রাজধানীর ১৯টি খালের পুনঃখনন ও সংস্কার কাজের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। গতকাল রবিবার মিরপুর ১৩-এর বাউনিয়া খালে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টা। তবে খাল পরিষ্কারের নামার পথে লাল কার্পেট নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) এলাকার ছয়টি খাল সংস্কার কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। খনন কার্যক্রমের উদ্বোধন করতে তারা ভাসমান এক্সকাভেটরে ওঠেন। এ সময় উপদেষ্টারা ‘লাল কার্পেটে’র ওপর দিয়ে হেঁটে খালে নামেন এবং কাজের সূচনা করেন।
উপদেষ্টাদের খাল খনন উদ্বোধনে ‘লাল কার্পেট’ নিয়ে মুহূর্তে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিতর্ক শুরু হয়। সমালোচনার সঙ্গে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের খাল খননের ছবি যুক্ত করে দিয়ে প্রশ্ন তোলেন নেটিজেনরা। উপস্থিত সাংবাদিকের এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমি ওটা (লাল গালিচা বিছানো) খেয়াল করিনি।’
ডিএনসিসির ব্যাখ্য : খাল পুনঃখনন কার্যক্রম উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজনের দায়িত্বে ছিল ডিএনসিসি। বিতর্কের মুখে সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইনের স্বাক্ষরে পাঠানো প্রেস নোটে বলা হয়, ‘রবিবার মিরপুরে বাউনিয়া খালের প্রান্তে খাল সংস্কার কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়া শেষে অতিথিরা ভাসমান এক্সকাভেটরে ওঠেন।
ভাসমান এক্সকাভেটর কোনো স্থায়ী পন্টুনে নয়, একটি অস্থায়ী স্থানে রাখা হয়েছে। এক্সকাভেটরে ওঠার রাস্তাটি অনেক ঢালু ও কাদা-মাটির এবং এক্সকাভেটরের মেঝেটি পিচ্ছিল। এ কারণে অতিথিদের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করার জন্য এবং চলাচল এলাকা দৃষ্টিগ্রাহ্য করতে একটি লাল রঙের কার্পেটের মতো ম্যাট ব্যবহার করা হয়েছে।’
সংস্থাটি বলছে, ‘এটি কোনো আনুষ্ঠানিক লাল গালিচা নয় বরং শুধু নিরাপত্তার স্বার্থে রাখা একটি ব্যবস্থা। এখানে কোনো ধরনের অপব্যয় বা অতিরিক্ত শ্রদ্ধা প্রদর্শনের উদ্দেশ্য নেই। যেহেতু ভাসমান এক্সকাভেটরে ওঠানামার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ, তাই ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।’
শুরুতে খনন হবে ৬ খাল : সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা শহর ও চারপাশের খাল, জলাশয়ের কার্যকর ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে পরিবেশগত, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ঢাকা শহরে ‘ব্লু নেটওয়ার্ক’ তৈরির জন্য স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কাজ করছে।
ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি এলাকার মোট ১৯টি খাল সংস্কার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। প্রথম ধাপে ছয়টি খাল সংস্কারের মাধ্যমে কর্মসূচির যাত্রা শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকিগুলোর সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা হবে। ছয়টি খালের মধ্যে ডিএনসিসি এলাকায় চারটি খাল বাউনিয়া, কড়াইল, রূপনগর ও বেগুনবাড়ী এবং ডিএসসিসি এলাকায় দুটি খাল মান্ডা ও কালুনগর।
সমস্যা সমাধানের উদাহরণ দেখিয়ে যেতে চাই : খাল সংস্কার কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ‘সংস্কার এবং বিচারের এজেন্ডা’ নিয়ে কাজ করছে। পুরো দেশকে ঠিক করে ফেলা স্বল্প সময়ের মধ্যে সম্ভব নয়। তবে আমরা কিছু মডেল দিয়ে যেতে চাই। নাগরিকদের আমরা কিছু উদাহরণ দেখিয়ে যেতে চাই যে, এভাবেও কাজ করা সম্ভব। তিনি বলেন, ‘ব্লু নেটওয়ার্কের’ মাধ্যমে জলাবদ্ধতা কিছুটা কমে আসবে। খালগুলো সংরক্ষণ করতে পারলে ঢাকা শহরের চিত্র ভিন্ন হতো।
উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আগে উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নে সমন্বয়ের অভাব ছিল। এখন আন্তঃমন্ত্রণালয় এক হয়ে কাজ করছে। কাজটা শেষ করতে সময় লাগবে, তবে আমরা শুরু করে দিচ্ছি। খাল খনন কাজ শুরু হবে আগে। এরপর পুনরুদ্ধার করা হবে। পুনরুদ্ধারের সময় অনেক বাধা আসবে, তা সবাইকে মিলে রুখতে হবে।
উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ছাড়াও ডিএনসিসির প্রশাসক মো. মাহমুদুল হাসান স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. নিজাম উদ্দিন, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হামিদুর রহমান খান, রাজউকের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. ছিদ্দিকুর রহমান সরকার, ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।