শনিবার, ০৮:০৪ অপরাহ্ন, ০৯ অগাস্ট ২০২৫, ২৫শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

কয়েদিরা পাচ্ছেন ধর্মীয় বই, কারাগারে প্রতি ওয়ার্ডে নামাজের ব্যবস্থা-ধর্ম উপদেষ্টা

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৯ আগস্ট, ২০২৫
  • ২ বার পঠিত

ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, দেশের ৬৮টি কারাগারে প্রায় ৭০ হাজার কয়েদি ও হাজতিকে নৈতিকতা শিক্ষা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের তুলে ধরতে গিয়ে এ কথা বলেন উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ শিক্ষা দেওয়ার জন্য ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নামাজের ব্যবস্থা, নৈতিকতাভিত্তিক বইপুস্তক ও জায়নামাজ বিতরণসহ নানা কর্মসূচি শুরু করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, কারাগারে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী কয়েদিরাও নিজ ধর্মচর্চা ও ধর্মীয় গ্রন্থ অধ্যয়নের সুযোগ পাচ্ছেন। অল্প দিনের মধ্যেই প্রথম কিস্তিতে বিপুল সংখ্যক ধর্মীয় বই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তর করা হবে।

সম্প্রতি চট্টগ্রাম ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শন করেন ধর্ম উপদেষ্টা। তিনি বলেন, আগে কারাগারে নৈতিকতা শিক্ষা দেওয়ার তেমন কোনো উদ্যোগ ছিল না। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই কারাবন্দীদের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টির কাজ শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে কেরানীগঞ্জ কারাগারে ২ হাজার ৫০০ বন্দী পবিত্র কুরআন শিক্ষাগ্রহণ করেছেন।

ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, কারাগারে বন্দীদের মধ্যে নৈতিকতা ও আদর্শ মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে, যাতে তারা কারাগার থেকে বের হয়ে সুষ্ঠু ও ভালো জীবনযাপন করতে পারে। এ জন্য প্রত্যেকের নিজ নিজ ধর্মীয় শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে।

তিনি আরও জানান, কারাবন্দীদের মানবাধিকার রক্ষায় সরকার সবসময় সচেষ্ট রয়েছে। ইসলামি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে কারাগারে লাইব্রেরি পরিচালনা ও ধর্ম শিক্ষা প্রদান কার্যক্রম চলছে।

ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, কারাবন্দীরা যার যার ধর্ম অনুযায়ী শিক্ষা নিলে মনীষীদের জীবন থেকে নৈতিকতা, আদর্শ ও মূল্যবোধ অর্জন করতে পারবে। এজন্য বই বিতরণ ও শিক্ষক নিয়োগ বাড়ানো হবে। বর্তমানে ইসলামি ফাউন্ডেশনের একজন শিক্ষক কারাগারে এ সংক্রান্ত কাজ করছেন। আগামীতে এ সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘কারাগারে থাকা সবাই অপরাধী নয়, অনেকেই মিথ্যা মামলায় বন্দী। তাই আদালতের রায় না আসা পর্যন্ত কাউকে দোষী বলা যায় না। আমরা কারাগারকে প্রকৃত অর্থে সংশোধনাগার হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’

ধর্ম উপদেষ্টা জানান, এ বছর নির্বিঘ্ন হজ পালনের পাশপাশি সাশ্রয় হয়েছে খরচও। ফলে সরকারের পক্ষ থেকে ৮ কোটি ২০ লাখ টাকা ফেরত পেয়েছেন সরকারি হজযাত্রীরা। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সহযোগিতায় এবারের হজ ব্যবস্থা বিশ্বের সেরা হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে।

ড. খালিদ বলেন, বাংলাদেশিদের সুষ্ঠুভাবে হজ পালনে মন্ত্রণালয় ছাড়াও ৮৭ হাজার ১০০ জন হাজীরও অবদান রয়েছে। কারণ তারা সৌদি আরবে নিয়ম মেনে হজ পালন করেছেন।

গত এক বছরে ধর্ম মন্ত্রণালয় মসজিদ-মাদ্রাসায় অনুদান দিয়েছে। হাজারো মক্তবে ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান ছাড়াও ব্যাপক ওয়াকফ সম্পত্তিও উদ্ধার করেছে।

ধর্ম উপদেষ্টা জানান, রাজনৈতিক চাপ না থাকার কারণে সরকারের নিয়ম মেনে সেবা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছেন।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে যাকাত ফান্ড থেকে অসহায়, দরিদ্র ও অসুস্থদের মধ্যে প্রায় ১১ কোটি টাকা আর্থিক সাহায্য ও অনুদান দেওয়া হয়েছে। ইমাম মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে ৪ হাজার ৬২০ জনকে ৫ হাজার টাকা করে ২ কোটি ৩১ লাখ টাকা অনুদান এবং ৬০০ জনকে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা সুদমুক্ত ঋণ দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, হাওর এলাকায় জনগণের জীবনমান উন্নয়ন ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণে ইমামদের মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এর যার মাধ্যমে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদকাসক্তি, নারী ও শিশু নির্যাতন, মানবপাচার, যৌতুক ও বাল্যবিবাহরোধে কাজ চলছে।

ধর্ম মন্ত্রণালয় এ বছর ধর্মীয় উপাসনালয়ের সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য ২ হাজার ৯৬৪টি মসজিদে ১৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা, ১০৪৩টি মাদ্রাসা ও এতিমখানায় ৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা এবং ৭৩৩টি ঈদগাহ ও কবরস্থানে ৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছে।

হিন্দু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ৩০৭টি মন্দিরে ১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, ৫৭টি শ্মশানে ২৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা, বৌদ্ধ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ১১২টি প্যাগোডায় ৫৬ লাখ টাকা ও ২৯টি বৌদ্ধ শ্মশানে ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা, খ্রিস্টান ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ২৯টি গীর্জায় ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ১টি সেমিট্রিতে ৫০ লাখ টাকা সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ৩ হাজার ১৪০ জন দুস্থকে ৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছে।

‘নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ উন্নয়নে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম’ শীর্ষক প্রকল্পটি গত ২৪ মে একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। এর আওতায় প্রায় ১ কোটি ৪৫ লাখ শিক্ষার্থীকে কুরআন শিক্ষা, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ও বয়স্ক শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ৭৬ হাজার ৬৭০ জন ইমাম, মুয়াজ্জিন ও শিক্ষিত নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হয়েছে।

ধর্ম উপদেষ্টা জানান, ওয়াকফ এস্টেটের মোতাওয়াল্লী ও পরিচালনা কমিটির মেয়াদ সংক্রান্ত সেবা ম্যানুয়াল থেকে স্বয়ংক্রিয় (অটোমেটেড) সিস্টেমে রূপান্তর করার কাজ চলছে। এই সিস্টেম চালু হলে অনলাইনে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে এবং ওয়াকফ সম্পত্তির তথ্য মনিটরিং সহজ হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com