রবিবার, ১২:১৪ অপরাহ্ন, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

এ মালা জাতির গলায়, এ হত্যা পিতৃহত্যা

মোফাজ্জল করিম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২ জুলাই, ২০২২
  • ১২৩ বার পঠিত

বিশ্বাস করবেন কি না জানি না, লিখতে বসে আজ আমার কলাম চলছে না। দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে। বাষ্পাকুল নয়নের সম্মুখে যেন একটি মানুষের ছবি ভেসে উঠছে বারবার, যাকে কোনো দিন দেখিনি, যার নামও শুনিনি দুই সপ্তাহ আগেও। ভদ্রলোকের নাম স্বপন কুমার বিশ্বাস।

আজ থেকে ছয় দশক আগে ১৯৬২ সালে আমিও তো কর্মজীবন শুরু করেছিলাম প্রথমে মুন্সীগঞ্জ হরগঙ্গা কলেজ এবং কয়েক মাস পর সিলেট সরকারি এমসি কলেজের একজন শিক্ষক হিসেবে। সেদিন সেই ১৯৬২-৬৩ সালে একুশ বছরের নবীন যুবাকে মুন্সীগঞ্জের দেশসেরা সাঁতারু, বডি বিল্ডার, টগবগে তরুণ মহিউদ্দিন, যাকে দল-মত-নির্বিশেষে শহরের সব ছেলে-ছোকরা সমীহ করে চলত, পিতৃজ্ঞানে যে আমাকে সম্মান করত, সেই মহিউদ্দিন বিদায়ক্ষণে তার স্যারের বাক্স-বিছানা কোনো কুলির কাঁধে দিতে দেয়নি, নিজে কাঁধে করে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত এগিয়ে দিয়েছিল। সেই শ্রদ্ধা, সেই ভালোবাসার বন্ধন ছিল ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে। আর আজ ছয় দশক পর ওই পেশার একজন উত্তরসূরি শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসকে গলায়  ‘জু-’র মালা পরাল হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোক জড়ো করে তাঁরই কলেজ প্রাঙ্গণে কতিপয় দুর্বৃত্ত। এরা এই সাহস পেল কোথায়? আরো মর্মাহত হলাম যখন কাগজে পড়লাম জেলার দণ্ডমুণ্ডের কর্তা ডিসি ও এসপি নাকি অকুস্থলেই উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা অবশ্য বলছেন, তাঁরা প্রধান ফটকের বাইরে উত্তেজিত জনতাকে সামলাচ্ছিলেন এবং সেই ন্যক্কারজনক ঘটনাটি ঘটেছে তাঁদের দৃষ্টিসীমার বাইরে। এই সাফাই বক্তব্য কতটুকু গ্রহণযোগ্য তা তদন্তকারী কর্তৃপক্ষের তদন্তে হয়তো বোঝা যাবে। তবে আমি আমার চাকরিজীবনে বহুবার এরূপ ঘটনার মোকাবেলা করেছি। আমার কাছে ডিসি-এসপির বক্তব্য কেন জানি দুর্বল মনে হচ্ছে। গেটের কাছে জনতার মুখোমুখি তাঁরা হবেন কেন, তাঁরা তো রণক্ষেত্রের ‘জেনারেল’, তাঁরা থাকবেন পেছনে, কলেজের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অর্থাত্ অধ্যক্ষ ও গভনির্ং বডির কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে। গেট সামলাবেন তো এলাকার ওসি এবং তাঁর ফোর্স। আর হ্যান্ড মাইকের ঘোষণা কি তাঁদের কর্ণগোচর হয়নি? …যাকগে। এসব বিষয়ে সত্যাসত্য আশা করি সঠিক তদন্তে প্রকাশ পাবে। তবে যেহেতু ডিসি-এসপি ঘটনাচক্রে বিষয়টিতে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়েছিলেন, অতএব তদন্তটি হওয়া উচিত তাঁদের সিনিয়র কারো দ্বারা। সেটাই নিয়ম।

