সেই ২০২০ সালের ২৭ শে ফেব্রুয়ারী টোটাল টিম নিয়ে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পারফর্ম করেছিলাম। প্রিয় ভাই বন্ধু সোহেল মেহেদী’র এসএসসি ৯৩ ব্যাচের রি-ইউনিয়নে আবার একটা শো করার সুযোগ পেলাম এই ১৭ই ডিসেম্বরে। ঝিনাইদহের জোহান পার্কে এই শো’টা ছিল আমার দম চেক এর চ্যালেন্জ। রেকর্ডিং আর প্রোগ্রামে বিস্তর ফারাক সবসময়। বেসিক ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে তৈরী শিল্পী আর আমার মত হঠাৎ শিল্পীর প্রিপারেশনেও আত্মবিশ্বাসের ব্যাপারটা আমি নতমস্তকে স্বীকার করি। দীর্ঘদিন পর নিজের টিম মেটদের সাথে শো করার এক্সাইটমেন্টটা ছিল আলাদা। দেশব্যাপী চলমান হাজার কোটি টাকার সাংস্কৃতিক উৎসবে আমিই একমাত্র আফসোসহীন বেকার শিল্পী।
আরিচার পদ্মা পার হতে হবে, এপারে মানিকগন্জ ওপারে রাজবাড়ী। ফেরী পার হতেই মনে পরলো তিনটা মেয়ের কথা, ওদের বাড়ী ছিল গোয়ালন্দ ঘাট সংলগ্ন এলাকায়।ও প্রিয়া হিট হওয়ার পর তিন বান্ধবী মিলে আমাকে চিঠি লিখেছিল। আমিও উত্তর দিয়েছিলাম, তাদের ঠিকানা আজো আমার পুরনো ডায়রীতে লেখা আছে। এক অদ্ভূত নষ্টালজিয়া কাজ করছিলো মনে। ফরিদপুর থেকে মাগুরা প্রবেশের আগেই গড়াই নদীর অপরুপ সৌন্দর্যে আবারও মুগ্ধ হলাম। এক রাস্তার ছোট্ট শহর মাগুরায় গিয়ে বিশ্বসেরা সাকিব আল হাসানের বীরত্বের গন্ধ শুঁকতে চাইলাম। কেউ একজন বললো- মাগুরা খুব ছোট একটা জেলা। আমি হাসলাম মনে মনে- যেখানে সাকিবের মত বিশ্বসেরার জন্ম সেই জেলা ছোট হলেও চন্দন কাঠের মতই চির সুগন্ধী হয়ে থাকবে ইতিহাসের পাতায়।
পৌঁছে গেলাম ঝিনাইদহ জোহান পার্কে, ওখানেই শো। নানা কারনে ঘুমহীন ৩৬ ঘন্টার ক্লান্তি গ্রাহ্য করিনি একটা লাইভ শো’তে সুযোগ পাওয়ার আনন্দে। ফেসবুকে মাইকিং করিনি, কারন ক্ষমতাসীন শুভাকাঙ্খীরা কনসার্টটা বন্ধ করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। এটাই আমার শেষ পনেরো বছরের অলিখিত নিয়তি। একটু বিশ্রাম শেষে উদ্দামতা নিয়ে গাইলাম গান। আমার দল দি এ টিম এর মেম্বাররা জোশ বাজালো অনেক দিনের স্টেজ শো’র অতৃপ্তি কাটিয়ে। ভেবেছিলাম আমার স্টেজে গাওয়ার দিন হয়তো শেষ। আমরা’ ৯৩ ব্যাচ ঝিনাইদহের বন্ধুদের কনসার্ট করে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেলাম আবার, ফুরিয়ে যাইনি এখনো। যারা আমাকে অপাংক্তেয় ভাবছে তাদের চিন্তার বলিরেখা শুধু বড় হতেই থাকবে দিনে দিনে। বাংলাদেশের গায়ক আমি, রাজনীতির বিষবাষ্প আমাকে ছুঁয়ে গেলেও ভষ্ম করতে পারেনি। ঝিনাইদহ শহরটার সাথে আমার ভালবাসা ১৯৮৮ সাল থেকে, অনূর্ধ – ১৬ ন্যাশনাল ক্রিকেট খেলতে গিয়েছিলাম। বোলার হিসেবে জীবনের প্রথম হ্যাট্রিক ঐ শহরের ষ্টেডিয়ামটায়। আনন্দ নিয়ে ফিরেছি ঝিনাইদহ থেকে, যদিও একটু লুকিয়ে কমান্ডো স্টাইলে যেতে হয়েছে। গাইতে তো পেরেছি !! এই আনন্দে বাঁচবো আরো কটা দিন ইনশাআল্লাহ। ভালবাসা অবিরাম…
লেখক-
তরুন প্রজন্মের অন্যতম বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী
আসিফ আকবর