রবিবার, ০৫:৩৫ অপরাহ্ন, ২৪ অগাস্ট ২০২৫, ৯ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।
শিরোনাম :

নানা চাপে নির্বাচন কমিশন

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৫
  • ৬ বার পঠিত

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেন ইতিহাসের সেরা নির্বাচন হয়, এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ অন্তর্বর্তী সরকার। নির্বাচন কমিশনও (ইসি) চায় বিতর্কমুক্ত ও গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন উপহার দিতে। সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন দেখার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। এ জন্য তারা সব ধরনের সহযোগিতাও করতে ইচ্ছুক। বিশে^র বিভিন্ন দেশ জানিয়েছে, তারাও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন দেখতে চায়।

এদিকে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ। উপরন্তু, গত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলো, বিশেষ করে যেসব দল আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে পরিচিত, সেসব দল আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে কি না- এর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা এখনও সরকারের তরফ থেকে দেওয়া হয়নি। তাই নিবন্ধিত সবগুলো দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে কি না- এ নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।

এ ছাড়া আসন সীমানা পুনর্নির্ধারণ, পিআর পদ্ধতি, প্রতীক নির্ধারণ, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ইস্যুসহ নানাবিধ চাপে আছে ইসি। এর মধ্যেই আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট আয়োজনের জোর প্রস্তুতি চলছে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটির।

সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি সপ্তাহে নির্বাচনী রোডম্যাপ বা কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করবে ইসি। যদিও গত সপ্তাহেই ঘোষণার কথা বলা হয়েছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঘোষণা আসেনি। নির্বাচনী প্রস্তুতির মধ্যে বড় দুটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা সিইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে আজ রবিবার থেকে দাবি-আপত্তির ওপর আলোচনা শুরু হবে। এরই মধ্যে দুটি সংসদীয় আসন কাটছাঁট করে সংসদীয় আসনের খসড়া প্রকাশ করেছে ইসি। সেই খসড়ায় বিএনপিসহ অন্যান্য দলের আপত্তি রয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোটের প্রস্তুতি নিতে ইসিকে চিঠি দেওয়ার পর ইসির ভোট-প্রস্তুতির কার্যক্রম আরও গতিশীল হয়েছে। তবে কিছু বিষয় নিয়ে এখনও এক ধরনের অস্পষ্টতায় রয়েছে ইসি। অন্যদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং ইসলামী দলগুলো পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চাইছে। কিন্তু বিধানটি সংবিধানে না থাকায় এ পদ্ধতি প্রয়োগের সুযোগ নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন সিইসি।

এ ছাড়া আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে আখ্যায়িত জাতীয় পার্টিকে যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না দেওয়া হয়, এ বিষয়ে গণঅধিকার পরিষদসহ একাধিক দল সিইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের অবস্থান জানিয়েছে। তাই আগামী নির্বাচনে নিবন্ধিত দলগুলোর মধ্যে যেসব দল বিগত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে, তাদের বিষয়ে সরকারি কোনো নির্দেশনা রয়েছে কি না- তা বোঝার চেষ্টা করছে ইসি।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী অবশ্য গতকাল এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, জাতীয় পার্টি ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। জাতীয় পার্টি ছাড়া কোনো রাজনৈতিক সংস্কারও হবে না।

গত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা দলগুলোকে ঐকমত্য কমিশন বা নির্বাচন কমিশন কারও পক্ষ থেকেই কোনো সংলাপে বা বৈঠকে ডাকা হয়নি। তাই নির্বাচনে এসব দলের অবস্থান কী হবে; তাদের বাদ দিয়ে ভোটানুষ্ঠান করা হলে সেই নির্বাচন আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে কি না- এ নিয়েও নানা মহল থেকে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে।