আরেকটি বিষয়। ঘটনা ঘটেছে গত ১৮ জুন তারিখে। অর্থাত্ আজ থেকে ১৩ দিন আগে। এর ভেতর বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিবাদের ঢেউ উঠেছে ঠিকই। এবং তা তীব্রতর হচ্ছে প্রতিদিন। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের এযাবত্ গৃহীত পদক্ষেপে দ্রুততা নয়, বরং মন্থরতাই লক্ষণীয়। আর বেচারা স্বপনবাবু ও তাঁর পরিবার যে কী বিভীষিকার মধ্য দিয়ে কাল কাটাচ্ছেন তা সহজেই অনুমেয়। স্বপনবাবু তো প্রাণভয়ে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গেছেন। আর তাঁর স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে চরম দুঃসময় পার করছেন। স্থানীয় প্রশাসন অবশ্য কয়েকজন পুলিশ দিয়ে পাহারার ব্যবস্থা করেছেন তাঁদের বাড়িতে। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির এমন টালমাটাল সময়ে এটাই কি যথেষ্ট? স্থানীয় প্রশাসন নিশ্চয়ই জানে কবে থেকে, কারা, কিভাবে ঘটনাটির প্ল্যান-প্রোগ্রাম করেছে, কে কে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এর সঙ্গে জড়িত, তারা এখন কোথায় ঘাপটি মেরে আছে, রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকাই বা কী—এ সবই থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের জানার কথা। নিশ্চয়ই সরকার বা স্থানীয় প্রশাসন এ ধরনের জঘন্য অপরাধ সমর্থন করে না। প্রশ্নই আসে না। এসব ব্যাপারে রাজনীতির অনুপ্রবেশ ঘটলেই সর্বনাশ। তাহলে কঠোর অবস্থানে যেতে এত গড়িমসি কেন প্রশাসনের?

নড়াইল অর্থাত্ মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ঘটনাটির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক আছে, যা খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। ঘটনাটির ভিকটিম বাবু স্বপন কুমার বিশ্বাস একজন সনাতনধর্মী ব্যক্তি। পুরো ব্যাপারটির সূত্রপাত হয়েছে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের এক নেতাকে প্রণতি জানিয়ে ইউনাইটেড কলেজের একাদশ শ্রেণির এক সনাতনধর্মী ছাত্রের ফেসবুকে দেওয়া পোস্ট থেকে। এতে কলেজের এবং কলেজের বাইরের কিছু ছাত্র-অছাত্রের গাত্রদাহ দেখা দেয়। তারা এটাকে ইস্যু বানিয়ে এই লঙ্কাকাণ্ড ঘটায়। কিন্তু এতে শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষ বা অন্য কোনো শিক্ষকের সংশ্লিষ্টতা ছিল বলে শোনা যায়নি। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, এতে সাম্প্রদায়িকতার ছোঁয়া লাগিয়েছে একটি মহল। ফলে স্বভাবতই হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বাবু রানা দাশগুপ্ত গণমাধ্যমে দেওয়া বিবৃতিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন : শিক্ষক স্বপন কুমারের নিগৃহীত হওয়া বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। ২০১১ সাল থেকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে সংখ্যালঘু শিক্ষকদের ওপর একের পর এক নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় কখনো কখনো শাসক দলের কিছু লোকও জড়িত থাকছে। …ইত্যাদি। তাঁর এই বক্তব্য সরকার এবং সরকারি দলসহ সকলেই নিশ্চয়ই গুরুত্বসহকারে নেবেন। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের মানুষ, তা সে যে দলের বা ধর্মেরই হোক না কেন, সাধারণভাবে অসাম্প্রদায়িক। সত্যি বলতে কি অসাম্প্রদায়িকতার জন্য বাংলাদেশের সুনাম আছে। কাজেই রানা দাশগুপ্ত মহাশয় নড়াইলের ঘটনা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয় বলে যে মন্তব্য করেছেন তা বোধ হয় ঠিক নয়। বিজেপির মতো অতটা কট্টর না হলেও বাংলাদেশেও যে ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী নেই এ কথা বলা যাবে না। তবে প্রধান রাজনৈতিক দলসমূহ এবং সব সরকারই অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী এবং সর্বদা সাম্প্রদায়িক উগ্রতার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে আছে, এ কথা বোধ হয় নির্দ্বিধায় বলা যায়। আন্তর্জাতিকভাবেও তা স্বীকৃত। সেই পাকিস্তান আমলে (১৯৬৪) এবং পরবর্তীকালে কখনো-সখনো দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে প্রতিবেশী রাষ্ট্রে সংঘটিত বড় বড় দাঙ্গার প্রতিক্রিয়ায়। তবে তা কখনোই সরকারি আনুকূল্য বা সমর্থনে নয়। তার পরও আমি বলব কর্তৃপক্ষের উচিত সাম্প্রতিককালে সংঘটিত ঘটনাবলির পুনরাবৃত্তি হতে না দেওয়া।

