শুক্রবার, ০১:০৯ পূর্বাহ্ন, ০১ অগাস্ট ২০২৫, ১৭ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

গাজায় ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি, নিহত ৫৪

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫
  • ২ বার পঠিত

গাজার উত্তরে জিকিম সীমান্ত ক্রসিং-এর কাছে ত্রাণ সামগ্রীর জন্য অপেক্ষমাণদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৫৪ ফিলিস্তিনি নিহত ও ৪০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। হামাস-শাসিত গাজার আল-শিফা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছে।

সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়, এক ভিডিওতে দেখা যায়— গুলিবিদ্ধ মানুষগুলোকে গরুর গাড়ি ও ট্রলিতে করে আল-শিফা হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।

গাজার হামাস-শাসিত সিভিল ডিফেন্স সংস্থা জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী ত্রাণ বহনকারী ট্রাকের চারপাশে জড়ো হওয়া জনতার ওপর গুলি চালিয়েছে।

তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এ ঘটনায় হতাহতের বিষয়ে ‘কোনো তথ্য নেই’ বলে জানিয়েছে। ইসরায়েলি সশস্ত্র বাহিনী (আইডিএফ) দাবি করেছে, তারা ‘সতর্কতামূলক গুলি’ ছুঁড়েছে এবং কোনো হতাহতের খবর তাদের জানা নেই।

এক বিবৃতিতে তারা জানায়, উত্তর গাজায় ত্রাণ ট্রাকের আশপাশে বহু মানুষ জড়ো হয়েছিল এবং সেনা সদস্যদের খুব কাছাকাছি ছিল। হুমকির মুখে সতর্কতামূলক গুলি চালানো হয়, কিন্তু জনতার উদ্দেশে নয়।

ঘটনাটি ঘটেছে গাজা সিটির উত্তরে, যেখানে মানুষ ত্রাণ নেওয়ার জন্য জড়ো হয়েছিল।

আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ আবু সালমিয়া জানান, তার হাসপাতালে অন্তত ৩৫টি মরদেহ আনা হয়েছে। জিকিম ক্রসিং পয়েন্ট থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার (দুই মাইল) দক্ষিণ-পশ্চিমে, যেখানে গাজায় সহায়তা বহনকারী ট্রাক প্রবেশ করে, সেখানে ক্রমাগত গুলির এই ঘটনা ঘটেছে ।

গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থা জানায়, বুধবার রাতে অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছে। ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, গাজার আল-সারায়া ফিল্ড হাসপাতাল ও আল-কুদস হাসপাতালে মোট ৬ জন মৃত ও ২৭৪ জন আহত ব্যক্তিকে আনা হয়েছে।

একজন প্রত্যক্ষদর্শী বিবিসিকে বলেন, ‘আমার পরিচিত এক কিশোর মাথার মাঝখানে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। সে কোনো অস্ত্র বহন করছিল না, শুধু ময়দা আনতে গিয়েছিল। সে ফিরে এলো সেই ময়দার বস্তার ভেতরে করে।’

অন্য একজন জানান, তার আত্মীয় আবু তাহা আল-কাফারনেহও নিহত হন, যিনি পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। ‘সে কোনো লুটেরা ছিল না, শুধু নিজের পরিবারের খাবারের জন্য ময়দা আনতে গিয়েছিল,’ তিনি বলেন।

এই ঘটনার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বৃহস্পতিবার ইসরায়েলে পৌঁছেছেন। তিনি ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি আলোচনার বিষয়ে আলোচনা করবেন বলে জানানো হয়েছে।

উইটকফ সম্প্রতি দোহায় অনুষ্ঠিত ইসরায়েল-হামাসের পরোক্ষ আলোচনা প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন, তবে গত সপ্তাহে ওই আলোচনা ভেস্তে যায় এবং ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রতিনিধি দল প্রত্যাহার করে নেয়।

এক মার্কিন কর্মকর্তা জানান, ‘উইটকফ ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে গাজা পরিস্থিতি নিয়ে পরবর্তী করণীয় বিষয়ে আলোচনা করবেন।’

এদিকে, জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সংস্থা জানিয়েছে, ইসরায়েলের ঘোষিত ‘কৌশলগত বিরতির’ চার দিন পেরিয়ে গেলেও খাদ্য সংকট আরও গভীর হয়েছে। মানুষ এখনো ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে মারা যাচ্ছে। যেসব মানুষ ত্রাণ সংগ্রহ করতে যাচ্ছেন, তারাও প্রাণ হারাচ্ছেন।

বুধবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, আরও ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে অপুষ্টিজনিত কারণে, যেটি নিয়ে এখন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫৪ জনে। জাতিসংঘ সমর্থিত খাদ্য নিরাপত্তা পর্যবেক্ষকরা মঙ্গলবার সতর্ক করে বলেন, ‘সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির দুর্ভিক্ষ এখন বাস্তবে পরিণত হচ্ছে।’

জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজায় ‘মানবসৃষ্ট গণ-অনাহার’ চলছে এবং এর জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে। তবে ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা ত্রাণ প্রবেশে কোনো বাধা দিচ্ছে না এবং ‘গাজায় কোনো দুর্ভিক্ষ নেই।’

চার দিন আগে ইসরায়েল প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা করে তিনটি এলাকায় ‘কৌশলগত বিরতি’ এবং ‘নির্ধারিত মানবিক করিডর’ চালু করার ঘোষণা দেয়, যাতে জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থা ত্রাণ সংগ্রহ ও বিতরণ করতে পারে। কিন্তু জাতিসংঘ বলছে, এই বিরতির মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ত্রাণ সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com