দেশে যেকোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক হামলার বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জিরো টলারেন্স নীতির পুনরাবৃত্তি করে এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেবে বলেও ঘোষণা দিয়েছে। শনিবার (১১ জানুয়ারি) একটি পুলিশ প্রতিবেদন তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধর্ম-বর্ণ, জাতি-নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। সাম্প্রদায়িক হিংসার অভিযোগ পেতে পুলিশ একটি হোয়াটসঅ্যাপ খুলেছে জানিয়ে তিনি বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।

জাতীয় জরুরি পরিষেবা যখনই সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিষয়ে  ৯৯৯ হেল্পলাইন নম্বরে জানানো হয়, ঠিক তখনি একটি কাছাকাছি বাহিনীকে সংযুক্ত করে পুলিশ সদর দপ্তর।

আবুল কালাম আজাদ বলেন, পুলিশ সব ধরেনের অভিযোগের সমাধানকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ দাবি করেছে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর ১ হাজার ৭৬৯টি সাম্প্রদায়িক হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

কাউন্সিল বলেছে, এসব হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনাগুলোর মধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জীবন, সম্পত্তি ও উপাসনালয়ে ২ হাজার ১০টি ঘটনা রয়েছে।

কাউন্সিলের তৈরি করা অভিযোগের তালিকা হাতে পেয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। সহিংসতার শিকার বলে দাবি করা ব্যক্তি এবং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে তারা। এছাড়া কাউন্সিলের রিপোর্টে উল্লেখিত সব স্থান, স্থাপনা পরিদর্শন ও ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাত করেছে পুলিশ। সমস্ত সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের থানায় অভিযোগ দায়ের করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। নির্যাতিত মানুষের যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। তদন্তের ফলাফল অনুযায়ী নিয়মিত মামলা, সাধারণ ডায়েরিসহ অন্যান্য যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

২০২৪ সালের ৪ আগস্ট থেকে সাম্প্রদায়িক হামলা ও দাবির বিষয়ে পুলিশের প্রতিবেদন অনুসারে, ১ হাজার ৭৬৯টি অভিযোগের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৬২টি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।

এতে বলা হয়, তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতে অন্তত ৩৫ জন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

দেখা গেছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হামলাগুলো সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল না, বরং তা ছিল রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার।

পুলিশের তদন্তে জানা গেছে, ১ হাজার ২৩৪টি ঘটনা রাজনৈতিক কারণে হয়েছে এবং ২০টি ঘটনা সাম্প্রদায়িক। প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্তত ১৬১টি দাবি মিথ্যা বা অসত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে।

কাউন্সিলের দাবি অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার সময় ১ হাজার ৪৫২টি বা মোট দাবির ৮২ দশমিক ৮ শতাংশ ঘটনা ঘটে।

কাউন্সিলের কাছ থেকে পাওয়া অনুলিপিতে পুলিশ দেখেছে যে, ৪ আগস্ট ৬৫টি এবং ৬ আগস্ট ৭০টি ঘটনা ঘটেছে।

কাউন্সিলের দাবি ছাড়াও ২০২৫ সালের ৫ আগস্ট থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ১৩৪টি অভিযোগ পেয়েছে পুলিশ। পুলিশ এই সমস্ত অভিযোগকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

এসব অভিযোগে অন্তত ৫৩টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় মোট ৬৫ জন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

৪ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে মোট ১১৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় অন্তত ১০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।