দেশের বেসরকারি অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিকের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয় গত ২৬ মে। এই সময়ে ১৭ হাজার ১৮১ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান লাইসেন্সের আওতায় আসার আবেদন করে। এর মধ্যে ১২ হাজার ৩টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নবায়ন কিংবা নতুন করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে চার হাজার ৫৩টি হাসপাতাল, ৭ হাজার ৭৮৪টি ডায়াগনস্টিক এবং ১৬৬টি ব্লাড ব্যাংক রয়েছে। তবে এখনো ৫ হাজার ১৭৮টি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন প্রক্রিয়ার বাইরে থেকে গেছে।
এসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নবায়ন ফি বাবদ আদায় হয়েছে ১৯ কোটি ৮০ লাখ ৪০ হাজার ১৫৭ টাকা। এই সময়ে অর্থাৎ মাত্র ৬৫ দিনে মধ্যে নতুন করে আবেদন করেছে ২৩৩৯টি বেসরকারি চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান। যার মধ্যে ১১০৩টি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে লাইসেন্স পেয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখা সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ঢাকা বিভাগে ৫০২৯টি প্রতিষ্ঠান লাইসেন্সের আবেদন করে। নবায়নের অপেক্ষায় আছে ৩ হাজার ২৪৮টি। চট্টগাম বিভাগে নতুন আবেদন ৩৩৮২, নবায়ন ১৭৩৬; রাজশাহী বিভাগে নতুন আবেদন ২২৯৪, নবায়ন ১২৭৯; রংপুর বিভাগে আবেদন ১৩৫২, নবায়ন ৫৬০; খুলনায় আবেদন ২১৯৭, নবায়ন ১১৯১; বরিশালে আবেদন ১০৪৯, নবায়ন ৬৮৯; সিলেটে আবেদন ৭৪৮, নবায়ন ৪৪৯ এবং ময়মনসিংহে আবেদন ১১৩০, নবায়ন ৪৭০টি।
হাসপাতাল শাখা জানায়, গত ২৬ মে অভিযান শুরুর পর থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ২৩৩৯ প্রতিষ্ঠান নতুন করে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে। এর মধ্যে ১১০৩ প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ ছাড়া এই সময়ে নবায়নের জন্য ৪৫৯৮ প্রতিষ্ঠান আবেদন করে। যার মধ্যে ২ হাজার ১৮১ প্রতিষ্ঠানের নবায়ন সম্পন্ন হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. মো. বেলাল হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে ১২ হাজারের বেশি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স নবায়ন সম্পন্ন করেছে। আরও প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স প্রাপ্তির বিয়ষটি প্রক্রিয়াধীন।
অভিযান চলাকালীন যেসব হাসপাতাল-ক্লিনিকের কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছিল, তাদের বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের যেসব বিষয়ে ঘাটতি ছিল, সেগুলো সম্পন্ন করার শর্ত ছিল। যারা শর্ত পূরণ করতে পেরেছে, তাদের কার্যক্রম চলানোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ডা. বেলাল বলেন, আমরা কোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার পক্ষে নই। তবে বেসরকারি পর্যায়ে হাসপাতাল-ক্লিনিক চলাতে হলে অবশ্যই নিয়ম মেনেই চলাতে হবে।
জানা গেছে, গত ২৬ মে থেকে লাইসেন্স নবায়ন ফি বাবদ অধিদপ্তরে আয় হয়েছে ১৯ কোটি ৮০ লাখ ৪০ হাজার ১৫৭ টাকা। এর মধ্যে হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়ন বাবদ ৯ কোটি ৮২ লাখ ৬৪ হাজার ৮৭৯ টাকা। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ফি বাবদ ৯ কোটি ৮৪ লাখ ৬৫ হাজার ২৭৮ টাকা এবং ব্লাড ব্যাংকের লাইসেন্স ফি বাবদ ১৩ লাখ ১০ হাজার টাকা। তবে ২০১৮ সাল থেকে এই খাতে সরকারের আয় হয়েছে ১৩৩ কোটি ৮৬ লাখ ৮৭ হাজার ৩৫৬ টাকা।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বেসরকারি খাতে ১৭ হাজারের বেশি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান থাকলেও এই শাখায় লোকবল একেবারেই অপ্রতুল। মাত্র দুজন উপপরিচালক, চারজন সহকারী পরিচালক এবং দুজন মেডিক্যাল অফিসার দিয়ে বিপুলসংখ্যক প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করা প্রায় অসম্ভব।
প্রসঙ্গত গত ২৫ মে বিকাল ৩টায় বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহের সুপারভিশন ও মনিটরিং বিষয়ে ভার্চুয়াল সভা হয়। সভায় ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দেশের অনিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারসমূহ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়। এর পর ২৬ মে অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়। এ কার্যক্রমে স্থানীয় প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করতে (সব) যেসব প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন গ্রহণ করেছেন কিন্তু নবায়ন করেননি, তাদের নিবন্ধন নবায়নের জন্য সময়সীমা বেধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে নবায়ন গ্রহণ না করলে সেসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহে অপারেশন করার সময় এনেস্থেসিয়া প্রদান ও ওটি অ্যাসিস্ট করার ক্ষেত্রে নিবন্ধিত ডাক্তার ছাড়া অন্যদের রাখা হলে সেসব প্রতিষ্ঠান ও জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে লাইসেন্স বাতিলসহ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। যেসব প্রতিষ্ঠান নতুন নিবন্ধনের আবেদন করেছে, তাদের লাইসেন্স প্রদানের কার্যক্রম দ্রুত শেষ করারও সিদ্ধান্ত হয়। লাইসেন্স প্রাপ্তির আগে এসব প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম চালাতে পারবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়। এ সভার পরিপ্রেক্ষিতেই অভিযান পরিচালনা শুরু করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। দেশের বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।