বৃহস্পতিবার, ১২:২০ অপরাহ্ন, ২১ অগাস্ট ২০২৫, ৬ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।
শিরোনাম :
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে প্রাইভেটকার উল্টে নিহত ৩ নাইজারে ভয়াবহ বন্যায় ৪৭ জনের মৃত্যু, বাস্তুচ্যুত ৫৬ হাজার হবিগঞ্জে সিএনজি ফিলিং স্টেশনে আগুন, আহত ৫ ঝড়ো হাওয়ার আশঙ্কা, সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সর্তকতা জাতীয় নির্বাচনের পথ দেখাবে ডাকসু অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও আওয়ামী দোসরদের হাতে নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন শ্রমিক দল নেতা, সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ পাসপোর্ট না থাকলেও ভোটার হতে পারবে প্রবাসীরা নিউরোসায়েন্সেসের চিকিৎসকের জবানবন্দি : হাসপাতালে ভর্তি ১৬৭ জুলাই আহতের বেশির ভাগের মাথার খুলি ছিল না আগামী ১০ সেপ্টেম্বর ভোটকেন্দ্রের খসড়া প্রকাশ করবে ইসি ফাঁকা মেসে ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ, চিরকুটে লেখা— ‘বাবা-মা আমায় ক্ষমা করে দিও’

উল্টো পথে মধ্যবিত্তের নিরাপদ বিনিয়োগ

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ৩১ মার্চ, ২০২৩
  • ১০৬ বার পঠিত

চাকরি থেকে অবসরে গিয়ে কিভাবে চলবেন। এ নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল না মধ্যবিত্তের। সারাজীবনের চাকরি শেষে এককালীন যে অর্থ পেতেন তা নির্বিঘ্নে সঞ্চয়পত্র বিনিয়োগ করতেন। অবসরে যাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কেউ তিন মাস অন্তর আবার কেউ প্রতি মাসে বিনিয়োগ থেকে অর্জিত মুনাফা দিয়ে সংসার চালাতেন। সরকারও সাধারণের এ নিরাপদ বিনিয়োগের অর্থ দিয়ে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড চালাতেন। এতে ব্যাংক থেকে বাজেট ঘাটতি অর্থায়নের জন্য বাড়তি ঋণ নিতে হতো না। কিন্তু নানা জটিলতায় এ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ এখন উল্টো পথে হাটছে। সর্বশেষ তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ হয়েছিল ৫৫ হাজার ৮৬২ কোটি টাকা। সেখানে উত্তোলন হয়েছে ৫৯ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা। আলোচ্য আট মাসে সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ না হয়ে বরং ঘাটতি হয়েছে তিন হাজার ৫১০ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র থেকে কাক্সিক্ষত বিনিয়োগ না আসায় বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে সরকার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে ৪৫ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। একই সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ না নিয়ে উল্টো আগের নেয়া ঋণের প্রায় চার হাজার ৪৫ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। ফলে সরকারের নিট ব্যাংক ঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪১ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরেও ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে বড় অঙ্কের ঋণ নিয়েছিল সরকার। ওই অর্থবছরে সরকারের ঋণ নেয়ার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। এটি তার আগের তিন অর্থবছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ডলারের সঙ্কটের কারণে ব্যাংকগুলো এমনিতেই অন্য ব্যাংক থেকে বাড়তি দামে ডলার কিনে আমদানি দায় মেটাচ্ছে। কিছু ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে নগদ টাকায় ডলার কিনে সঙ্কট মেটাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে চলতি অর্থবছরের গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময়ে প্রায় সাড়ে ১০ বিলিয়ন ডলার কেনা হয়েছে নগদ টাকা দিয়ে। এতে ব্যাংকগুলো থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে এক লাখ কোটি টাকার ওপর চলে গেছে। এমনিতেই ডলারের সঙ্কটের কারণে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে নগদ টাকা দিয়ে ডলার কিনছে। পাশাপাশি দুই বছর টানা করোনাভাইরাসের প্রভাবে পুরনো ঋণ আদায় কমে গেছে। করোনার পরের বছর থেকে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণেও নগদ আদায়ে ভাটা পড়েছে। এমনি পরিস্থিতিতে ব্যাংকের নগদ টাকার প্রবাহ কমে গেছে। সব মিলে চাপে রয়েছে ব্যাংকিং খাত। এ অবস্থায় ব্যাংক থেকে অধিক মাত্রায় ঋণ নেয়া হলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ দেয়ার সক্ষমতা ব্যাংকগুলোর কমে যাবে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এখন মানুষের হাতে টাকা কম। ফলে সংসার চালাতে সঞ্চয়ে হাত দিচ্ছেন। পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র বিনিয়োগে আয়কর রিটার্নের স্লিপ জমা করতে হচ্ছে। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের অনেকেই এ ঝামেলায় যেতে চান না। বিভিন্ন প্রকার সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ সীমা কমিয়ে আনা হয়েছে। ফলে যাদের আগে থেকে বেশি বিনিয়োগ ছিল, তারা মেয়াদপূর্তিতে নতুন করে বিনিয়োগ করতে পারছেন না। এ ছাড়া প্রবাসী বন্ডে বিনিয়োগ সীমা কমিয়ে আনা ও এনআইডি শর্তের কারণে সেখানে কম বিনিয়োগ হয়েছে। যদিও সম্প্রতি প্রবাসী বন্ডের বিনিয়োগ সীমা ও এনআইডি শর্ত প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে সঞ্চয়পত্র বিনিয়োগকারীদের করের আওতায় নিয়ে আসতে নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে রিটার্ন দাখিল সনদ জমা দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়। আগে টিআইএন জমা দিলেই বিনিয়োগ করা যেতো। অনেকেই সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য টিআইএন খুলতেন, কিন্তু বছর শেষে রিটার্ন জমা দিতেন না। সঞ্চয়পত্র বিনিয়োগকারীদের করের আওতায় নিয়ে আসতে তাই নতুন বিনিয়োগে টিআইএন সনদ জমা বাধ্যতামূলক করা হয। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যারা রিটার্ন জমা দেন না এটি তাদের নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এর প্রভাবে সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ কমে যায়।

