বুধবার, ০৭:৪০ অপরাহ্ন, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৯শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।
শিরোনাম :
জাতিসংঘের প্রতিবেদনকে স্বাগত জানিয়েছে সরকার সারাদেশে প্রায় ৮০০ আয়নাঘর আছে: প্রধান উপদেষ্টা ধানমন্ডি ৩২ পোড়ানো প্রতিশোধেই আমার বাড়ি পোড়ানো হয়েছে : কাফি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ১৪০০ জনেরও বেশি মানুষ হত্যা-আশঙ্কা জাতিসংঘের সচিবালয়ে যাচ্ছেন চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের প্রতিনিধিদল ফরিদপুরে ৩ ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেফতার ‘আ. লীগ সরকার সব ক্ষেত্রে আইয়্যামে জাহেলিয়াত প্রতিষ্ঠা করে গেছে’ ছবি ও ভিডিওতে দেখুন কুখ্যাত ‘আয়নাঘর’ গৌরনদীতে আওয়ামী সমর্থকদের হামলায় বিএনপি নেত্রী আহত নগদ টাকা, স্বর্নালঙ্কার চিনতাই, থানায় মামলা পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জের গৌরনদীতে প্রতিপক্ষে হামলা ও মারধরে নারীসহ আহত ৭

গুণী সঙ্গীতশিল্পী ও ওস্তাদ মানিক লাল সাহার ৩২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ ২৪শে ফেব্রুয়ারি

লায়ন দিদার সরদার :
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
  • ২১১ বার পঠিত

