আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন।
শনিবার (৯ আগস্ট) বিকেলে তিনি এ তথ্য জানান।
এর আগে শনিবার সকালে রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, নির্বাচন সিস্টেমের ওপর মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে। মানুষকে কেন্দ্রে নিয়ে আসা একটা বড় চ্যালেঞ্জ।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনাটা আমাদের জন্য সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ হয়েছে দাঁড়িয়েছে। এ দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে এই বিশ্বাস স্থাপন করা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে গেছে।
মানুষ ভোটকেন্দ্র বিমুখ হয়ে পড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানুষ তো ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার অভ্যাসটাই ভুলে গেছে আসলে। ভোটের দিন ছুটি থাকে, আমি ঘুমাই—কারণ আমি না গেলেও তো ভোটটা কেউ না কেউ দিয়ে দেবে। এই রকম একটা মন মানসিকতা ছিল। মানুষকে ভোটকেন্দ্রমুখী করা এবং সবাইকে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নির্বাচনে চ্যালেঞ্জ কী, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেগুলো দৃশ্যমান চ্যালেঞ্জ সেগুলো নিয়েই বলব। প্রথমে আইনশৃঙ্খলা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে জুলাই আন্দোলনের পর থেকে দেশে যে বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল সেদিক থেকে চ্যালেঞ্জ তো অবশ্যই আইনশৃঙ্খলার। তারপরেও আমি বলব- আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি গত বছরের ৫ আগস্টের পরে অনেক উন্নতি হয়েছে। চ্যালেঞ্জের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও মোকাবিলা করতে পারব।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো হয়েছে। আমার বিশ্বাস নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে অবস্থার আরও উন্নতি হবে। আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সবাইকে নিয়ে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করতে চাই যেখানে মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে নির্ভয়ে পছন্দের প্রার্থীকে মানুষ ভোট দিতে পারে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারকে বড় সমস্যা উল্লেখ করে সিইসি বলেন, অস্ত্রের চেয়ে মারাত্মক হয়ে দাঁড়িয়েছে এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এআই ও সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে মানুষের ছবি দিয়ে বক্তব্য বানানো হচ্ছে, যা সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে না। রাতে শুয়ে যখন সময় পায় তখন মোবাইলে দেখে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনূস কিংবা আমার অথবা বিভিন্ন নেতার বক্তব্য। যার সম্পর্কে বলছে সেও জানে না, যিনি বলছেন তিনিও আসল না।
তিনি বলেন, এটা মোকাবিলা কীভাবে করা যায়, আমরা তা নিয়ে ভাবছি। সোশ্যাল মিডিয়ায় এ ধরনের খবর এলে যাচাই-বাছাই না করেই এক-দুই হাজারবার শেয়ার হয়ে যায়। যার সম্পর্কে দেওয়া হয়, তার ‘বারোটা’ বেজে যায়।
সিইসি বলেন, প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারদের মধ্যে একটা পরিবর্তন আসবে। সব জায়গায় যে শিক্ষকদের দিয়ে করাব এমন নাও হতে পারে। আমরা বিকল্প চিন্তা করছি। এখন মানুষ তো বিদেশ থেকে আমদানি করে নির্বাচন করতে পারা যাবে না। দেশের মানুষ দিয়েই তো করতে হবে। ওই লোকগুলোকে এদিক-ওদিক করে করতে হবে। এখন ওদেরকে নিয়ে আগাতে হবে। এ দেশে আগেও তো সুন্দর নির্বাচন করেছি। মানুষ যদি দেখে এখানে ধান্দাবাজি নেই, মানুষ যদি বুঝতে পারে এরা সত্যিকার অর্থে একটা সুন্দর নির্বাচন দিতে চায় তাহলে দেখবেন মানুষ আপনাদের সঙ্গে আছে।
সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনকে নিজের ইমানি দায়িত্ব উল্লেখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমরা জাতির কাছে ওয়াদাবদ্ধ। আমি এবং আমার সহকর্মীরা এটাকে ইমানি দায়িত্ব হিসেবে নিয়েছি। আমার সিদ্ধান্ত কারো পক্ষে-বিপক্ষে যেতে পারে। কিন্ত এটা আমার কারণে নয় এটা আইন কানুনের জন্য। যতক্ষণ আমার হুঁশ আছে ততক্ষণ আমি কারো পক্ষে নই বরং নিরপেক্ষভাবে কাজ করব।
আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. দুলাল তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ অঞ্চলের নির্বাচন কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন।