বাংলাদেশের কোনো সংস্থা অথবা সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিদের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের স্বাক্ষর করা এই চিঠিটি রাষ্ট্রদূতদের কাছে পাঠানো হয়।
ওই চিঠিতে মূলত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের একটি তালিকা ও সামনের বছরে রাষ্ট্রদূতদের কাজের অগ্রাধিকার দেয়ার জন্য কিছু বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের একটি অভিজাত আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর একতরফা নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয়টি উল্লেখ করে ওই চিঠিতে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয় যে ভবিষ্যতে `সরকারি সংস্থা ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আবারো নিষেধাজ্ঞা` আসতে পারে।
সেজন্য বিদেশে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে ওই চিঠিতে।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং এই বাহিনীর বেশকিছু কর্মকর্তার ওপর ২০২১ সালে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। আবারো একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে এমন আশঙ্কা থেকেই এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকরা বলছেন ঢালাওভাবে সব দেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতদের উদ্দেশ্যে এরকম নির্দেশনা দেয়ার ঘটনা এর আগে কখনো ঘটেনি।
কী করতে পারেন রাষ্ট্রদূতরা?
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, `আমেরিকাতে বিভিন্ন সময়ে ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমাদের রিভিউতে (পর্যালোচনায়) পড়বার একটা আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, তখন মিশনকে সতর্ক করা হয়েছে যেন আমরা সেসব বিষয়ে বিশেষ খোঁজখবর রাখি।`
`তবে সব মিশনকে একসাথে ঢালাওভাবে এরকম নির্দেশনা এর আগে কখনো দেয়া হয়েছে তা আমার জানামতে নেই।`
কবিরের মতে, এই ধরনের নির্দেশনা জারি করে খুব বেশি সুবিধা পাওয়া সম্ভব নয়।
বিদেশে বাংলাদেশের মিশন ও রাষ্ট্রদূতের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব থাকে ওই দেশের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করা ও এই ধরনের কাজে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হলে বা কোনো নেতিবাচক ইঙ্গিত পেলে তা সরকারকে জানানো। অর্থাৎ পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রদূতদের প্রতি যে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে, তা তাদের দায়িত্বেরই অংশ।
তাহলে নতুন এই নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রদূতদের নতুন করে কী করার আছে?
কূটনীতিক হুমায়ুন কবিরের মতে, দেশের ভেতর থেকে উপযুক্ত সমর্থন দিতে পারলেই কেবল বিদেশে থাকা রাষ্ট্রদূতরা জাতীয় স্বার্থে দেশের ভাবমূর্তি উন্নয়নের প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে চালিয়ে যেতে পারবেন।
তিনি আরো বলেন, `বর্তমান পৃথিবীতে তথ্য-প্রযুক্তির কারণে সংবাদ, খবরাখবর অবাধভাবে যাতায়াত করে। সেখানে দেশের অভ্যন্তরীণ ও দেশের বাইরের কার্যক্ষেত্রের একটা সম্পর্ক থাকে। সেই হিসেবে আমাদের দেশের ভেতরে এমন কিছু করা উচিত না যেটা বিদেশের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রদূতদের প্রয়াসকে বাধাগ্রস্ত করে।`
`রাষ্ট্রদূতরা বা দূতাবাসগুলো তখনই সফল হবে, যখন আমরা উপযুক্তভাবে তাদের অভ্যন্তরীনভাবে সমর্থন দিতে পারবো। অভ্যন্তরীণ সমর্থন না থাকলে শুধু তাদের ওপর দায়িত্ব দিয়ে আমার মনে হয় আমাদের প্রত্যাশিত ফলাফল পাওয়া সহজ হবে না।`
উদাহরণ হিসেবে তিনি রোহিঙ্গা সঙ্কটে বাংলাদেশের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন।
কবির বলেন, `অভ্যন্তরীণ পদক্ষেপ ও নৈতিক অবস্থান সঠিক থাকলে আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোর সমর্থন পেতে তদবির করার প্রয়োজন হয় না। রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলায় বাংলাদেশ যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা সারা বিশ্বেই সমাদৃত হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক প্রায় সব পক্ষই বাংলাদেশের সমর্থনে অবস্থান নিয়েছে। কাজেই দেশের ভেতরে কী ধরনের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে, তা আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোর কাছে বেশি গুরুত্ব বহন করে।`
সূত্র : বিবিসি