মঙ্গলবার, ০৫:১২ অপরাহ্ন, ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

যুক্তরাষ্ট্রের হাত ধরেই শুরু হয়েছিল ইরানের পরমাণু কর্মসূচি

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১ জুলাই, ২০২৫
  • ৭ বার পঠিত

নিঃসন্দেহে এ মুহূর্তে বিশ্ব রাজনীতির অন্যতম আলোচিত বিষয় হলো যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের সংঘাত। আর এই দ্বন্দ্বের পেছনে একমাত্র কারণ হলো, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি।

মূল বিষয় হলো, ইরানকে কোনোভাবেই পারমাণবিক অস্ত্রের মালিক হতে দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু সব থেকে অবাক করা তথ্য হলো, এই যুক্তরাষ্ট্রের হাত ধরেই শুরু হয়েছিল ইরানের পরমাণু কর্মসূচি। কিন্তু কীভাবে? কেনই বা যুক্তরাষ্ট্র সম্পূর্ণ ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে সেই ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলা করল?

১৯৫৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র একটি কর্মসূচি হাতে নেয়, যার উদ্দেশ্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর কাছে সীমিত পরিমাণ বিভাজনযোগ্য পদার্থ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া এবং পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণে সহায়তা করা।

এই কর্মসূচির প্রথম উপকারভোগী ছিল ভারত। এরপর একে একে দক্ষিণ আফ্রিকা, ইসরায়েল, তুরস্ক, পাকিস্তান, পর্তুগাল, গ্রিস, স্পেন, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল এবং ইরান—এই দেশগুলোও যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক সহায়তা পেতে শুরু করে। এ সম্পর্কিত ইতিহাস নিয়ে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, ইরান ওয়াচ, আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে।

১৯৫৭ সালের ৫ মার্চ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে একটি পারমাণবিক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তখন ইরানে শাসন করছিলেন শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভি। অ্যাটমস ফর পিস উদ্যোগের আওতায় সেই চুক্তি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ভিত্তি স্থাপন করে। ওয়াশিংটনের দৃষ্টিতে, ঠান্ডা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ইরান ছিল একটি কৌশলগত সম্পদ। ‘তৎকালীন সংরক্ষিত নথিপত্র অনুযায়ী, নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকা ইরানকে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ কৌশলের মূলভিত্তি হিসেবে দেখা হতো এবং অ্যাটমস ফর পিস কর্মসূচি ইরানকে পশ্চিমা জোটের প্রতি অনুগত রাখার একটি উপায় ছিল।’

১৯৬৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র তেহরানকে একটি পাঁচ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক গবেষণা চুল্লি সরবরাহ করে, যার সঙ্গে দেওয়া হয় উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম, যা চুল্লিটি চালাতে প্রয়োজন ছিল।

তিন বছর পর, অর্থাৎ ১৯৭০ সালে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি অনুমোদন করে। এই চুক্তির মাধ্যমে ইরান প্রতিশ্রুতি দেয় যে, তারা পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন বা উন্নয়নের চেষ্টা করবে না।

তবে এই চুক্তি ও ওয়াশিংটন-তেহরানের পারমাণবিক সহযোগিতা খুব বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ১৯৭৯ সালের ইরানে ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের পর সবকিছু বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এর প্রভাব থেকে যায় দীর্ঘকাল। যদিও প্রথমদিকে, আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির নেতৃত্বাধীন নতুন ইসলামী সরকার শাহের পারমাণবিক প্রকল্পগুলোকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে। সে সময় এই খাতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বহু অধ্যাপক দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।

তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইসলামী বিপ্লবের নেতৃত্ব বুঝতে শুরু করে পারমাণবিক প্রযুক্তির কৌশলগত গুরুত্ব। তারা শুধু দেশত্যাগী বিশেষজ্ঞদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে না; বরং নিজস্ব গোপন পারমাণবিক কর্মসূচিও শুরু করে।

বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতির খেলায় যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই পক্ষপাতের ভূমিকায় থেকেছে। ইসরায়েল গোপনে পারমাণবিক বোমা তৈরি করে ফেলল; কিন্ত তা দেখেও চোখ বন্ধ করে রেখেছিল যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে ইরানের বেলায় সম্পূর্ণ ভিন্ন চরিত্র দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com