রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গতকাল শুক্রবার আবারও করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। লিভারের সমস্যার পাশাপাশি ফুসফুস ও কিডনির জটিলতা দেখা দেওয়ায় এবং শ্বাসকষ্টের আশঙ্কা থাকায় মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তাঁকে সিসিইউতে নেন। আড়াই ঘণ্টা পর তাঁকে কেবিনে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
জানা যায়, খালেদা জিয়ার অসুস্থতার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, এফ এম সিদ্দিকী, আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ অন্যরা। তাদের উপস্থিতিতে বিএনপি চেয়ারপারসনের এমআরআই, সিটি স্ক্যান, আলট্রাসোনোগ্রাম, ইসিজিসহ বেশ কিছু পরীক্ষা করা হয়। দলীয় প্রধানের শারীরিক অবস্থার অবনতির ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর একইভাবে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে নেতাকর্মীর মধ্যে। বিভিন্ন মাধ্যমে তারা চেয়ারপারসনের খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করেন। অবস্থার একটু উন্নতি হলে চিকিৎসকসহ সবার মধ্যেই স্বস্তি ফিরে আসে বলে জানান নেতাকর্মীরা।
এর আগে রোববার গভীর রাতে হঠাৎ অক্সিজেন কমে যাওয়ায় খালেদা জিয়াকে দ্রুত সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। প্রায় আট ঘণ্টা পর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে পরদিন সকালে ফের তাঁকে কেবিনে আনা হয়।
মেডিকেল বোর্ডের এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার লিভার সিরোসিসের অবস্থা গুরুতর। এখন লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া আর কোনো পথ নেই। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাঁকে বিদেশে নেওয়া দরকার।
খালেদা জিয়ার অবস্থা ‘সংকটজনক’ জানিয়ে তাঁকে দ্রুত বিদেশে পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল এক সমাবেশে তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। তাঁর যদি সুচিকিৎসা না হয়, তাকে যদি বিদেশে পাঠানো না হয়, তাহলে তাঁর অবস্থার আরও অবনতি ঘটতে পারে।
চিকিৎসার জন্য কারাবন্দিদের বিদেশে পাঠানোর নজির আছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, সব বন্দিকে চিকিৎসা দিতে হবে এবং চিকিৎসার জন্য যদি প্রয়োজন হয় তাঁকে বিদেশেও পাঠাতে হবে।
বিএনপি নেতারা জানান, বিদেশে চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে সম্প্রতি আবেদন আবেদন করা হয়। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে তা নাকচ করে দেওয়া হয়। তবে যে কোনো উপায়ে দলীয়প্রধানের মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার দাবিকে বাস্তবায়ন করতে চান নেতাকর্মীরা।
চায়ের আমন্ত্রণের বিপরীতে মুক্তির দাবি
প্রধানমন্ত্রীর চায়ের আমন্ত্রণের বিপরীতে খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার শর্ত জুড়ে দিয়েছেন বিএনপি নেতারা। যুক্তরাষ্ট্রের জ্যাকসন হাইটসে গত বৃহস্পতিবার বিএনপির বিক্ষোভ চলাকালে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সেখানে অবস্থানরত যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিককে চায়ের আমন্ত্রণ জানান। জবাবে মালিক জানিয়েছেন, তাঁর নেত্রী মুমূর্ষু। এ অবস্থায় তাঁকে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা নিলে তিনি এবং তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চা খাবেন।
দোয়া মিলাদ
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় সারাদেশে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। বাদ জুমা এ কর্মসূচি পালিত হয়। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের উদ্যোগেও আলাদা প্রার্থনার আয়োজন করা হয় এ দিন।
খালেদা জিয়ার মুক্তি চায় বাংলাদেশ জাসদ
মানবিক কারণে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ জাসদ। গতকাল দলটির সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া ও সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান এক বিবৃতিতে এই অনুরোধ জানান।
নেতারা বলেন, খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর জীবন সংকটাপন্ন। তিনি কারাগারে প্রায় আড়াই বছর এবং পরে সাড়ে তিন বছর শর্ত মেনে বাড়িতে আছেন। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তাঁকে মুক্তি দেওয়া প্রয়োজন। সরকারকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানান তারা।