মানিক লাল সাহা একটি নক্ষত্রের নাম। আজও বহমান আছে গৌরনদী সংস্কৃতি অঙ্গনে তার গানের সুনাম। তাই তো এ গুণীজন তাঁর মহৎ গুণ দিয়ে সৃষ্টি করেছেন ‘কুহুতান সংগীত বিদ্যালয়’ ১৯৭৫ সালে। ১৯৩৯ সনে গৌরনদী থানার অন্তর্গত আশোকাঠী গ্রামের সম্ভ্রান্ত জমিদার পরিবারে সংগীত শিল্পী মানিক লাল সাহার জন্ম। তাঁর পিতা জমিদার বাবু মোহন লাল সাহা। মানিক লাল সাহা ছিলেন বাবা মায়ের অষ্টম সন্তান। বাবা মা আদর সোহাগ করে নাম রেখেছিলেন মানিক। সত্যিই মানিক রত্ন ছিলেন। তাইতো সংগীত জগতে অন্তঃত বরিশালে, গৌরনদীতে তিনি মানিক হয়েই জন্মেছিলেন। ছোট বেলা থেকেই পড়ালেখার পাশাপাশি তাঁকে গানের নেশায় পেয়েছিল। তবে লেখাপড়ায়ও ছিলেন খুবই ভাল। তাঁর পিতা মোহন লাল সাহার প্রতিষ্ঠিত পালরদী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি. পরীক্ষায় সুনামের সাথে পাশ করেন। পড়ালেখার পাশাপাশি সংগীত চর্চাও চালিয়ে যাচ্ছিলেন।কলেজ জীবন কাটিয়েছেন একে ফজলুল হক চাখার কলেজে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ পাশ করেন বাংলায় ও হিস্ট্রিতে। তখন দুটো সাবজেক্ট নিয়ে তিনি ডবল এম,এ করেছেন। জাত শিল্পীদের মন স্থায়ীভাবে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকে না। তিনি স্বাধীনতার পরপর ফরিদপুর নগরকান্দা কলেজের বাংলা বিভাগে সুনামের সাথে অধ্যাপনা শুরু করেন। বেশ কয়েক বছর চাকরী করার পর চলে এলেন গৌরনদীতে। তার স্ত্রী ছিল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সনামধন্য সংগীত শিল্পী। মানিক লাল সাহার স্ত্রীর নাম অরুণা সাহা। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই খুলনা বেতারের ও ঢাকা বেতারের নিয়মিত শিল্পী ছিলেন। মানিক সাহা তখনকার একমাত্র চ্যানেল বিটিভিতে নিয়মিত গান গাইতেন। মানিক সাহা একজন গীতিকার ও সুরকার ছিলেন। তাঁর লেখা ও সুরে এদেশের অনেক বিখ্যাত গুণী শিল্পীরা গান গেয়েছেন। তিনি ভালো একজন গিটারিস্ট ছিলেন। গিটার শিখতে তখন বহুদূর থেকে স্টুডেন্ট ভর্তি হয়েছে তাঁর একাডেমিতে। এর পাশাপাশি তিনি দারুণ কংগ এবং তবলা বাজাতেন। একটি স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গৌরনদীতে তিনি একটি সংগীত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন ১৯৭৫ সালে। বাবা মোহন বাবু যেমন ছাত্র-শিক্ষককে খাইয়ে পড়িয়ে পালরদী স্কুল গঠন করেছিলেন ঠিক তার ছেলে মানিকও তার মত ছাত্র-ছাত্রীদের ঘর থেকে টেনে বের করে সৃষ্টি করেছিলেন অনেক শিল্পী। ওস্তাদ মানিক সাহা গৌরনদীতে ঘরে ঘরে শিল্পী তৈরী করে গেছেন। অনুপ্রেরণা জুগিয়ে ও গানকে ভালোবেসে। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে তখন গানের চর্চা হতো নিয়মিত এখানে। সকালবেলায় গানের রেয়াজ শুনে ঘুম ভেঙেছে মানুষের। এই অবদানের জন্য এই বিশেষ মানুষটির অবদান রয়ে যাবে চিরকাল মানুষের মনের মনিকোঠায়। তাঁর ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল একটা গানের স্কুল করার। আর সেই স্কুলে গান শিখবে কচিকাঁচা শিশুরা। তাঁর স্বপ্ন পূরণ হলো। তিনি দক্ষিণাঞ্চলের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে গেছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত সঙ্গীত বিদ্যালয়টি শিশুদের জন্য একটি বিশুদ্ধ প্ল্যাটফর্ম। ঈশ্বর তাঁকে বেশী দিন সুস্থ রাখলেন না। মানিক লাল সাহা গানের স্কুলকে মনে করতেন মন্দির। তাইতো মন্দির নামক এই গানের স্কুলে কাটাতেন বেশির ভাগ সময়। ১৯৯১ সালে ২৪শে ফেব্রুয়ারিতে ১৫ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করতে করতে মাত্র ৫২ বৎসর বয়সে তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। নিরহংকার ও সাদা মনের একজন উদার চেতা মনুষটি ছিলেন ভীষণ রকমের রুচিশীল ও পরিপাটি ডিসিপ্লিন একজন মানুষ। ওস্তাদ মানিক লাল সাহা স্বর্গীয় হয়ে চলে গেলেও রয়ে গেছেন তিনি তাঁর সৃষ্টিশীল সব কাজের মাঝে,বেঁচে আছেন তাঁর ছাত্র-ছাত্রী ও অগণিত ভক্তদের হৃদয়ে। তাঁর সৃষ্টি শিল্পীরা আজ তার গান গাইছে। হাজার হাজার শিল্পী সৃষ্টি হয়েছে শিশু একাডেমী থেকে। কত শিল্পী পেয়েছে জেলা, বিভাগীয় ও জাতীয় পুরস্কার। দেশে ও বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মানিক লাল সাহার ছাত্র-ছাত্রীরা। আমাদের গৌরনদী শিল্পীদের সংগীত গুরু তাঁর স্ত্রী স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের একজন শিল্পী ছিলেন। ছিলেন একজন কন্ঠযোদ্ধা। সেই সাথে ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষিকা। ছেলে রাজা রাম সাহা, মেয়ে আইভি সাহা তাঁদের দুটো সন্তান। মানিক লাল সাহার দু’চোখের স্বপ্ন, তাঁর কামনা-বাসনা ছিল গৌরনদী শিশু একাডেমি যুগ যুগ বহমান যেন থাকে, তাইতো গৌরনদী শিশু একাডেমি আজও চলমান আছে তার নির্দিষ্ট গতিতে। তাঁর সেই একাডেমী থেকে বের হচ্ছে নৃত্যশিল্পী, সংগীত শিল্পী, তবলা শিল্পী , বাঁশী বাদক,আবৃত্তি শিল্পী, চিত্র শিল্পী সহ নানা রকম শিল্পী। গৌরনদী শিশু একাডেমি আজ একটা স্বয়ং সম্পূর্ণ একাডেমিতে পরিণত হয়েছে। একটি বেস্ট প্ল্যাটফর্ম বলা যেতেই পারে। গৌরনদী শিশু একাডেমি যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকবে এই প্রত্যাশা আমাদের সকলের।

বরিশাল বিভাগের চ্যাম্পিয়ন কণ্ঠশিল্পী

লায়ন দিদার সরদার প্রতিষ্ঠিতা পরিচালকদের অন্যতম সদস্য শিশু একাডেমি (সঙ্গীত বিদ্যালয়) গৌরনদী অন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠক ও সাংবাদিক। হংকং – বাংলাদেশ।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com