বিএনপি, ছাত্রদল যুবদল সেচ্ছা সেবক দলের নেতাদের সতর্ক করে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা, বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনের সাবেক সাংসদ জননেতা এম. জহির উদ্দিন স্বপন বলেছেন, আমাদের দলকে লক্ষ করে, আমাদের নেতা তারেক রহমানকে লক্ষ করে একটা গভীর ষড়ন্ত্র শুরু হয়েছে। আমাদের দলের বিরুদ্ধে, আমাদের নেতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। চক্রান্ত চলছে।
ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় ছোট খাট অপরাধ যখন বিভিন্ন যায়গাতে হয় তখন তার জন্য আসামীর কাঠগড়ায় দাড় করা হয় আমাদের নেতা তারেক রহমানকে। এই গৌরনদী বাসষ্টান্ডে ছাত্রদলের কোন অবুঝ নেতা যদি কোন অপরাধ করে হাসপাতালের সামনে যুবদলের কোন অবুঝ নেতা যদি হাসপাতালের সামনে অপরাধ করে সেটার দায় দায়িত্ব সোস্যাল মিডিয়াতে তারা তারেক রহমানের ঘাড়ে চেপে দিতে চায়। গনমাধ্যমের সংবাদ জোগার করে সোস্যাল মিডিয়াতে একযোগে তারা ঝাপিয়ে পড়ে।
গতকাল বুধবার সকাল ১১টায় উপজেলা সদরের গৌরনদী বাসষ্ট্যান্ড অডিটরিয়ামে ফ্যাসিবাদের ১৫ বছরে নিহত জুলাই-শহীদসহ সকল শহীদদের স্মরন সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে তিনি এ কথা বলেন।
সোস্যাল মিডিয়ার উদাহরন টেনে তিনি আরও বলেন, আগৈলঝাড়ায় ছাত্র দলের অমুক নেতা এটা করেছে। বাগধায় যুবদলের ছেলে ওইটা করেছ। গৌরনদীতে ওইটা করেছ্।ে এতএব ছাত্রদল, যুবদল, সেচ্ছাসেবক দল আমি আপনাদেরকে বারবার সতর্ক করছি। কারো আমরা বাবার পরিচয়ে কিন্তু এই সমাজে কর্তৃত্ব-নেতৃত্ব দেইনা।
দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদেরকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আয়নার সামনে দাড়িয়ে আত্ন জিজ্ঞাসা করবেন আমি কে ? কে আমি ? আপনি একটা দলের পরিচয় দেন ওই টুকুই আপনার শক্তি, ওই টুকুই আপনার ক্ষমতা। বাধ্য করবেন না আপনার দলকে সেই পরিচয় টুকু উঠিয়ে নিতে।বাংলাদেশের সিভিল সার্ভিস করিশনের পরীক্ষা থেকে শুরু করে সমস্ত ধরনের পরীক্ষাকে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার দলীয়করন করেছিল। ফলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হতাশ ছিল। তারা ভবিষ্যতকে অন্ধকার দেখত। অতএব বেচে থাকতে হলে তার অধীকারসহ বেঁচে থাকতে হবে। তা না হলে সে বেঁচে থাককে চায় নাই। এই কারনেই সুন্দর বাংলাদেশ নির্মান করার জন্য তারা সে দিন বুক চেতিয়ে গুলি নিয়েছিল। শহীদ আবু সাঈদের ছবিটা দেখেন। দেখেন কিভাবে দুই হাত তুলে বুকের মধ্যে বুলেট গ্রহন করছে।
সাহস কাকে বলে যারা গুন্ডা, যারা মাস্তান, যারা গডফাদার তারা দেখে নেন সাহস কাকে বলে। দেখেন আবু সাঈদের ছবি। আবু সাঈদ এই যে, সাহসের সঙ্গে বুকে গুলি নিচ্ছে তার পেছনে কি কোন গডফাদার আছে ? সে কি কারো মদদে, কোন দলের মদদে, কোন পুলিশ কর্মকর্তার মদদে, কোন ধনী আত্নিয় স্বজনের মদদে, কোন এমপি মন্ত্রীর মদদে কি এই সাহস দেখিয়েছে? তার সততা দেশপ্রেম থেকে এই সাহস দেখিয়েছে। অতএব আমাদের মধ্যে যারা ঔধ্যত্ব দেখান, যারা দলের নামে ক্ষমতা দেখান, তারা শিখে নেন, আপনারা যেটা দেখান ওটা হল ধনী লোকদের বাড়িতে পালা কুকুরের। যারা ঔধ্যত্বপূর্ন আচরন করেন দলের ক্ষমতা নিয়ে আমি তাদেরকে সতর্ক করতে চাই এবং তাদেরকে আবু সাীদের কাছ থেকে শিক্ষা নিতে বলি। তাকিয়ে দেখেন এই শহীদ পরিবাররা ওই সাহসের কারনে বাকী জীবন তাদেরকে কি পরিমান খেসারাত দিতে হবে। আর সুফল ভোগ করব আমরা। আমার জীবন ছিল অনিশ্চিত। এই শহীদদের কারনে আজকে আপনাদের সামনে দাড়িয়েছি। আপনারা এই উপজেলায় আসতে পারতেন ? এই শহীদদের কারনে আজকে এখানে এসেছেন, রাজনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছেন, ব্যবসা বানিজ্য করতে পারছেন, ঠিকাদারী করার চেষ্টা করছেন।
