বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও বিতর্কিত রাজনীতিক সাইফুজ্জামান চৌধুরীর যুক্তরাজ্যে থাকা একাধিক সম্পত্তি জব্দ করেছে দেশটির ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ)।
এ তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরার অনুসন্ধানী ইউনিট।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে যুক্তরাজ্য এই পদক্ষেপ নিয়েছে। সাইফুজ্জামান চৌধুরী বর্তমানে মানি লন্ডারিং (অর্থপাচার) মামলায় বাংলাদেশে তদন্তাধীন রয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন।
এক বিবৃতিতে এনসিএ জানায়, তারা একটি চলমান বেসামরিক তদন্তের অংশ হিসেবে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বেশ কিছু সম্পত্তি ফ্রিজ (অর্থাৎ বিক্রয় বা হস্তান্তরের ওপর নিষেধাজ্ঞা) করেছে। এর ফলে তিনি এসব সম্পদ বিক্রি করতে পারবেন না।
এই পদক্ষেপের সময় বাংলাদেশ সরকারের অন্তর্বর্তীকালীন নেতা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস লন্ডন সফরে ছিলেন।
আল জাজিরার পূর্ববর্তী প্রতিবেদনে বলা হয়, সাইফুজ্জামান চৌধুরী যুক্তরাজ্যে ৩৫০টির বেশি সম্পত্তির মালিক। এদের মধ্যে লন্ডনের অভিজাত এলাকা সেন্ট জনস উডে অবস্থিত একটি বিলাসবহুল বাসভবন রয়েছে, যার মূল্য ১ কোটি ১০ লাখ পাউন্ড (প্রায় ১৪.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)। এই বাসায় আল জাজিরার গোপন ক্যামেরায় ধারণকৃত সাক্ষাৎকারে চৌধুরী নিজের সম্পদের বিবরণ দেন এবং দামি ব্র্যান্ডের জুতা ও পোশাকের প্রতি আগ্রহের কথা জানান।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি শেখ হাসিনার ছেলের মতো। তিনি জানেন আমি এখানে ব্যবসা করি।’
চট্টগ্রামের একটি প্রভাবশালী পরিবার থেকে উঠে আসা চৌধুরী কীভাবে বাংলাদেশি আইনে বার্ষিক সর্বোচ্চ ১২ হাজার ডলার বৈদেশিক লেনদেন সীমার মধ্যে থেকে ৫০ কোটি ডলারের বেশি বিদেশে সম্পদ গড়ে তুলেছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। লন্ডন, দুবাই এবং নিউ ইয়র্কে তার যে সম্পদ রয়েছে, সেগুলোর কোনো ঘোষণা তিনি বাংলাদেশের কর দাখিলে দেননি।
২০২৪ সালের অক্টোবরে সম্প্রচারিত ‘দ্য মিনিস্টার্স মিলিয়নস’ নামের আল জাজিরার একটি ডকুমেন্টারিতে এসব তথ্য উঠে আসে।
২০২৪ সালের আগস্টে নিরাপত্তা বাহিনীর দমন-পীড়নে ছাত্র আন্দোলনে শত শত মানুষ নিহত হওয়ার পর শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। এরপর বাংলাদেশের নতুন প্রশাসন তার সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত শুরু করে।
চলমান তদন্তের মধ্যেই লন্ডনে তার বিলাসবহুল জীবনের ছবি তুলে ধরে আল জাজিরার অনুসন্ধানী দল। তারা দেখেছে, সাইফুজ্জামান চৌধুরী লন্ডনের অভিজাত এলাকায় অবসর সময়ে হাঁটাহাঁটি করছেন, যেখানে লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডও অবস্থিত।
চৌধুরী দাবি করেছেন, তার সম্পত্তি বৈধ ব্যবসা থেকে অর্জিত এবং রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন তিনি।