গণপূর্ত বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কর্মকর্তা মোতাহার মুন্সি (৭০) গত মঙ্গলবার মারা যান। মৃত্যুর পর রেখে যাওয়া নগদ অর্থের ভাগ চেয়ে দাফনে বাধা দেন তারই পাঁচ ভাই-বোন। এ নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পুলিশ প্রশাসন ও নিহতের স্বজনরা দফায় দফায় করেন আলোচনা। পরে ৬০ লাখ টাকার চেক ও স্টাম্পে লিখিত দেওয়ার পর আসে সমাধান। মৃত্যুর ৩ দিন পর আজ শুক্রবার মোতাহার মুন্সিকে দাফন করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার বেতকাপা ইউনিয়নের সাকোয়া গ্রামের মৃত সামছুল হক মুন্সির দ্বিতীয় সন্তান ছিলেন মোতাহার মুন্সি। সরকারি চাকরির সুবাদে তিনি গ্রামে বসবাস করেননি। ঢাকার কলাবাগান এলাকায় নিজ বাসায় তিনি বসবাস করতেন। দাম্পত্য জীবনে তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। তার একমাত্র পালিত কন্যা মারজিয়া আক্তার। বার্ধক্যজনিত কারণে বিভিন্ন জটিলরোগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত মঙ্গলবার ঢাকার একটি হাসপাতালে মোতাহর মুন্সি মারা যান।
স্থানীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, মৃত্যুর কিছু দিন আগে তিনি তার মালিকানাধীন ৫৯ শতাংশ একটি জমি ২ কোটি ১৮ লাখ টাকায় বিক্রি করেন। এছাড়া তার নামে আছে বিশাল অর্থ-সম্পদ।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নিহতের স্বজনরা জানান, মোতাহার মুন্সির মৃত্যুর পর স্ত্রী মাসুমা বেগম, পালিত কন্যা মারজিয়া ও স্ত্রীর বড় ভাই নূরুল ইসলাম কাজী দাফন সম্পন্ন করতে মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছান।
কিন্তু মৃতের ছোট ভাই নজরুল ইসলাম মুন্সি, বোন রাবেয়া বেগম ও লতিফা বেগমসহ পরিবারের অন্যান্যরা তার দাফন কাজে বাধা দেন। মরদেহ জিম্মি করে স্ত্রী মাসুমা বেগমের নিকট নিঃসন্তান মৃত ভাইয়ের পুঞ্জিভূত সম্পদের বিপরীতে মোটা অংকের অর্থ দাবি করেন। এ সময় মরদেহ রেখে তিন দিন ধরে দফায়-দফায় সমঝোতা বৈঠক চলতে থাকে। কালক্ষেপণের একপর্যায়ে স্ত্রী মাসুমা বেগম ইসলামী ব্যাংকের বিপরীতে ৬০ লাখ টাকার চেক ও স্ট্যাম্প স্বাক্ষর ও হস্তান্তর সম্পন্ন শেষে দাফনের অনুমতি মেলে। অবশেষে উপস্থিত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরজু মো. সাজ্জাদ হোসেন, ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তা, ইউপি সদস্য, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও গ্রামবাসীর মধ্যস্থতায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন কাজ সম্পন্ন হয়।
ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তা বলেন, ঘটনাটি জানতে পেরে অবিরাম বৈঠকে সমঝোতা শেষে দাফন কাজ সম্পন্ন করেছি। অমানবিক এ ঘটনাটি এলাকার সচেতন মহলসহ সর্বস্তরের মানুষের মাঝে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি করেছে।