ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ময়লার গাড়ির নিচে নটর ডেম কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী নাঈম হাসান চাপা পড়ার ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ময়লার গাড়ির নিচে প্রথম আলোর সাবেক কর্মী আহসান কবির খানের মৃত্যুর ঘটনা অত্যন্ত মর্মান্তিক। যেকোনো মৃত্যুই বেদনাদায়ক। কিন্তু এভাবে সড়কে একের পর এক মানুষের প্রাণহানি মেনে নেওয়া যায় না।
গত বুধবার গুলিস্তানে সড়ক পার হওয়ার সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একটি ময়লাবোঝাই গাড়ি নাঈম হাসানকে চাপা দিলে সে মারা যায়। নাঈম হাসানের মৃত্যুর পরপরই তার সতীর্থরা রাস্তায় নেমে আসে। গতকাল বৃহস্পতিবার আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে পুরো শহরে। কয়েকটি স্থানে তাদের যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতেও দেখা গেছে। এরই মধ্যে গতকাল বিকেলে পান্থপথে উত্তর সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ি মোটরসাইকেলে থাকা এহসান কবির খানকে চাপা দিয়ে চলে যায়।
প্রথমে যে প্রশ্নটি তোলা প্রয়োজন তা হলো সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ি কেন দিনের বেলা চলবে? নিয়ম অনুযায়ী পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিবেচনায় দিনে ময়লার গাড়ি চলতে পারে না। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বলেছে, গাড়িটি চালাচ্ছিলেন হারুন অর রশিদ নামের একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। পুলিশের দাবি, গাড়ি চালাচ্ছিলেন চালকের সহকারী সোহেল এবং তাঁকে বুধবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ ঘটনা ২০১৮ সালে বিমানবন্দর সড়কে দুই কলেজশিক্ষার্থীর বাসচাপার কথা মনে করিয়ে দেয়। সে সময় ঢাকাসহ সারা দেশে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছিলেন সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে। শিক্ষার্থীরা একপর্যায়ে সড়কে যানবাহন নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। সড়ক আইন অমান্য করার কারণে অনেক ক্ষমতাধর ব্যক্তির গাড়িও তাঁরা আটকে দেন। শিক্ষার্থীদের অব্যাহত আন্দোলনের মুখে সরকার সড়ক পরিবহন আইন পাস করলেও এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি পরিবহনমালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর বিরোধিতার কারণে।
এবারও শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবি সামনে নিয়ে এসেছেন। তাঁদের অন্যান্য দাবির মধ্যে আছে নাঈম হাসানের মৃত্যুর ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত সময়ে বিচার, নাঈমের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ, গুলিস্তানের মতো ব্যস্ততম সড়কে পদচারী-সেতু নির্মাণ, ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে মেনে চলা। প্রশ্ন হলো, সিটি করপোরেশনের মতো একটি নাগরিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের গাড়ি কীভাবে একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী বা চালকের সহকারী চালান? গাড়ি চালাতে হলে কি প্রশিক্ষণ বা লাইসেন্স নেওয়ার প্রয়োজন নেই? পত্রিকার খবর অনুযায়ী, সিটি করপোরেশনে গাড়ি আছে ৩১৭টি, অথচ তাদের লাইসেন্সধারী চালক আছেন ৮৬ জন। তাহলে বাকি গাড়ি কারা চালাচ্ছেন?
নিরাপদ সড়কের দাবিতে বারবার শিক্ষার্থীদের কেন আন্দোলন করতে হচ্ছে এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ কী করছে? সরকারের উচিত শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি অবিলম্বে মেনে নেওয়া এবং দুই মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া। লাইসেন্স ছাড়া ব্যক্তিগত গাড়ি চালালে যদি ব্যক্তি দায়ী হন, গুলিস্তানে সড়কের দুর্ঘটনার জন্য ডিএসসিসি দায়ী হবে না কেন? দুই সিটি করপোরেশনের গাড়িচালকদের বিরুদ্ধেই নিয়ম না মানা ও বেপরোয়া গাড়ি চালানোর অভিযোগ রয়েছে।
আমরা জানি সরকারের যেকোনো পদক্ষেপ কিংবা মেয়রের সান্ত্বনাবাণী নাঈম ও আহসানকে ফিরিয়ে দিতে পারবে না। কিন্তু ভবিষ্যতে যাতে আর কোনো মা-বাবার কোল খালি না হয়, সেটি সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। সিটি করপোরেশনের গাড়িগুলো যেন বেপরোয়াভাবে না চলে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
সুত্রঃ প্রথম আলো