তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণ শেষে চাকরি নিয়ে জাপান যাওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে বাংলাদেশ-জাপান আইসিটি ইঞ্জিনিয়ার্স ট্রেনিং প্রোগ্রাম (বি-জেট)। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে প্রোগ্রামটি। এই প্রকল্পের অধীন ইতিমধ্যে ৩৭৪ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ২২৫ জন বর্তমানে জাপানে চাকরি করছেন। আগামী অক্টোবরে শুরু হবে ১৩তম ব্যাচের ক্লাস। এ ব্যাচের জন্য ইতিমধ্যে আবেদন শুরু হয়েছে। অনলাইনে আবেদনের শেষ সময় ২৯ জুলাই।
প্রোগ্রাম সম্পর্কে
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন এজেন্সি (জাইকা) যৌথভাবে ২০১৭ সালে বি-জেট প্রোগ্রাম চালু করে। ‘জাপানিজ আইটি সেক্টরের উপযোগী করে আইটি ইঞ্জিনিয়ারদের দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্প’-এর অধীন এ প্রোগ্রাম পরিচালিত হচ্ছে। প্রোগ্রামের অষ্টম ব্যাচ পর্যন্ত অর্থায়ন করেছে জাইকা। বর্তমানে অর্থায়ন করছে জাপানের মিয়াজাকি বিশ্ববিদ্যালয়। এ প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ও মিয়াজাকি বিশ্ববিদ্যালয়। পুরো প্রোগ্রাম তত্ত্বাবধান করছে বিসিসি। অনলাইন ও সশরীর—দুই মাধ্যমেই ক্লাস হয়। সশরীর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ প্রশিক্ষণের ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়।
আবেদনের যোগ্যতা
বি-জেট প্রোগ্রামের ভর্তির বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, আইটি বা আইসিটি বিষয়ে স্নাতক পাস নবীন শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন। প্রোগ্রামিং, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিং বিষয়ে দুই বছর বা তার বেশি সময় চাকরির অভিজ্ঞতা থাকলে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। জাপানি ভাষা শেখার প্রবল আগ্রহ থাকতে হবে। অনলাইনে ক্লাস করার জন্য কম্পিউটার বা ল্যাপটপের সঙ্গে ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে হবে। প্রশিক্ষণ শেষে জাপানে চাকরি করার মানসিকতা থাকতে হবে।
বি-জেট প্রোগ্রামের অপারেশন ম্যানেজার উজ্জ্বল কুমার সাহা বলেন, আবেদনের বিজ্ঞপ্তিতে আইসিটি বিষয় বলতে কম্পিউটার সায়েন্স, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, ইনফরমেশন টেকনোলজি, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন, ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার ইনফরমেশন সিস্টেম, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং ও কম্পিউটিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিষয়গুলো বোঝানো হয়েছে।
যেভাবে আবেদন
১৩তম ব্যাচে ভর্তির জন্য ইতিমধ্যে আবেদন শুরু হয়েছে। আবেদন করা যাবে ২৯ জুলাই পর্যন্ত। অনলাইনে এই লিংকের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। আবেদনে সময় সিভি জমা দিতে হবে। বিস্তারিত জানা যাবে বি-জেট প্রোগ্রামের ফেসবুক পেজে। ১৩তম ব্যাচে নেওয়া হবে প্রায় ৩৫ জন শিক্ষার্থী।
ভর্তি প্রক্রিয়া
বি-জেট প্রোগ্রাম থেকে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আবেদন পাওয়ার পর সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হয়। এরপর লিখিত পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়। পরীক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তির বেসিক বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। লিখিত ও ভাইভায় পাস করলে প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচিত করা হয়। বছরে দুবার শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়া হয়। ১৩ সপ্তাহ ক্লাস হবে। সোম ও শুক্রবার অনলাইন ক্লাস। সশরীর ক্লাস হবে মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়, একেকটি ক্লাস ৪৫ মিনিট করে।
এই প্রোগ্রামে অনলাইন ও সশরীর—দুই মাধ্যমেই ক্লাস হয়।
এই প্রোগ্রামে অনলাইন ও সশরীর—দুই মাধ্যমেই ক্লাস হয়।ছবি: প্রথম আলো
সুযোগ-সুবিধা
বি-জেট প্রোগ্রামের অপারেশন ম্যানেজার উজ্জ্বল কুমার সাহা বলেন, ‘যাঁরা সফলভাবে প্রশিক্ষণ শেষ করেন, তাঁদের জাপানে চাকরি নিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। জাপানের বিভিন্ন আইটি প্রতিষ্ঠান আমাদের প্রার্থীদের চাকরির ভাইভা নিয়ে থাকে। ভাইভায় পাস করলে তাঁরা কোম্পানির খরচে জাপান যাওয়ার সুযোগ পান। এ ছাড়া প্রশিক্ষণ নেওয়া সব শিক্ষার্থীকে জাপানের মিয়াজাকি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সনদ দেওয়া হবে। এটি তাঁদের চাকরি পেতে সহায়তা করে।’
উজ্জ্বল কুমার সাহা আরও বলেন, তিন মাসের প্রশিক্ষণে প্রার্থীদের জাপানি ভাষা শেখানো হয়, তাঁদের আইটি দক্ষতা বৃদ্ধি করা হয় এবং জাপানি প্রতিষ্ঠানের কাছে তাঁদের আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে জাপানের রীতিনীতি ও সংস্কৃতি অনুশীলন করানো হয়।