সোমবার, ১০:৫৪ অপরাহ্ন, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৮ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

মা-ছেলের জন্ম একই তারিখে, মরতে হলো একই দিনে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৫
  • ১৩ বার পঠিত

গাজার এক তরুণী। নির্মল পৃথিবীতে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখতেন। শান্ত ও নিরাপদ কোনো জনপদের এক নারীর মতোই আল্লাহর কাছে চাইতেন ‘এক সোনালি সংসার, স্বামী-সন্তান নিয়ে নির্বিবাদ এক জীবন’। তখন গাজার পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত ও স্থিতিশীল। ইসরায়েলের আগ্রাসনে চলছে ভাটা। এভাবে বুঝি কাটবে অন্তত আরও এক দশক। হয়তো বিশ্ব সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপে অদূর ভবিষ্যতে রক্তপাতহীন স্বাধীনতাও আসতে চলেছে। এমন স্থির গাজায় তাইতো নিজের দেহে ধারণ করেন আরেক দেহ।

সব কিছু স্বাভাবিকই চলছিল। স্বামী-স্বজনের ভালোবাসায় খুব একটা অসুবিধা হচ্ছিল না সেই তরুণীর। কিন্তু হঠাৎ যেন নরক থেকে উদয় হলো ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর। ইসরায়েলে হামাস হামলা করে বসল। শুরু হয়ে গেল ভয়াবহ যুদ্ধ। মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে সেই যুদ্ধ রূপ নিল একতরফা গণহত্যায়।

সেই তরুণী ভেবেছিলেন, নরকের দিন এক দিন শেষ হবেই। তাইতো বোমার আঘাতে ধসে পড়া ভবনের পাদদেশে অনাহারে থেকেও আগের মতো স্থির গাজায় সন্তান জন্মদানের স্বপ্ন দেখতেন।

দেখতে দেখতে ১০ মাস ১০ দিন কাটল। বোমার শব্দ থামল না। নরকের দিন শেষ হলো না। ঘনিয়ে এলো ২০ ফেব্রুয়ারি; ওই তরুণীর জন্ম দিন। একই দিনে জন্ম দিলেন ফুটফুটে এক ছেলে সন্তান। একদিকে পড়ছে বোমা অন্যদিকে চলছে ওই তরুণীর সংসার। শত কষ্টেও স্বামীর সঙ্গে তিনি খুশি। দেহে আবারও এলো আরেক প্রাণ। ফের গাজা শান্ত হওয়ার আশা এবং সেই গাজায় অনাগত দ্বিতীয় সন্তান ভূমিষ্টের স্বপ্নে বিভর হলেন তরুণী।

মিডল ইস্ট আই ওই তরুণীর স্বামী আলা আবু হিলালের একটি ভিডিও ধারণ করেছে। তার স্ত্রী ও প্রথম সন্তান তখন অতীত। দ্বিতীয় সন্তান বলে কিছু রইল না; গর্ভেই শুরু, গর্ভেই শেষ। পাগলপ্রায় আবু হিলালের জবানে স্ত্রীর নাম উচ্চারিত হয়নি; ‘প্রিয়তমা স্ত্রী’ই যেন তার নাম। মিডল ইস্ট আই-ও ওই তরুণীর প্রকৃত নাম জানতে চায়নি।

আলা আবু হিলাল তার শিশুপুত্র মোহাম্মদের মৃতদেহ কোলে তুলে বলতে থাকেন, আমি সবেমাত্র সংসার শুরু করেছি। কেবল আমার একটি পরিবার হতে চলেছে। এটি আমার প্রথম সন্তান, সে আমার পুরো পৃথিবী, আমার জীবন।

কান্নায় বুক ভাসিয়ে হিলাল বলতে থাকেন, ‘আমার স্ত্রীর জন্ম ২০ ফেব্রুয়ারি এবং আমার ছেলের জন্মও ২০ ফেব্রুয়ারি। আমার স্ত্রী শহীদ হন ১৯ মার্চ এবং আমার ছেলেও শহীদ হন ১৯ মার্চ। (২০২৫ সালের ১৯ মার্চ। এর একদিন আগে ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার পর ইসরায়েল নতুন করে পুরোদমে হামলা শুরু করে)।

আবু হিলাল আশা করেছিলেন, গাজার একটি নিরাপদ এলাকায় তার স্ত্রী এবং ছেলেকে রেখে গেলে তারা রক্ষা পাবে। তাই এক শরণার্থী শিবিরে তাদের রেখে নিজে অন্য এলাকায় সরে যান।

কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি একটি ফোন কল পান। যেখানে তাকে জানানো হয়, তারা যে তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছিল সেখানে বিমান হামলা হয়েছে।

তার ছেলের বয়স ছিল মাত্র ১৩ মাস। স্ত্রী তাদের দ্বিতীয় সন্তানের জন্য গর্ভবতী ছিলেন।

খানিক সময় চোখের জল আটকে রেখে আবু হিলাল বারবার তার ছেলের কপালে চুমু খেতে খেতে কথা বলতে লাগলেন, ‘সে খুব স্নেহশীল এবং বুদ্ধিমান সন্তান ছিল। আমি সবেমাত্র একটি পরিবার শুরু করেছি। আমি আমার স্ত্রীর সাথে একটি জীবন গড়তে চেয়েছিলাম, সন্তান ধারণ করতে চেয়েছিলাম। এমনকি যুদ্ধের সময়ও আমরা একটি পরিবার শুরু করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু এমন কি হওয়ার কথা ছিল?’

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com