শুক্রবার, ০৩:০২ অপরাহ্ন, ২১ নভেম্বর ২০২৫, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

স্বপ্ন সংশয়ের জটিল সমীকরণে সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি­

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ৫৪ বার পঠিত

রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী সাতটি কলেজের শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হলে শিক্ষার্থীরা স্বায়ত্তশাসিত ব্যবস্থার আওতায় আসবে, পরীক্ষার জট কমবে এবং দীর্ঘদিনের শিক্ষাগত সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু সিদ্ধান্ত ঘিরে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও নীতিনির্ধারকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ত্রিমুখী দ্বন্দ্ব।

সাতটি কলেজের বড় অংশে পাঠদান করছেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকরা। তাদের আশঙ্কা, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হলে তাদের প্রশাসনিক ও পেশাগত মর্যাদা খর্ব হবে। সম্প্রতি তারা শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিয়ে জানিয়েছেন- এ সিদ্ধান্তে পদোন্নতি, স্থানান্তর ও চাকরির নিরাপত্তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে।

ঢাকা কলেজের এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করি না। কিন্তু আমাদের মতামত ছাড়াই সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে ক্যারিয়ার ও মর্যাদার ক্ষতি হবে।’

বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, ‘নতুন কাঠামোতে ক্যাডারভুক্ত শিক্ষকদের স্বতন্ত্র পরিচয় হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। চাকরির নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ আছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার সময়ও একই অভিজ্ঞতা হয়েছিল।’

অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের মধ্যেও মতভেদ স্পষ্ট। সমর্থনকারী পক্ষের দাবি, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হলে দ্রুত পরীক্ষা সম্পন্ন হবে, ডিগ্রি সময়মতো শেষ হবে এবং চাকরির প্রতিযোগিতায় বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাবে।

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার হোসেন বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের প্রতি যত্নশীল হতে পারে না। যদি নিজস্ব বিশ্ববিদ্যালয় পাই, পরিচয়ও হবে, সুবিধাও বাড়বে। তবে আমাদের অন্য সহপাঠীরা কেন বিরোধিতা করছেন, তা বোধগম্য নয়।’

বিরোধী শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন- হঠাৎ নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠলে ডিগ্রির মান ও স্বীকৃতি কীভাবে নিশ্চিত হবে? বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সুমাইয়া বলেন, ‘আমাদের ডিগ্রির আন্তর্জাতিক র‌্যাঙ্কিং বা চাকরির বাজারে গ্রহণযোগ্যতা কীভাবে আসবে? এতে সময় ও পরিশ্রম নষ্ট হবে।’

এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার বলেন, ‘সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সমস্যা আমরা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর জন্য নয়, বরং বৃহত্তর স্বার্থে নেওয়া। শিক্ষকদের উদ্বেগ আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি। সমন্বিত সমাধান বের করার চেষ্টা চলছে।’

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) মনে করছে, সাত কলেজকে আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় আনা জরুরি। ইউজিসির এক সদস্য বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ম্যান্ডেট গবেষণা ও উচ্চশিক্ষার উৎকর্ষ সাধন। সাত কলেজের শিক্ষার্থীর চাপের কারণে ঢাবির মান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি ছাড়া সমাধান নেই।’

সংশ্লিষ্টদের মতে, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির সামনের চ্যালেঞ্জগুলো হচ্ছে- শিক্ষক সংকট ও পদমর্যাদার দ্বন্দ্ব। শিক্ষা ক্যাডার বনাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাডার দ্বন্দ্ব সমাধান না হলে স্থায়ী সংকট তৈরি হবে। অবকাঠামোগত প্রস্তুতি- নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন, ল্যাবরেটরি, লাইব্রেরি ও প্রশাসনিক কাঠামো এখনও গড়ে উঠেনি। আর্থিক বরাদ্দ- একসঙ্গে লাখো শিক্ষার্থীর জন্য নতুন বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করা বিশাল ব্যয়সাপেক্ষ।

সমাধান কোন পথ? শিক্ষাবিদ ও সাবেক ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর এ কে আজাদ চৌধুরী সতর্ক করে বলেন, ‘যদি কোনো পক্ষের দাবি উপেক্ষা করা হয়, তাহলে আন্দোলনের তীব্রতা বাড়বে। শিক্ষাক্ষেত্রে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।’ তাঁর মতে, সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ হলো- শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন পূরণ ও শিক্ষকদের মর্যাদা রক্ষার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।

তিনি বলেন, ‘শিক্ষক, শিক্ষার্থী, শিক্ষা ক্যাডার, ইউজিসি ও সরকারের প্রতিনিধিদের নিয়ে যৌথ ফোরাম গঠন করে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান বের করতে হবে।’

এই শিক্ষাবিদদের মতে, ‘শিক্ষা হলো জাতীয় বিনিয়োগ।’ তাই তাৎক্ষণিক চাপ সামলাতে গিয়ে দীর্ঘমেয়াদি মান নষ্ট হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সঠিক পরিকল্পনা, সমন্বিত সংলাপ এবং স্বচ্ছ নীতি গ্রহণের মাধ্যমেই সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির উদ্যোগ সফল হতে পারে।

প্রসঙ্গত, ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী সরকারি কলেজ ও সরকারি বাঙলা কলেজ- এই সাতটি কলেজকে ঢাবির অধিভুক্ত করা হয়েছিল। তখন থেকেই শিক্ষার্থীরা দাবি জানিয়ে আসছিলে- একটি স্বাধীন বিশ্ববিদ্যালয়ের, যা এখন ‘সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ নামে আলোচনায়।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com