সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনের ভোটগণনা কেন্দ্র থেকে মারামারির পর গ্রেপ্তারের মধ্যে সভাপতি পদে বিএনপিপন্থি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বিজয়ী হয়েছেন। অন্যদিকে সম্পাদক পদে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামীপন্থি অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক। আওয়ামীপন্থি আইনজীবীদের সংগঠনে সক্রিয় থেকেও আলাদাভাবে সম্পাদক পদে প্রার্থী হওয়া আলোচিত নাহিদ সুলতানা যূথী হয়েছেন তৃতীয়। গতকাল শনিবার রাতে ফল ঘোষণা করা হয়।
এর আগে গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর পল্টনে নিজ চেম্বার থেকে ব্যারিস্টার কাজলকে আটক করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তিনি হামলা সংঘর্ষের ঘটনায় করা হত্যাচেষ্টা মামলার ২ নম্বর আসামি। এ ছাড়া আরও ৫ আইনজীবীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযান চালানো হয়েছে মামলার এক নম্বর আসামি নাহিদ সুলতানা যূথীর বাসায়। তবে তাকে বাসায় পাওয়া যায়নি।
সিআইডি সদর দপ্তরের পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আজাদ রহমান গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সন্ধ্যা ৭টার দিকে ব্যারিস্টার কাজলকে রাজধানীর তোপখানা রোড এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শুক্রবার রাতে রাজধানীর বনানীসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫ আইনজীবীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন ব্যারিস্টার ওসমান চৌধুরী, আইনজীবী কাজী বশীর আহম্মেদ, হাসানুজ্জামান, তরিকুল ইসলাম ও এনামুল হক। গতকাল তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। শুনানি শেষে আদালত তাদের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে।
এই পাঁচ আইনজীবীকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। গতকাল দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোড ডিবির কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানানো হয়।
সাংবাদিকদের ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর-রশীদ বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কেন তারা দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয়ে মারামারির ঘটনা ঘটিয়েছেন সেটা বের করা হবে।
হারুন অর-রশীদ আরও বলেন, মারামারির ঘটনায় জড়িতদের কে কোন দল করেন, সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়। যারা অপরাধ করেছেন, যাদের নামে মামলা হয়েছে, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এ ঘটনায় জড়িত সবাইকে খোঁজা হচ্ছে।
সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনের ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে হট্টগোল, হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনায় ২০ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ৩০-৪০ জনের বিরুদ্ধে গত শুক্রবার শাহবাগ থানায় মামলা হয়।
আইনজীবী নাহিদ সুলতানা যূথীর ধানমন্ডির বাসায় পুলিশ একাধিকবার অভিযান চালিয়েছে বলে জানা গেছে। তিনি যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের স্ত্রী।
পুলিশের রমনা অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার আখতারুজ্জামান গতকাল বিকেলে একটি গণমাধ্যমকে বলেছেন, নাহিদ সুলতানা যূথীর বাসায় অভিযান চালালেও তাকে পাওয়া যায়নি। পুলিশ তাকে খুঁজছে।
ওই গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, অভিযান পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত একজন ডিবি কর্মকর্তা বলেছেন, শুক্রবার বিকেলে শাহবাগ থানায় মামলা হওয়ার পর রাতে ও শনিবার নাহিদ সুলতানা যূথীকে গ্রেপ্তার করতে তার বাসায় একাধিকবার অভিযান চালানো হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।
গত বুধ ও বৃহস্পতিবার দুদিন সুপ্রিম কোর্ট বারের ২০২৪-২৫ মেয়াদে কার্যনির্বাহী কমিটির প্রতিনিধি নির্বাচনে ৭ হাজার ৮৮৩ আইনজীবী ভোটারের মধ্যে ৫ হাজার ৩১৯ জন ভোট দেন। বৃহস্পতিবার রাত পার হয়ে মধ্যরাতে ভোট গণনার সময় নিয়ে আইনজীবীদের মধ্যে হট্টগোল, হাতাহাতি, হামলার ঘটনা ঘটে। এতে সাত-আটজন আইনজীবী কমবেশি আহত হন। এর মধ্যে ভোটকেন্দ্রে বহিরাগতরা প্রবেশ করে নির্বাচন পরিচালনাকারীদের ওপর হামলার চেষ্টা করে ও আইনজীবীদের মারধরের ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে নির্বাচন পরিচালনা সাব-কমিটির আহ্বায়ক আবুল খায়ের ভোটগণনা ছাড়াই সম্পাদক প্রার্থী নাহিদ সুলতানা যূথীকে বিজয়ী ঘোষণা করে পুলিশ পাহারায় ভোটকেন্দ্র ত্যাগ করেন। এরপর ব্যালট বাক্স সিলগালা করে পুলিশ পাহারায় রাখা হয়। মারধরের ঘটনায় সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সাইফ উদ্দিন আহমেদ সিদ্দিকী সাইফ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগ থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা করেন।
শুক্রবার ভোরে বহিরাগত মাস্তানদের চাপে অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যূথীকে সম্পাদক হিসেবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় বলে জানিয়েছেন নির্বাচন পরিচালনা সাব-কমিটির আহ্বায়ক আবুল খায়ের। গতকাল দুপুরে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে সম্পাদক পদে ফলাফল বিষয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় আমার নামে প্রচারিত ঘোষণাটি আইনানুগভাবে ভিত্তিহীন। একটি অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ভোট গণনার আগেই দুঃখজনকভাবে বহিরাগত মাস্তান শ্রেণি কর্তৃক আমার ওপর চাপ সৃষ্টি করে লিখিত দিতে বাধ্য করা হয়। যদিও এটি অর্থহীন ঘোষণা। ভোট গণনা করেই ফলাফল ঘোষণা করা হবে। এদিকে গতকাল বিকেলে বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপি সমর্থিত সম্পাদক প্রার্থী রুহুল কুদ্দুস কাজল। এতে তিনি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ভোটার সিøপ দেওয়া, ব্যালট প্রদান ও ব্যালট বাক্স ভর্তির কাজে আওয়ামী লীগের কর্মীরা নিয়ন্ত্রণ করে বলে অভিযোগ করেন।
কাজলকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় ফখরুলের নিন্দা : সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘সরকার দেশের সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ভেঙে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ঐতিহ্যগতভাবেই গণতন্ত্রবিরোধী শক্তি। জনগণকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতা দখল করে সেটিকে চিরস্থায়ী করার বন্দোবস্তে লিপ্ত রয়েছে। আর সে জন্য তারা দেশের সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ভেঙে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। এরা গণতন্ত্রমনা নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে অবরুদ্ধ করে রাখতে চায়।’
তিনি বলেন, ‘মানুষের কণ্ঠের আওয়াজকে স্তব্ধ করতে রাষ্ট্রকে নিপীড়নযন্ত্রে পরিণত করেছে তারা। দেশকে মিথ্যা মামলা, গ্রেপ্তার আর সহিংস হামলার এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। ৭ জানুয়ারি ডামি নির্বাচনের পর ক্ষমতা দখল করে এর তীব্রতা আরও বৃদ্ধি করা হয়েছে। কাজল এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সাবেক নির্বাহী সদস্য ব্যারিস্টার ওসমান চৌধুরীকে গ্রেপ্তারের ঘটনা সেটিরই নির্মম বহিঃপ্রকাশ।’
বিবৃতিতে অবিলম্বে কাজল এবং ওসমান চৌধুরীর নিঃশর্ত মুক্তিসহ তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা বানোয়াট মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।