আমরা কেন ভুলে যাই, এই ভূখণ্ডে হিন্দু-মুসলমান চিরকাল পরস্পর পরস্পরের ভাইয়ের মতো, বন্ধুর মতো, এক পরিবারের সদস্যের মতো বাস করে আসছে। আমাদের শৈশব-কৈশোরে পাঠ্যপুস্তকে পড়া দুটি চরণ উদ্ধৃত করি। (হায়! ইদানীং এগুলো পাঠ্য বই থেকে নির্বাসিত। ) ‘মোরা এক বৃন্তে দু’টি কুসুম হিন্দু-মুসলমান/মুসলিম তার নয়নমণি, হিন্দু তাহার প্রাণ। ’ এটা এ দেশের কোটি কোটি মানুষের অন্তরের কথা। আমরা কেন ভুলে যাই একাত্তরে মুসলমান ছেলেটি ও তার হিন্দু বন্ধু পাশাপাশি অবস্থানে থেকে লড়াই করে এ দেশ স্বাধীন করেছে। হয়তো তারা ছিল কোনো গ্রামের দুটি কৃষক পরিবারের ডাকাবুকো বেকার যুবক, কিংবা কোনো নড়াইল বা সাভার কলেজের মেধাবী সতীর্থ। অসাম্প্রদায়িকতা আমাদের গর্বিত উত্তরাধিকার। এটা ক্ষীয়মাণ হতে দেওয়া যাবে না। আমাদের উন্নতিই নয় শুধু, আমাদের অস্তিত্বের জন্য এটা এক অপরিহার্য অনুষঙ্গ।

সম্মানিত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস মহোদয় আপনি বলেছেন সেই অবর্ণনীয় লাঞ্ছনার মুহূর্তে আপনার মনে হচ্ছিল কলেজ ভবনের ওপর থেকে লাফিয়ে পড়ে আপনি আত্মহত্যা করবেন। না, না, এটা হতে পারে না স্বপনবাবু। আপনি আত্মহত্যা করবেন কেন? আপনি নিশ্চয়ই বিশ্বাস করেন ‘মানবের তরে এই পৃথিবী, দানবের তরে নয়। ’ ওই কটি মানবাকৃতি দানব সেদিন মাইক দিয়ে একটি ঘোষণা দিল আর তাতেই কি সেটা ১৭ কোটি মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে গেল? না, নিশ্চয়ই না। আপনার ছাত্রছাত্রীকে তো আপনি অন্যায়ের কাছে মাথা নত করার শিক্ষা দেন না, অন্যায়কে প্রতিরোধ করার, পরাস্ত করার শিক্ষা দেন আপনি। সেই আদর্শেই অবিচল থাকুন, ভাই। বাঙালি অন্যায়ের কাছে মাথা নত করতে জানে না বলেই সে একাত্তরের সূর্যসন্তান হতে পেরেছিল। মুষ্টিমেয় কিছু ধড়িবাজ-ফেরেববাজ ব্যতীত সাধারণ বাঙালি দেশকে সত্যিকার অর্থে ভালোবাসে বলেই উন্নয়নের শ্রেণিকক্ষে লাস্ট বেঞ্চ থেকে প্রমোশন পেয়ে সম্প্রতি এই সত্ ও পরিশ্রমী ছাত্রটি এক ধাপ এগিয়ে গেছে। তার লক্ষ্য অচিরেই সে একদিন ফার্স্ট বেঞ্চে বসবে সব ভালো ভালো ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে।

