দীর্ঘ অনিশ্চয়তার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হয়েছে। গতকাল রবিবার প্রথম দিনে বামপন্থীদের ‘দ্রোহ পর্ষদ’ নামে একটি প্যানেলসহ মোট ২৭ জন শিক্ষার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
এদিন সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে নির্বাচনী আমেজ দেখা যায়। শিক্ষার্থীদের আড্ডাস্থলগুলোতেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল- কে কোন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন। এ ছাড়া মনোনয়নপত্র সংগ্রহের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা এখন প্রার্থী বাছাই, প্রচারণার কৌশল নির্ধারণ ও জোটবদ্ধ হওয়ার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১২ অক্টোবর চাকসুর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার নির্বাচনে অন্তত আটটি প্যানেল অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন।
ইসলামী ছাত্রশিবির ইতিমধ্যে কয়েকটি ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগঠন ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি সমন্বিত প্যানেল গঠন করেছেন। তাদের প্রত্যাশা- ডাকসু ও জাকসুর মতো চাকসুতেও পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে ছাত্রদল নেতৃত্ব বণ্টন নিয়ে জটিলতায় পড়েছে। ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে ভরাডুবির অভিজ্ঞতা ছাত্রদল নেতাকর্মীদের মধ্যে বাড়তি শঙ্কা তৈরি করেছে। তাদের অভিযোগ, নির্বাচনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশ নেই।
এ ছাড়া বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) অভ্যন্তরীণ বিভাজনের কারণে দুটি পৃথক প্যানেল গঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ছাত্র অধিকার পরিষদও একটি প্যানেল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্যদিকে বামপন্থীরা দুটি প্যানেল দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ একক প্যানেল দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন।
অপ্রস্তুত ছাত্রদল: পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় চাকসু নির্বাচনে কারা প্রার্থী হবেন তা নিয়ে শাখা ছাত্রদলের ভেতরে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। দলটির নেই নির্বাচনী প্রস্ততিও। শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান এক ফেসবুক পোস্টে দাবি করেন, চাকসু নির্বাচনের পরিবেশ নেই। এ শঙ্কায় তারা নির্বাচনে যাবে কিনা ভাবছে।
তবে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাকসু নির্বাচনে শীর্ষে পদে প্রার্থী হতে দলটির মনোনয়ন চাচ্ছেন বেশ কয়েকজন। এর মধ্যে ভিপি পদে আলোচনায় আছেন সাবেক মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক জালাল সিদ্দিকী, সাবেক অর্থ সম্পাদক হাসান আহমেদ, জিএস পদে আলোচনায় আছেন সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়, ছাত্রদল নেতা মো. সাফায়েত, নুজহাত জাহান এবং শ্রুতি রাজ চৌধুরী, এজিএস পদে সায়েদ মো. রেদোয়ান ও জমাদিউল আউয়াল সুজাতও তোড়াজোড় চালাচ্ছেন।
চবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দলকানা প্রশাসনের অধীনে কতটুকু লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বজায় থেকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে আমরা যথেষ্ট সন্দিহান।’
ইনক্লুসিভ প্যানেল দেবে শিবির: ডাকসু, জাকসু ও রাকসুর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে চবিতেও ইসলামী ছাত্রশিবির নারী, উপজাতি, ভিন্নধর্মাবলম্বী ও আহত শিক্ষার্থীদের নিয়ে সমন্বিত প্যানেল গঠন করেছেন। এর মধ্যে শীর্ষ তিন পদে প্রার্থী হতে যাচ্ছেন সংগঠনটির সাবেক অফিস সম্পাদক ও চট্টগ্রাম মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইব্রাহিম রনি, চবি শাখার প্রচার সম্পাদক ইসহাক ভূঁইয়া ও সাহিত্য সম্পাদক সাঈদ বিন হাবিব। তবে ইনক্লুসিভ করতে জোটবদ্ধ কাউকে শীর্ষ তিন পদের একটি ছেড়ে দিতে প্রস্তুত শিবির।
শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমরা ইনক্লুসিভ প্যানেল করেছি। প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার প্যানেল ঘোষণা করব। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভালো ফিডব্যাক পাচ্ছি। আশা করছি, ডাকসু, জাকসুর মতো চাকসুতেও ছাত্রশিবির ভালো করবে।’
বাগছাসে দ্বন্দ্বের জেরে দুই প্যানেল: বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) চবি শাখার আহ্বায়ক মুনতাসির মাহমুদ ভিপি পদে নির্বাচন করতে পারেন। সদস্যসচিব আল-মাসনুন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সুলতানুল আরেফিন এবং যুগ্ম আহ্বায়ক শাহরিয়ার নাফিজও আলোচনায় রয়েছেন।
তবে দ্বন্দ্বের জেরে কেন্দ্রীয় দুই নেতার সমন্বয়ে স্বতন্ত্র আরেকটি প্যানেল হতে যাচ্ছে। এতে ভিপি পদে বাগছাসের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান ও জিএস পদে কেন্দ্রীয় সংগঠক রশিদ দিনার প্রার্থী হতে পারেন। প্যানেলটি ঘোষণা করা হবে ১৭ সেপ্টেম্বর। এতে ৮ জন নারী শিক্ষার্থীসহ কিছু নতুন মুখ থাকতে পারে। সাবেক সমন্বয়ক ও বাগছাসের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক খান তালাত মাহমুদ রাফি স্বতন্ত্র্য প্রার্থী হতে পারেন।
বাম সংগঠনগুলোর জোট: বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট একসঙ্গে নির্বাচন করবে। গতকাল রবিবার তারা প্যানেল ঘোষণা করেছেন। ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ঋজু লক্ষী অবরোধ, জিএস পদে ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ইফাজ উদ্দিন আহমেদ এবং এজিএস পদে দপ্তর সম্পাদক শেখ জুনায়েদ কবির।
এ ছাড়া বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল আলাদা প্যানেল ঘোষণা করতে পারে।এর মধ্যে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি জশদ জাকির ও গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি ধ্রুব বড়ুয়া আলোচনা রয়েছেন। জোটটির সঙ্গে সমন্বয় করে প্রার্থী হতে পারেন নারী অঙ্গনের সংগঠক সুমাইয়া শিকদার।
ছাত্র অধিকার পরিষদ: ‘চাকসু ফর রেপিড চেঞ্জ’ নামের একক প্যানেলে নির্বাচন করবে ছাত্র অধিকার পরিষদ। প্যানেলের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা হবে ১৬ সেপ্টেম্বর। ভিপি ও জিএস পদে লড়বেন এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। আলোচনায় রয়েছেন আহ্বায়ক তামজিদ উদ্দিন, সচিব রোমান রহমান ও যুগ্ম সদস্যসচিব মো. সবুজ। প্রয়োজনে তারা জোটে যেতে পারে এবং শীর্ষ দুই পদে ছাড় দিতে প্রস্তুত।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন: ‘সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ’ নামে একক প্যানেলে নির্বাচন করবে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন। ভিপি পদে আবদুর রহমান রবিন, জিএস পদে আবদুর রহমান, সমাজসেবা সম্পাদক পদে রাকিবুল ইসলাম এবং দপ্তর সম্পাদক পদে আনোয়ার হোসেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।