ইসির ওপর আরও একটি চাপ রয়েছে। বিগত নির্বাচনে যেসব কর্মকর্তা ভোট আয়োজনের দায়িত্বে ছিলেন আগামী নির্বাচনে তাদের দায়িত্বে রাখা না-রাখা নিয়ে। এরই মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো থেকে তাদের বাদ দেওয়ার দাবি করা হয়েছে। বিগত সরকারের আমলে দায়িত্ব পালন করা নির্বাচন কর্মকর্তাদের বিষয়ে সিইসি এ, এম, এম, নাসির উদ্দিন বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের অধীনে ৫ হাজার ৭০০ কর্মকর্তা রয়েছেন। তারা আগেও দায়িত্ব পালন করেছেন। এদের কোথায় পাঠাব? তবে যারা স্বপ্রণোদিত হয়ে বিগত নির্বাচনে অনিয়ম করেছিলেন, সেই সব কর্মকর্তাকে রাখা হবে না। তাই স্বপ্রণোদিত অনিয়মে জড়িত কর্মকর্তাদের বাছতে গিয়ে ভোট কর্মকর্তার সংকট সৃষ্টি হবে কি না- এ নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।

এদিকে এনসিপি তাদের দলীয় প্রতীক হিসেবে শাপলা চেয়ে আবেদন করার পর ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শাপলা কোনো দলের প্রতীক হবে না। প্রতিক্রিয়ায় ইসির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এনসিপি। শেষ পর্যন্ত এনসিপির চাপে শাপলা প্রতীক বরাদ্দ দিতে হয় কি না- এ নিয়েও আলোচনা রয়েছে ইসিতে।

এদিকে ভোটের প্রস্তুতির মধ্যে বিএনপি ছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে। দলগুলো মনে করে, ভোটের রোডম্যাপ ঘোষণার পর সম্ভাব্য প্রার্থীরা আসনভিত্তিক প্রচারণা চালাতে পারবে কি না- তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক নয়। তাই প্রতিকার চেয়েও সুফল পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে, বলছে দলগুলো।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যখন সর্বত্র চলছে নানামুখী আলোচনা, তখন রাজশাহীতে গতকাল এক অনুষ্ঠানে সিইসি এ, এম, এম, নাসির উদ্দিন বলেছেন, এ পর্যন্ত সরকার কোনো চাপ দেয়নি। চাপ দিলে আমি চেয়ারে থাকব না।

প্রধান উপদেষ্টার চিঠি পাওয়ার পর থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি জোরদার হয়েছে বলে জানান সিইসি। তিনি বলেন, স্ট্রাইকিং ফোর্স নয়, সেনাবাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আমরা কাজ করছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনাবাহিনী যাতে অন্তর্ভুক্ত হয়, সেই ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানান, ভোটের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। যারা বাক্স দখল করার স্বপ্নে বিভোর, তাদের স্বপ্নভঙ্গ হবে। যারা অস্ত্রবাজি করে ভোটে জিততে চাইবেন, তাদের জন্য দুঃসংবাদ। ভোটকেন্দ্র দখলের ইতিহাস ভুলে যান। আমরা কঠোর অবস্থানে থাকব। ভোট কেন্দ্র দখল করলে পুরো ভোট বাতিল করা হবে।

সিইসির এ বক্তব্যের পর অনেকেই বলেছেন, তাহলে সিইসি কি কোনো চাপ অনুভব করছেন? ভোটের দিন যত এগিয়ে আসবে, ততই জনগণের প্রত্যাশা, রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি এবং সরকারের নির্দেশনাও স্বাধীন এ প্রতিষ্ঠানের ওপর বাড়তে পারে। এদিকে ভোটের প্রস্তুতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা প্রত্যাশা করে ইসি যে সংলাপের আয়োজন করে থাকে, সেটিও নির্ভর করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ওপর। জুলাই সনদে ঐকমত্য না হলে দলগুলো ভোটমুখী হবে কি না বা কোন দলের অবস্থান কী হবে, তা দেখে সংলাপ করতে চায় ইসি।

ভোটের প্রস্তুতি, ইসির বর্তমান বাস্তবতা এবং নানামুখী চাপের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য জেসমিন টুলী আমাদের সময়কে বলেন, কোন প্রেক্ষাপটে কেন চাপের কথা বলেছেন, সেটি আমার জানা নেই। তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না।

ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে কোনো সংশয় দেখছেন কি না- এমন প্রশ্নে সাবেক এই নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, আরও কিছুদিন গেলে পরিষ্কার হবে। সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

তবে নির্বাচন বিশ্লেষকরা মনে করেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ওপর নির্ভর করছে দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ। তাই যত চাপই থাকুক, নির্বাচন কমিশনকে শক্ত অবস্থানে থেকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য ভোট আয়োজন করতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com