতম বড় অনুঘটক। শরীরকে সুস্থ রাখতে দৈনিক ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুম অবশ্যই প্রয়োজন। কর্মব্যস্ততা এবং অবসাদের কারণে অনেক মহিলারাই অনিদ্রার সমস্যায় ভোগেন। এতেও কিন্তু ঝুঁকি বাড়ে।