সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জঙ্গি নেতা ‘বাংলা ভাই’র ঘনিষ্ঠ সহযোগী আব্দুল হালিমের কাছ থেকে ক্রেস্ট নিয়েছেন রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আবুল কালাম আজাদ। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার বাগমারার গণিপুর ইউনিয়নের একডালা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে নবনির্বাচিত এমপি আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম আজাদকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন এমপি আবুল কালাম আজাদ, বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন ও জাকিরুল ইসলাম সান্টু, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ গোলাম সারওয়ার আবুল, শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মকবুল হোসেন মৃধা।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ২০০৪ সালে জঙ্গি নেতা ‘বাংলা ভাই’ বাগমারা এবং এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় সর্বহারা নিধনের নামে হত্যা, গুম, অপহরণ এবং নির্যাতন শুরু করে। ওই সময় বাংলা ভাইয়ের সক্রিয় ক্যাডার ছিলেন আব্দুল হালিম। বাংলা ভাইয়ের ফাঁসি কার্যকর হলে দীর্ঘদিন এলাকা ছাড়া ছিলেন তিনি। এমনকি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বাংলা ভাইয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের বৈঠকের সময়েও উপস্থিত থাকতেন আব্দুল হালিম। বাংলা ভাইয়ের পক্ষে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথাও বলতেন। এসব বিষয়গুলো তখন প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে ব্যাপকভাবে প্রচার হয়।
এছাড়া আব্দুল হালিম সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের পক্ষে সক্রিভাবে অংশ নেন। তিনি আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে নিজের ছবি দিয়ে পোস্টার সাঁটিয়ে এলাকার ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করেন।
এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে বাগমারা উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক সরকার বাবু ওরফে আর্ট বাবু বলেন, ‘আব্দুল হালিম বাংলা বাহিনীর সক্রিয় ক্যাডার ছিলেন। বাংলা বাহিনীর সে সময়ের শীর্ষ ক্যাডার মাহাতাব খামারু, আব্দুস সাত্তার বিএসসি, মোশতাক আহমেদ ওরফে কিলার মোশতাকের সঙ্গে সরাসরি হত্যা, গুম, অপহরণ এবং নির্যাতনে অংশ নেন হালিম।’
তিনি আরও বলেন, ‘জঙ্গি নেতা বাংলা ভাই বিএনপি-জামায়াত জোটের সৃষ্টি। তারাই বাংলা বাহিনীর মাধ্যমে এ অঞ্চলের মহান স্বাধীনতার পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের নিঃশেষ করতে চেয়েছিল। আওয়ামী লীগ ধর্মনিরপেক্ষ একটি রাজনৈতিক দল। অথচ হালিমের মত বাংলা বাহিনীর একজন জঙ্গি নেতার আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এটি আওয়ামী লীগের জন্য অশনি-সংকেত।’
এ বিষয়ে কথা বলতে এমপি আবুল কালাম আজাদের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দেওয়া হয়। তবে ফোন না ধরায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
তবে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জাকিরুল ইসলাম সান্টু বলেন, ‘বাংলা ভাই ইস্যু এখন আর নেই। এখন সবকিছু স্বাভাবিক। এটি হালিমের এলাকা। এ কারণে এমপিকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।’
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আব্দুল হালিম বলেন, ‘আমি কখনও বাংলা ভাইয়ের সহযোগী ছিলাম না। এটি অপপ্রচার। একটি মহল আমার ক্ষতি করার জন্য ষড়যন্ত্র করছে। তারা ঊদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আমার সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য এমনটি করছে।’