২. নড়াইলের অধ্যক্ষ মহোদয়ের দুঃখগাথার বয়ান শেষ হতে না হতেই দাঁড়ে বসা মনময়না চেঁচিয়ে উঠল : আজ কী হলো তোমার? সাভারের আশুলিয়া হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিদ্যালয়ান্ত প্রাণ তরুণ প্রভাষক উত্পল কুমার সরকারের কথা বেমালুম ভুলে গেলে? সেই স্ট্রিকট ডিসিপ্লিনারিয়ান, কর্তব্যপরায়ণ, অতীব দায়িত্ব জ্ঞানসম্পন্ন মানুষটি যে আর নেই সে খবর রাখো? তাঁরই ছাত্রের হাতে তিনি শহীদ হয়েছেন। বিশ্বাস হয়? সাধে কি আর শেকসপিয়ার সোয়া চার শ বছর আগে বলে গেছেন : দেয়ার আর মৌর থিংস ইন হ্যাভেন অ্যান্ড আর্থ, হোরেশিও, দ্যান আর ড্রেমট অব ইন ইওর ফিলসফি। (হ্যামলেট, প্রথম অঙ্ক, পঞ্চম দৃশ্য)। হ্যাঁ, উত্পলবাবুর ছাত্র জিতু ক্রিকেট খেলার স্টাম্প দিয়ে তাঁর মাথায় ও শরীরে বেধড়ক আঘাত করে করে ও বল্লমের মতো সুচালো অংশ দিয়ে খুঁচিয়ে-কুপিয়ে রক্তাক্ত করে মারাত্মক জখম করে তাঁকে। দুদিন পর উত্পলবাবু হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিত্সাধীন অবস্থায় পরলোকগমন করেন। না, আষাঢ় মাসে ফাঁদা এটা কোনো আষাঢ়ে গল্প নয়, এটা ঘটেছে এই গৌরবের পদ্মা সেতু নির্মাতা বাংলাদেশ সরকারের পীঠস্থান সচিবালয় থেকে মাত্র মাইল বিশেক দূরে শত শত ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষককুলের চোখের সামনে, দিনদুপুরে প্রকাশ্য দিবালোকে। না, ওই আততায়ী শিক্ষার্থীটি বিকৃতমস্তিষ্ক ছিল না, যদিও এখন হয়তো তার অভিভাবকরা আইনের ফাঁক গলিয়ে তাকে রক্ষা করার জন্য পাগল সাজালেও সাজাতে পারেন। তবে তা ধোপে টিকবে বলে মনে হয় না। কারণ একজন উঠতি সন্ত্রাসী হিসেবে জিতু মিয়া এরই মধ্যে এলাকায় ব্যাপক ‘সুনাম’ অর্জন করেছে। আর এ ব্যাপারে তার পরিবারের নাকি যথেষ্ট সায় আছে। (পরিবার হয়তো ভাবছে, এ ছেলে একদিন সন্ত্রাসী সম্রাট হয়ে বংশের মুখোজ্জ্বল করবে!)

