সোমবার, ১০:১৬ অপরাহ্ন, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।
শিরোনাম :
শেখ মুজিব পাকিস্তানের প্রধান মন্ত্রী হওয়ার জন্য দেন দরবার করেছেন তিনি আমাদের স্বাধীনতা চান নাই-এম. জহির উদ্দিন স্বপন উপজেলা মহিলা দলের সভাপতি হলেন ওবায়দুল কাদেরের ‘বান্ধবী’ চাঁদনী বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় ৭ সদস্যের তদন্ত কমিশন গঠন সাবেক এমপি পোটন ৩ দিনের রিমান্ডে বছরখানেক সময় পেলে সংস্কার করে যাব : আসিফ নজরুল নতুন মামলায় সালমান-ইনু-আনিসুলসহ গ্রেফতার ৮ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যা মামলার তদন্ত ৩ মাসের মধ্যে শেষ হবে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় তদন্ত কমিশন গঠন: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মেয়াদোত্তীর্ণ ভিসা নিয়ে দেশে ৩০ হাজার বিদেশি, অধিকাংশই ভারত-চীনের ২৯ ডিসেম্বর লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া

বাংলা মাধ্যম নাকি ইংরেজি, কোথায় পড়বে সন্তান

অনলাইন ডেস্কঃ
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৫ জুলাই, ২০২৩
  • ৭০ বার পঠিত

সন্তানকে স্কুলে দেওয়ার সময় হলে আজকাল মা–বাবারা প্রথম যে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েন, তা হলো ইংরেজি মাধ্যমে পড়াবেন নাকি বাংলা? দুই মাধ্যমে দুটি সন্তান পড়ানোর বিরল অভিজ্ঞতার কারণে তরুণ মা–বাবারা প্রায়ই আমার কাছে পরামর্শ চান। সমস্যা আসলে তাঁদের নয়, সমস্যাটা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার। এখানে একই সঙ্গে প্যারালাল বা পাশাপাশি দু–তিনটি শিক্ষামাধ্যম বিদ্যমান, যার একটির সঙ্গে আরেকটির কোনো মিল নেই। এই দুই মাধ্যমের পড়াশোনার ব্যবস্থা, ভাষা, সিলেবাস, পরীক্ষাপদ্ধতি, ব্যয়—সবকিছুতেই আকাশ-পাতাল ফারাক। একইভাবে সুবিধা–অসুবিধাগুলোও বেশ প্রকট। তাই অভিভাবকদের শঙ্কা আর দুশ্চিন্তার জায়গাটা একেবারে ভিত্তিহীন নয়।

ইংরেজি বা বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা ও এর পরিণতি সম্পর্কে আমাদের কিছু প্রচলিত ধারণা আছে। এর সবটুকু যে মিথ্যা, তা–ও নয়। আবার শতভাগ সত্যও নয়। আসুন আমাদের ধারণাগুলো কী কী, তা জেনে নিই।

ইংরেজি মাধ্যম
ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করলে দেশের মূলধারার উচ্চশিক্ষার কোর্সগুলোতে সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা কম। মূলত এটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা বলে মনে করেন অভিভাবকেরা। সিলেবাস ও প্রশ্নপত্রের ধরনের কারণে চিকিৎসাবিজ্ঞান, স্থাপত্য, প্রকৌশলবিদ্যা, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ইংরেজি মাধ্যমের ছেলেমেয়েরা উত্তীর্ণ হতে পারেন না, এমনটাই সবার ধারণা। ‘ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করলে বিদেশে যাওয়া ছাড়া দেশে কোনো গতি নেই’—কথাটা তাই খুবই প্রচলিত। কথাটা একাংশে সত্য, কিন্তু পুরোটা নয়। আসলে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনস্টিটিউটগুলোর ভর্তি পরীক্ষায় ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণই অনেক কম। তারপরও বিভিন্ন সেরা প্রতিষ্ঠানে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের সুযোগ পাওয়া বা ভর্তি হওয়ার খবর একেবারে বিরল নয়। তবে তার জন্য শিক্ষার্থীদের আলাদা প্রস্তুতি লাগে। কেউ চাইলে সেই প্রচেষ্টা তো নিতেই পারেন। ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে বাংলার সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজিতে উত্তর দেওয়ার সুযোগ থাকে। দেশের ভেতর উচ্চশিক্ষার দ্বার ইংরেজি মাধ্যমের ছেলেমেয়েদের জন্য একেবারে বন্ধ নয়।

কোনো কোনো অভিভাবকের আশঙ্কা থাকে, ইংরেজি মাধ্যমে পড়লে সন্তান বাংলা ভুলে যাবে, দেশীয় সংস্কৃতি থেকে দূরে সরে যাবে। বিষয়টি কিন্তু শিক্ষার্থীর নিজের ও পরিবারের ওপর অনেকটাই নির্ভর করে। সন্তান স্কুলের বাইরে একটা বড় সময় অভিভাবকদের সঙ্গে বা বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে থাকে। বাড়িতে যদি শুদ্ধ বাংলা বলার, বাংলা বই পড়ার, বাংলা গান শোনার চল থাকে, তবে এই শঙ্কা অমূলক।

সমস্যা হলো আমাদের দেশে সন্তানের ঝরঝর করে নির্ভুল ইংরেজি বলাটাকে অভিভাবকেরা যতটা উৎসাহ দেন, গর্ববোধ করেন, শুদ্ধ বাংলা বলার ক্ষেত্রে তেমনটা করেন না। ফলে বাংলাকে অবহেলা বা উপেক্ষা করার প্রবণতা পেয়ে বসে শিশুটিকে। নির্ভুল ইংরেজি বলার মতো নির্ভুল ও শুদ্ধ বাংলা বলার প্রয়োজনীয়তাটুকুও সন্তানকে বোঝাতে হবে। এ ছাড়া কিছু ইংরেজি স্কুলে বাংলায় কথা বলাটাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। এটাও ঠিক নয়। ক্লাসের বাইরে শিক্ষার্থীদের নিজেদের মধ্যে মাতৃভাষায় কথা বলাটা দোষের কিছু নয়। আজকাল ইংরেজি স্কুলগুলোতেও নববর্ষ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ইত্যাদি পালন করা হচ্ছে। এই দিনগুলো কেন পালন করা হয়, এর তাৎপর্য কী—এসবও বুঝিয়ে বলতে হবে সন্তানকে। এগুলো যেন কেবল উৎসব পালনের উপলক্ষ না হয়।

ইংরেজি মাধ্যমে পড়ার আরেক নেতিবাচক দিক হিসেবে ধরা হয় খরচাপাতিকে। বাংলা মাধ্যমের সঙ্গে আকাশ-পাতাল পার্থক্য এই খরচের। অনেক মধ্যবিত্ত অভিভাবক তাই সন্তানকে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে যান। আবার স্কুলে স্কুলে ব্যয়ের পার্থক্যও মাঝেমধ্যে অযৌক্তিক। এ ক্ষেত্রে আসলে অভিভাবকদের কিছু করার নেই, তবে সরকার ও কর্তৃপক্ষের আছে। সরকার চাইলে এতে লাগাম টানতে পারে এবং বিষয়টিকে একটা নিয়মতান্ত্রিকতার মধ্যে নিয়ে আসতে পারে। আর যদি কোনো অভিভাবক মনে করেন এই ব্যয় সংকুলান করা তার পক্ষে অসম্ভব, তবে আমি বলব, ও পথে না হাঁটাই ভালো। মেধা, পরিশ্রম আর চেষ্টা আপনার সন্তানকে ঠিকই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারে, তা সে যে মাধ্যমেই পড়ুক না কেন। বাংলাদেশের অনেক গ্রামের সাধারণ স্কুল, মাদ্রাসায় পড়া ছেলেমেয়েরা আজ বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উঁচু পদে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। এমন বহু উদাহরণ আছে।

