বিএনপি অধ্যুষিত এলাকার সড়ক হওয়ায় গত ১৭ বছরেও হয়নি একটি সড়কের মেড়ামত বা উন্নয়ন। ঘটনাটি বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের ধানডোবা এলাকার। উপজেলার ওই এলাকার লোকজন বিএনপির ভোটার। ফলে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতার আমলে মেড়ামত বা উন্নয়ন বঞ্চিত হয় উপজেলার ধানডোবা গোমস্তা বাড়ির সামনে থেকে রামসিদ্দি বাজার পর্যন্ত মাত্র দেড় কিলোমিটার দৈর্ঘের এ পাঁকা সড়কটি।
সরেজমিন ওই এলাকায় গেলে কথা হয় এলাকার বাসিন্ধা বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মোঃ রফিকুল ইসলাম কাজলের সাথে। তিনি জানান, দীর্ঘ ২২ বছর পূর্বে ২০০২ সালে উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের নীলখোলা বাসাইল ভায়া চেঙ্গুটিয়া সড়কের ধানডোবা গোমস্তা বাড়ির সামনে থেকে রামসিদ্দি বাজার পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার দৈর্ঘের এ সড়কটি এলজিইডির রুরাল ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট-১৯ প্রকল্পের আওতায় পিচ-পাথর দিয়ে পাঁকা করা হয়। বিএনপির শাসন আমলের পরবর্তি ৪ বছর সড়কটি বেশ ভালই ছিল। ২০০৭-২০০৮ সালের জরুরী অবস্থার সরকারের সময় সড়কটির পিচ-পাথর উঠে যেতে শুরু করে। ধীরে ধীরে এটি যান বাহন ও মানুষের চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। জরুরী সরকারের ২বছর ও আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসন আমল, এই ১৭ বছরে এ সড়কটিকে মেড়ামত কিংবা উন্নয়নে কোন প্রকার পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। তিনি দাবি করেন, এটি বিএনপি অধ্যুষিত জনগোষ্ঠির এলাকা, এ কারনে সড়কটি জনগুরুত্বপূর্ন হওয়া সত্যেও এর মেড়ামত কিংবা উন্নয়ন করার প্রয়োজন অনুভব করেনি বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। সড়কটি নিয়ে এলাকাবাসীর সাথে চরম বিমাতা সূলভ আচরন করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি আরো জানান, ৫ আগষ্টের পরিবর্তিত পরিস্থিতির পর আমি গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবু আব্দুল্লাহ খানকে এনে সরেজমিনে সড়কটির বেহাল অবস্থাটি দেখিয়েছি। তিনি দেখে সড়কটি আশু সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা উপলব্দি করেছেন। জনস্বার্থে আমরা সড়কটিকে অগ্রধীকারের ভিত্তিতে অতি দ্রুত মেড়ামত অথবা উন্নয়ন করার জন্য তার কাছে দাবি জানিয়েছি।
এরপর কথা হয় ওই এলাকার বাসিন্ধা মোঃ শফিকুল ইসলাম সিকদার, মোঃ রজ্জব সরদার মোঃ মাসুদ খানের সঙ্গে। তারা বলেন, পিচ-পাথর দিয়ে পাঁকা সড়কে উন্নীত করা এ সড়কটিতে বিগত জরুরী অবস্থার সরকার ও আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতার গত ১৭ বছরে এক ফোঁটা পিচ পাথরের ছোয়া লাগেনি। ফলে পুরো সড়কটি ভেঙ্গেচুড়ে এলাকাবাসীর চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সড়কটির পিচ-পাথর উঠে গিয়ে এটি এখন ইটের গুড়ার লাল মাটির সড়কে পরিনত হয়েছে। যায়গায় যায়গায় সড়কটির মধ্যে বড়বড় গর্ত হয়ে এটি এখন এলাকাবাসী ও পথচারীদের মরণ ফাঁদে পরিনত হয়েছে।
ওই এলাকার বাসিন্ধা মোঃ মাসুদ খান বলেন, আমাদের এই এলাকার শতকরা ৯৮ জন লোক বিএনপির সমর্থক। তারা বিএনপিকে ভোট দেয়। এ কারনে জরুরী সরকারসহ আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৭ বছরের শাসন আমলে এলাকার জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগের নেতারা এ সড়কটির মেড়ামত বা উন্নয়ন করেনি।
এলজিইডির গৌরনদী উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ অহিদুর রহমান জানান, সড়কটি এলজিইডির আইডি ভূক্ত নয়। সংশ্লীষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সড়কটিকে এলজিইডির আইডি ভূক্ত করার জন্য উপজেলা পরিষদে প্রস্তাব পাঠানো হলে আমরা উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় প্রস্তাবটি পাশ করে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠাবো। এ প্রকৃয়ার মাধ্যমে সড়কটি আইডি ভূক্ত হলে এটিকে মেড়ামত বা উন্নয়নে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
বার্থী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার বলেন, ওই রাস্তাটির আইডি নম্বর নেই। নতুন আইডি নম্বর করার জন্য অনেক আগেই আমি উপজেলা পরিষদে প্রস্তার পাঠিয়েছি। এর পরও তাদের কাছে যদি আইডির প্রস্তাবটি না পৌছে থাকে তা হলে প্রয়োজনে আমি অতিদ্রুত আবারো প্রস্তাব জমা দেব।
সড়কটি দ্রুত মেড়ামত বা উন্নয়ন করতে উপজেলা পরিষদের তরফ থেকে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবু আব্দুল্লাহ খান বলেন জন গুবুত্বপূর্ন এ সড়কটির উন্নয়নের জন্য আমি একটি প্রকল্প প্রস্তাব তৈরী করে বরিশাল জেলা পরিষদে পাঠিয়েছি। জেলা পরিষদের সভায় এটি অনুমোদন পেলে টেন্ডার প্রকৃয়ার মাধ্যমে দ্রুতই সড়কটি মেড়ামত বা উন্নয়নে পদক্ষেপ নেয়া হবে।