গত ফেব্রুয়ারিতে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে সাত হাজার ১০৫ কোটি টাকার। তবে মূল ও মুনাফা বাবদ পরিশোধ করতে হয়েছে সাত হাজার ৫৪৫ কোটি টাকা। সুতরাং বিক্রির চেয়ে পরিশোধের পরিমাণ বেশি। অর্থাৎ নিট বিক্রি বা ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪৪০ কোটি টাকা। তথ্য বলছে গত বছরের (২০২২) ফেব্রুয়ারিতে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। আবার অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ঋণাত্মক তিন হাজার ৫১০ কোটি টাকা। এ কারণেই সঞ্চয়পত্র থেকে কোনো ঋণই পায়নি সরকার। উল্টো আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের নগদায়নের চাপে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়েছে।
উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন ব্যয় মেটাতে এবার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেয়া বাড়িয়েছে সরকার। এরই মধ্যে সাড়ে ৪৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়েও ফেলেছে। আর পুরোটাই নেয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে সরকারকে এই টাকার জোগান দেয়ায় মূল্যস্ফীতির ওপরও চাপ বেড়েছে।

নিম্ন মধ্যবিত্ত, সীমিত আয়ের মানুষ, মহিলা, প্রতিবন্ধী ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সঞ্চয়পত্রের বিভিন্ন প্রকল্প চালু রয়েছে। সামাজিক সুরক্ষার কথা বিবেচনায় নিয়ে সঞ্চয়পত্রে তুলনামূলক বেশি মুনাফা (সুদ) দেয় সরকার। বিশ্লেষকরা বলছেন, পণ্য ও সেবার দামে লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে জীবনযাপনের খরচ বেড়ে গেছে মানুষের, যার প্রভাব পড়ছে সঞ্চয়ে। বিশেষ করে নির্দিষ্ট আয়ে যাদের সংসার চলে, তাদের অনেকেই এখন সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছেন। ফলে নির্দিষ্ট মেয়াদপূর্তির আগেও অনেকে সঞ্চয়পত্র ভেঙে সংসার চালাচ্ছেন। কেউ মেয়াদপূর্তিতেও পুনর্বিনিয়োগ না করে টাকা তুলে নিচ্ছেন। আবার যাদের কাছে টাকা আছে, তারাও কড়াকড়ির কারণে সঞ্চয়পত্রে খাটাতে আগ্রহী নন।
প্রতি অর্থবছরের বাজেটে নিট বিক্রি হিসেবে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। চলতি অর্থবছরের সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে নিট ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এটি গত অর্থবছরের চেয়ে তিন হাজার কোটি টাকা বেশি।
গত অর্থবছরেও সঞ্চয়পত্র থেকে তুলনামূলক কম ঋণ পেয়েছিল সরকার। পুরো অর্থবছরে ৩২ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে নিট ঋণ আসে ১৯ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা। অথচ করোনার পরও ২০২০-২১ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিনিয়োগ হয়েছিল প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। এটি তার আগের অর্থবছরে ছিল মাত্র ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com