আর যদি পাগলের ভূমিকায় না নেমে জিতু মিয়া আদালতে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য সত্য বয়ান দেয় তাহলে কী বলবে? এটাই তো বলবে, কদিন আগে একটি ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করায় উত্পল স্যার তাকে ভর্ত্সনা করেছিলেন, এই তো? একজন শিক্ষক, বিশেষ করে যিনি বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি, তিনি কি কোনো বখাটে ছাত্রকে সংশোধনের জন্য বকতেও পারবেন না? তাহলে তো আমাদের স্কুলবেলায় (১৯৫০-এর দশক) মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন ইব্রাহিম আলী স্যার বা বগুড়া জিলা স্কুলের অখিলবাবু ও সহকারী প্রধান শিক্ষক হেলাল স্যার আমাদের কান মলে বা বেত মেরে ভারি অন্যায় করেছেন। এখন তো দেখছি সেই ইংরেজি প্রবাদবাক্য ‘স্পেয়ার দ্য রড অ্যান্ড স্পয়েল দ্য চাইল্ড’ কথাটিই সত্যি। আস্কারা পেয়ে পেয়ে পাড়ায় পাড়ায়, স্কুলে স্কুলে, জিতু মিয়াদের সংখ্যা ভয়াবহভাবে বাড়ছে, বাড়ছে তথাকথিত কিশোর গ্যাংয়ের সংখ্যা।

এই উঠতি সন্ত্রাসীকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী পাকড়াও করেছে। তাকে আটক করতে এত দেরি হলো কেন? রাজনীতি? এবং তাই যদি সত্যি হয় তাহলে জাতির কপালে ম্যালা দুঃখ আছে। সব জেলা-উপজেলায় এ রকম একজন করেও জিতু ফুলে-ফেঁপে উঠলে শুধু পদ্মা সেতু নয়, সব পদ্মা-মেঘনা-যমুনা সেতু এদের পদভারে নেত্রকোনা-সুনামগঞ্জের বেনোজলের সঙ্গে ভেসে যাবে। তাই বলছিলাম, শুধু কথায় চিড়া ভিজে না (যদি ভিজত তবে দেশের হাট-বাজার-বাড়িঘরে একটা চিড়াও শুকনো থাকত না। )

আর সব শেষে জিতুর উদ্দেশে একটা কথা বলতে চাই। বাবা জিতু, তুই তো তোর শিক্ষককে হত্যা করলি না, হত্যা করলি তোর পিতাকে। কারণ একজন শিক্ষক তাঁর ছাত্রের কাছে পিতৃতুল্য। আজ যদি, খোদা না করুন, তোর পিতাকে আল্লাহপাক উঠিয়ে নেন, তাহলে তোদের পরিবারের কী হবে ভেবে দেখ, বাবা। উত্পলবাবুর সন্তানদের অকালে পিতৃহীন করাটা কি ঠিক হলো?

মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, নড়াইলের ১৮ জুন ও সাভারের ২৫ জুন তারিখের ঘটনায় আপনার শক্ত অবস্থান প্রত্যাশা করে জাতি। আপনি এক অর্থে দেশের সব শিক্ষকের (আর শুধু শিক্ষক কেন সব শিক্ষার্থীরও) অভিভাবক, সবার নেতা। আপনার ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপ কামনা করছি বিষয় দুটিতে। তাহলে সব দ্বিধা-দ্বন্দ্বের অবসান হবে। আমি মনে করি নড়াইলে জুতার মালা অধ্যক্ষ স্বপন কুমার নয়, সমস্ত জাতির গলায় পরানো হয়েছে। আর সাভারে হয়েছে পিতৃহত্যা।

৩. আজকের লেখাটি শেষ করব বাঙালির পরম আশ্রয়স্থল রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করে। উদ্ধৃত করব তাঁর অমর সৃষ্টি সেই ছোট্ট কবিতাটির শেষ স্তবক : কণ্ঠ আমার রুদ্ধ আজিকে, বাঁশি সংগীতহারা,/অমাবস্যার কারা/লুপ্ত করেছে আমার ভুবন দুঃস্বপ্নের তলে। /তাই তো তোমায় শুধাই অশ্রুজলে—/যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,/তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?। (কাব্যগ্রন্থ : পরিশেষ। কবিতা : প্রশ্ন। রচনাকাল : পৌষ ১৩৩৮)।

লেখক : সাবেক সচিব, কবি

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com