আমরা জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে বাংলাদেশকে নিয়ে স্বাধীনতার চেতনায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় পথ চলতে শুরু করেছিলাম। আমরা বিশ্বাস করেছিলাম জনগন সিদ্ধান্ত নেবে যে, রাজাকারদেরকে আর কখোনো তারা ভোট দেবে কি দেবে না। এটার জন্য আমরা রাষ্টকে ব্যারহার করতে চাই নাই। কিন্তু সেই স্বপ্নকে শেখ হাসিনা ব্যাবহার করেছে যারা ফ্যাসিবাদের বিরোধীতা করতে চায়, যারা গনতন্ত্রের পক্ষে লড়াই করতে চায়, সে তাদেরকে রাজাকার বলেছে। ইতিহাসে রাজাকাররা একভাবে পরিচিত, কিন্তু শেখ হাসিনা রাজাকার বলছে তার ক্ষমতার বিরোধীতা যে করবে, ফ্যাসিবাদের বিরোধীতা যে করবে, তারাই রাজাকার। আর সেই কারনেই সেই দিন আবু সাঈদ, মুগ্ধ তাদের সমস্ত নির্দলীয় ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্লোগান তুলেছিল তুমি কে, আমি কে, রাজাকার-রাজাকার। কে বলেছে, কে বলেছে, স্বৈরাচার-স্বৈরাচার। এই ভাবে সাধারন মানুষকে রাজাকার বলেছে স্বৈরাচার। অতএব স্বৈরাচারও ঘৃনিত, আর সৈরাচার মানুষকেও রাজাকারের মত ঘৃনিত শব্দ দিয়ে গালি দিয়েছে। এ জন্যই বিএনপি আজকে মনে কর বাংলাদেশে আজকে এক নতুন পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে, যেখানে রাজাকার আর স্বৈরাচার মিলে মিশে একাকার। শহীদ আবু সাঈদ আর আমাদের এই গৌরনদীর সন্তান, শহীদ ইমরান, শহীদ জামাল শহীদ ইলিয়াস, শহীদ সাগরকে হত্যা করেছে শেখ হাসিনার বাহিনী। র্যাবর পক্ষ থেকে গুম করে ক্রসফায়ারের নামে নাটক করে হত্যা করেছে টিপুকে, কবিরকে।
হাতের ইঙ্গিতে শোকার্ত পরিবারগুলোর সদস্যদেরকে দেখিয়ে তিনি বলেন, আমার দুই পাশে এই ৬টি শহীদ পরিবারের শোকার্ত সদস্যরা দাড়িয়ে আছে। তাদের নাবালক সন্তানরা দাড়িয়ে আছে। আমি জাতির পক্ষ থেকে বাংলাদেশর পক্ষ থেকে হাজার শহীদের পাশাপাশি গৌরনদী-আগৈলঝাড়ার এই ৬টি শহীদ পরিবারের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন ও শহীদদের আত্নার মাগফেরাত কামনা করছি এবং তাদের ভবিষ্যতে আমাদের সর্বোচ্য দায়িত্ব পালন করার শপথ উচ্চারন করছি। আমরা সকলে মিলে এই শহীদ পরিবারকে যথাযথ ভাবে সম্মান করব। যতদির বেচে থাকব শহীদ পরিবারগুলোর মর্যাদা আমরা অক্ষুন্ন রাখবো।
এর পরে দুপুর ১২টায় একই অডিটরিয়ামে গৌরনদী উপজেলা পৌর ও আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপির প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত হয়। গৌরনদী উপজেলা বিএনপির আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ সরোয়ার আলম বিপ্লব এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্সমর সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোঃ মিজানুর রহমান খান মুকুল, বক্তব্য রাখেন, আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক সিকদার হাফিজুর রহমান, গৌরনদী পৌর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক শরীফ শফিকুর রহমান স্বপন, বরিশাল উত্তর জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক মোঃ সাইয়েদুল আলম খান সেন্টু, গৌরনদী উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব শরীফ জহির সাজ্জাদ হান্নান, আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোল্লা বশির আহাম্মেদ পান্না, গৌরনদী উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক মোঃ বদিউজ্জামান মিন্টু, সাবেক ছাত্র নেতা মহিউদ্দিন বাদশা, গৌরনদী উপজেলা বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক মোঃ জাকির হোসেন রাজা, গৌরনদী পৌর বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক মোঃ কামরুজ্জামান খোকন, উপজেলা যুবদলের সদস্য মোঃ ফুয়াদ হোসেন এ্যানী, পৌর যুবদলের আহবায়ক মোঃ জাকির হোসেন বাচ্চু, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক মোঃ কামাল হোসেন বিপ্লব, উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মোঃ আল আমিন, সরকারি গৌরনদী বিশ্ব বিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি তানভীর আহম্মেদ ।