সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দুই দিনব্যাপী নির্বাচনের শেষ দিনেও বিএনপি ও আওয়ামী লীগ
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে (২০২৩-২৪) বিএনপি সমর্থিত প্যানলের প্রার্থীদের প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকার পর সভাপতি ও সম্পাদকসহ ১৪টি পদের সবকটিতে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেল থেকে মনোনীত প্রার্থীরা।
নির্বাচনে সভাপতি ও সম্পাদক পদে পুননির্বাচিত হয়েছেন যথাক্রমে মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও মো. আবদুন নূর।
বৃহস্পতিবার সোয়া ২টার দিকে নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত উপকমিটির আহ্বায়ক মো: মনিরুজ্জামান এ ফলাফল ঘোষণা করেন।
এর আগে, দুই দিনব্যাপী এ নির্বাচনের শেষ দিনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের মধ্যে সারাদিনই হাতাহাতি, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, হট্টগোল আর ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া ১২টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ভোট কেন্দ্রের মুখে দু’পক্ষের আইনজীবীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে আদালত অঙ্গন। এ সময় পাল্টাপাল্টি স্লোগান ও ধস্তাধস্তিতে আইনজীবী ও বিচার প্রার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী মাহবুব উদ্দিন খোকন ও সম্পাদক প্রার্থী রুহুল কুদ্দুস কাজলের নেতৃত্বে কয়েক শ’ আইনজীবী মিছিল করে ভোট কেন্দ্রের সামনে এলে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা পাল্টা স্লোগান দিয়ে তাদের ধাওয়া দেন। এতে দু’পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এ সময় আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা স্লোগান দিতে থাকেন। একদল ‘ভোট চোর, ভোট চোর’ বলে স্লোগান দেয়। অন্য পক্ষ আবার তার উত্তর দিতে থাকে। একপর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। এ নিয়ে তুমুল উত্তেজনা শুরু হয়। পুলিশও মাঝে দাঁড়িয়ে সতর্কাবস্থায় থাকে। তবে এ সময় ভোটগ্রহণ চলছিল। প্রায় বেলা দেড়টা পর্যন্ত দু’পক্ষের আইনজীবীরা ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার মধ্যে হট্টগোল ও পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিতে থাকে। এরপর বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা ভোট কেন্দ্রের সামনে থেকে চলে যান। পরে আবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে নীল প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী মাহবুব উদ্দিন খোকনের নেতৃত্বে শতাধিক আইনজীবী ভোট কেন্দ্রের সামনে আসতে চাইলে দু’পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি, স্লোগান-পাল্টা স্লোগান হয়।
এরও আগে বুধবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দুই দিনব্যাপী নির্বাচনের প্রথম দিনে সারা দিনব্যাপী বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের মধ্যে হাতাহাতি, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, সংঘর্ষ, ভোট কেন্দ্র ও আইনজীবীদের কক্ষ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পুলিশের লাঠিচার্জ ও মারধরের শিকার হয়েছেন বেশ কয়েকজন সাংবাদিক ও আইনজীবী। বুধবার দুপুর ও বিকেলে কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনায় আদালত অঙ্গনে পরিবেশ ছিল থমথমে। তবে সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের মধ্যে বিএনপি সমর্থক আইনজীবী ও সাংবাদিকদের পিটিয়ে বের করে দিয়ে এ দিন ভোটগ্রহণ বেলা পৌনে ১টার দিকে আওয়ামী লীগ পন্থী আইনজীবীদের গঠন করা নির্বাচন কমিশনের অধীনে ভোটগ্রহণ হয়।
প্রথম দিনে দুই হাজার ২১৭ জন ভোটার ভোট দিয়েছে বলে সরকার সমর্থক আইনজীবীরা জানান। অন্য দিকে অবৈধভাবে ভোটগ্রহণ বন্ধে করে নতুন করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দাবিতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট বারে বিক্ষোভ করেন বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা। বুধবার বেলা ৩টায় বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা এক সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অবিলম্বে বন্ধ করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করে নতুন করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
উল্লেখ্য, সমিতির নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়ক সাবেক বিচারপতি মো: মনসুরুল হক চৌধুরীর পদত্যাগের ঘোষণার প্রেক্ষাপটে আইনজীবীদের শীর্ষ এই সংগঠনের নির্বাচন নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। বিএনপি সমর্থকরা অভিযোগ করেন সরকার সমর্থক সভাপতি ও সম্পাদক প্রার্থীর চাপের কারণে তারা পদত্যাগ করেন। ভোটগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তার মুখে মঙ্গলবার বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবী মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বারে বিক্ষোভ করেন। নির্বাচন উপ কমিটির আহ্বায়ক বা প্রধান কে হবেন তা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তাপ ছড়ায়। আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা নির্বাচন পরিচালনা উপ কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে মো: মনিরুজ্জামানকে মনোনীত করেন। অন্য দিকে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা এ এস এম মোকতার কবির খানকে আহ্বায়ক মনোনীত করেন। একপর্যায়ে পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল, হইচই ও হট্টগোল শুরু হয়। মঙ্গলবার রাত ১২টা পর্যন্ত দু’পক্ষের আইনজীবীদের হইচই, হট্টগোল ও হাতাহাতি ঘটনা ঘটে। সেই সাথে দু’পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে এবং আইনজীবী সমিতি ভবনের বিভিন্ন জায়গায় ব্যালট পেপার পড়ে থাকতে দেখা যায়।