সরকার ঘরে ঘরে আলো পৌঁছে দেয়ার কথা বললেও ঘরে ঘরে এখন ঘুটঘুটে অন্ধকারের আধিপত্য বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
শুক্রবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, উন্নয়নের ফানুসের মায়াজাল সৃষ্টির মাধ্যমে মূলতঃ দুর্নীতির উল্লম্ফন দেশে এক বিকট রূপ ধারণ করেছে। সরকার ঘরে ঘরে আলো পোঁছে দেয়ার কথা বলে, কিন্তু ঘরে ঘরে এখন ঘুটঘুটে অন্ধকারের আধিপত্য। বারবার পূর্ববর্তী সরকারের ব্যর্থতার মিথ্যা বয়ান দিয়ে বিদ্যুতের বাম্পার উৎপাদনকারী সরকারের আমলে এই ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কথা শুনতে হচ্ছে কেন? এটি সেই কৃচ্ছতার জন্য বেলীফুলের মালা দিয়ে বিবাহের আহ্বান জানানোর মতো হবে না তো? যেখানে কারো কারো বিয়ে সোনার মুকুট পরে হয়েছে।
তিনি বলেন, এখন প্রধানমন্ত্রী নির্দ্বিধায় বলছেন, লোডশেডিং হবেই, এটি এড়ানো যাবে না। আওয়ামী মন্ত্রীরা এখন লোডশেডিংয়ের জন্য জনগণকে ধৈর্য ধারণের কথা বলছেন। বছরব্যাপী কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে বিশাল বিশাল অনুষ্ঠানের নামে করা হয়েছে ঝাড়বাতির আলোকের ঝলকানি।
তিনি আরো বলেন, বিশাল আলোকসজ্জা করে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর এখন মন্ত্রীরা বলছেন, বিয়ের অনুষ্ঠান সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে শেষ করতে হবে, করা যাবে না কোনো আলোকসজ্জা। কোনো ধর্মীয় উৎসবেও আলোকসজ্জা করা যাবে না। বিদ্যুৎ সংকটের কারণে সরকার এখন অফিস টাইম কমিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশ যে শ্রীলংকার মতো এক মহা দেওলিয়াত্বের দিকে ধাবিত হচ্ছে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ থাকলো না।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, একের পর এক জনগণের অতি প্রয়োজনীয় উপযোগিতা সেবা অর্থাৎ জ্বালানি, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির মূল্যের সর্বগ্রাসী আগুনের উত্তাপে চারিদিক বিপন্ন হয়ে গেছে। যেমন গতকালই পানির দাম ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়বে। এর আগে বৃদ্ধি করা হয়েছে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম। সরকারের প্রতি সেক্টরে দুর্নীতির সমান্তরাল বিচ্ছুরণ ছাড়া আর কিছু নেই। দেশের ওপর মূলতঃ আওয়ামী শাসকগোষ্ঠীর সামষ্টিক দখলদারী চলছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণের এই লুটপাটের টাকায় সরকার আকাশে স্যাটেলাইট পাঠায়, নিচে রাস্তা বন্ধ করে উপরে মেট্রোরেল-ফ্লাইওভার বানায়, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের জন্য কোটি টাকার আতশবাজি গোড়ায়। গ্যাস উত্তোলন বন্ধ রেখে বিদেশ থেকে মূল্যবান এলএনজি আমদানি করে। এমনকি বিদ্যুৎও তৈরি করে লুটপাটের জন্য। অথচ মানুষের এখন খাদ্য নেই, কর্ম নেই, ঘরে ঘরে কোটি শিক্ষিত বেকার। অনাহারক্লিষ্ট মানুষ খাদ্যের অভাবে সন্তান হত্যা করছে বা বিক্রি করছে।
রিজভী বলেন, শহরের কষ্টক্লান্ত মানুষ প্রিয়জনের সাথে আনন্দ উদযাপনে ফিরছেন গ্রামে। কিন্তু নিশিরাতের সরকারের সিন্ডিকেটের ভাড়ার নৈরাজ্য, পথের সীমাহীন মহাদুর্ভোগ তাদের ঈদযাত্রার আনন্দকে ম্লান করে দিচ্ছে। ঈদ আসলেই আওয়ামী সরকারের পরিবহন ও টিকিট সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে ওঠে। যে যেভাবে পারে দুই-তিন গুণ ভাড়া বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের পকেট কাটে। এ সবকিছুই করছে সরকারি দলের লোকেরা। কারণ এই অর্থের ভাগ পায় ক্ষমতাসীন দলের রাঘব-বোয়ালরা।
তিনি বলেন, পথে পথে যানজট-চাঁদাবাজি-হয়রানি অব্যাহত রয়েছে। পথের ক্লান্তিই শেষ না, দেশের বৃহৎ অঞ্চলজুড়ে ত্রাণবঞ্চিত বন্যার্ত মানুষের হাহাকার অন্যদিকে গ্রামীণ জনপদে সরকারি দলের ক্যাডারদের অত্যাচার ওঁৎ পেতে আছে ঈদের আনন্দকে নিরানন্দে পরিণত করতে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু ও নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী উপস্থিত ছিলেন।