ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সংসদীয় আসনের খসড়া সীমানা নিয়ে দাবি-আপত্তি শুনানিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া- ২ ও ৩ আসনের পক্ষে-বিপক্ষে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতি ও ব্যাপক হট্টগোল হয়েছে। বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার সমর্কথদের সঙ্গে প্রতিপক্ষের সমর্থকদের এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। শুনানি থেকে বেরিয়ে রুমিন ফারহানা বলেছেন, ‘যেটা ১৫ বছরে হয়নি সেটা আজ হয়েছে। আমার গায়ে ধাক্কা দিয়ে আমাকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। যে বিএনপির নেতাকর্মীদের জন্য ১৫ বছর লড়াই করলাম, তারা এখন আমাকে ধাক্কা দেয়। নির্বাচনের আগে সীমানা নিয়ে নিজের দলে এমন পরিস্থিতি হলে নিবার্চনে কী হবে অনুমেয়।’
আজ রোববার দুপুর ১২টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবন মিলনায়তনে এই শুনানি শুরু করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনাররা উপস্থিত ছিলেন। প্রথমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ৩ আসন নিয়ে শুনানি শুরু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর সোয়া ১২টার দিকে শুনানিতে অংশ নিয়ে বিএনপির রুমিন ফারহানা ইসির প্রকাশিত খসড়ার পক্ষে তার যুক্তি তুলে ধরেন। এরপর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিএনপি নেতা খুর্শিদ আলম, অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম ও অ্যাডভোকেট ইমাম হোসেনসহ অন্যান্য বেশ কয়েকজন খসড়ার বিপক্ষে তাদের অবস্থান তুলে ধরেন। খসড়ার বিপক্ষে থাকা নেতারা শুনানিতে অংশ নিয়ে বলেন, বিজয়নগর উপজেলা থেকে তিনটি ইউনিয়ন (বুধস্তি, চান্দুয়া ও হরষপুর) ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে যুক্ত করা হয়েছে। তারা উপজেলা অখণ্ড চায়। এ নিয়ে তর্ক বিতর্কের এক পর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
আগামী নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের বিএনপির প্রার্থী ও সাবেক এমপি রুমিন ফারহানা শুনানি থেকে বেরিয়ে দুপুর ২টার দিকে সাংবাদিকদের বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার হলো- এখানে একটি মারামারি হয়েছে। আমি যেহেতু একজন আইনজীবী, আমি মনে করেছি, আমার কেস আমি নিজেই প্রেজেন্ট করব। সো, আমার কেস আমি প্রেজেন্ট করেছি।’
তিনি বলেন, ‘… ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ এর যিনি প্রার্থী, তিনি ২০/২৫ জন মিলে গুন্ডা পান্ডার মতো আচার আচরণ করেছেন। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক, অত্যন্ত লজ্জাজনক। আমি মনে করি, এটা কমিশনের যে গাম্ভীর্য এবং যে সম্মান সেইটার সঙ্গে এটা যায় না।’
এদিকে হাতাহাতি চলাকালে উপস্থিত এনসিপি কর্মীদের ওপরও হামলা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এ সময় এনসিপির তিন জন আহত হয়েছেন বলেও অভিযোগ করা হয়। তারা হলেন- এনসিপি নেতা প্রকৌশলী আমিনুল হক চৌধুরী, মুস্তফা সুমন ও আতাউল্লাহ।
এনসিপির নেতা প্রকৌশলী আমিনুল হক চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘রুমিন ফারহানার লোকজন আমাদের আক্রমণ করেছেন। আমরা যারা এনসিপি করি তাদের ওপর ব্যাপক আক্রমণ করা হয়েছে। আমাদের অপরাধ হলো- আমরা দাবি নিয়ে ইসিতে এসেছি। এই কারণে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সামনে আমাদের পেটানো হয়েছে।’
এ বিষয়ে রুমিন ফারহানার কাছে এনসিপির নেতাকর্মীদের পেটানোর প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘তারা কি এনসিপি-জামায়াত ছিল, নাকি গুন্ডা-মাস্তান ছিল সেটা আমরা দেখিনি।’
বাইরেও হট্টগোল
প্রথম দিনের শুনানি চলাকালে নির্বাচন ভবনের বাইরেও ব্যাপক হট্টগোল হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সদস্যরা বিক্ষোভকারী একটি দলকে গেটের সামনে থেকে সরিয়ে দেন। নির্বাচন ভবনের সামনে জলকামানও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
রোববার শুনানির শুরুতে সিইসি স্বাগত বক্তব্য রাখার পর শুনানিকালে সাংবাদিকদের থাকতে বললেও ক্যামেরা রাখতে অডিটোরিয়ামে অনুমতি দেওয়া হয়নি।