উল্টো দিকে অভিভাবকদের ধারণা, বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করা ছেলেমেয়েরা হয়তো দেশের বাইরে গিয়ে তেমন ভালো করতে পারবেন না। এ ধারণা যে সর্বৈব ভুল, তা বুঝতে হলে আপনাকে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ বা অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়, প্রতিষ্ঠানগুলোতে চোখ রাখতে হবে। বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীরা হার্ভার্ড, এমআইটি, অক্সফোর্ড, কেমব্রিজের মতো নামকরা প্রতিষ্ঠানে যে দাপটের সঙ্গে পড়ে বা কাজ করে বেড়াচ্ছেন, তা একটু খোঁজখবর করলেই জানতে পারবেন। শতভাগ স্কলারশিপ নিয়ে বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন মফস্‌সলের সাধারণ স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা, সেটা পত্রপত্রিকায় চোখ রাখলেই জানতে পারবেন। তাই বিদেশে পড়তে যাওয়া বা চাকরির জন্য ইংরেজি মাধ্যমে পড়তে হবে, এ ধারণা ঠিক নয়। আর বিদেশে যেনতেনভাবে পড়তে যাওয়া মানেই সাফল্যের দুয়ারে পৌঁছে যাওয়া, তা–ও নয়। চাইলে দেশের যেকোনো প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেও আপনার সন্তান পরে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে সফলভাবে কাজ করার সুযোগ পেতে পারেন।

বাংলা মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা যথেষ্ট ভালো ইংরেজি বলতে পারে না, যথেষ্ট চৌকস বা স্মার্ট নয়, এমন ধারণাও পোষণ করেন কেউ কেউ। এটাও খুবই ভুল ধারণা। একবার ভেবে দেখুন, যাঁদের আপনি এখন স্মার্টনেসের আইডল ভাবেন, তাঁদের বেশির ভাগই বাংলা মাধ্যম থেকে আসা। এ ছাড়া দুনিয়ায় বড় হতে হলে ভালো ইংরেজি জানতেই হবে, এ ধারণাও পালটে গেছে। জাপানি বা কোরীয়রা বিন্দুমাত্র ইংরেজি না জেনেও আজ দুনিয়ায় সবচেয়ে স্মার্ট জাতিতে পরিণত হতে পেরেছে।

শেষ কথা
সব কথার শেষ কথা হলো, যে মাধ্যমেই সন্তান পড়ুক না কেন, সে সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠছে কি না, তার মেধা ও প্রতিভার সঠিক বিকাশ হচ্ছে কি না, তার নৈতিক ও চারিত্রিক গুণাবলির স্ফুরণ কীভাবে হচ্ছে, সে একজন ভালো ও সংবেদনশীল মানুষ হয়ে উঠছে কি না—এগুলোই আসল লক্ষণীয় বিষয়। কেবল ভালো স্কুল বা ভালো ফলাফল কাউকে লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারে না, তার জন্য আরও কিছু লাগে। যেমন সামাজিক দক্ষতা, সমস্যা মোকাবিলা করার ক্ষমতা ও ইমোশনাল কুইসেন্ট (ইকিউ)। আর এসব বিষয় সন্তানের মধ্যে গড়ে দিতে পারে পরিবার ও পরিবেশ। তাই মাধ্যম বা স্কুলই শেষ কথা নয়। নিজের সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে সন্তানকে যখন ইংরেজি মাধ্যমে পড়াতে চাইবেন, একটা সময় পর হয়তো নিজে হিমশিম খাবেন আর সন্তানও একধরনের হীনম্মন্যতায় ভুগতে শুরু করবে। বাংলা মাধ্যমে পড়া সন্তানকেও যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে ছোটবেলা থেকেই ইংরেজিতে পারদর্শী করতে পারেন। নিজের ইচ্ছা সন্তানের ঘাড়ে চাপিয়ে না দিয়ে সন্তানকে তাঁর পছন্দমতো বেড়ে উঠতে সাহায্য করা জরুরি। কোন মাধ্যমে পড়বে, সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় না ভুগে, বরং সন্তানের পড়াশোনার পরিবেশটাকে আনন্দময় করে তুলতে চেষ্টা করুন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com